রাজশাহী নগরীতে গ্যাং স্টার গ্রুপের সেই দুই সদস্য গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী সেই আলোচিত গ্যাং স্টার বন্ড গ্রুপের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে চন্দ্রিমা থানাধীন শিরোইল কলোনী এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- ছোট বনগ্রাম উত্তরপাড়া এলাকার শামিম হোসেনের ছেলে সাইদ হোসেন শিশির (১৭) ও আসাম কলোনী কাঁঠালতলা এলাকার মোনা ((১৯)।
এদিকে তাদের আটকের খবরে স্বাস্তি নেমে এসেছে স্থানীয়দের মাঝে। কথা বলে জানা গেছে, গ্যাং স্টার বন্ড গ্রুপের বিরুদ্ধে একটি চাপাক্ষোভ বিরাজ করছিলো দীর্ঘদিন ধরে।
কেউ কেউ বলেন, এ সকল কিশোর গ্যাং সদস্যরা সমাজের জন্য ব্যাপক হুমকি। শুধু সমাজ না দেশের জন্যও হুমকি সরুপ বলে মন্তব্য করেন তারা। কারণ অর্থের জন্য যেকোনো অপারেশন করতে প্রস্তুত তারা। এদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যান্ত জরুরী।
স্থানীয়রা আরও বলছেন, গ্যাং স্টার বন্ড গ্রুপের বাকি সদস্যরা গ্রেপ্তার হলে এলাকায় শান্তি ফিরে আসবে। এছাড়া অনেকটা অপরাধ মুক্ত হবে। তাদের কাছে যে সকল আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র আছে সেগুলো উদ্ধারের দাবি জানান তারা।
এর আগে গত ২ মে রাত ৯টার দিকে চন্দ্রিমা থানার ছোট বনগ্রাম স্কুল মোড়ে দেশীয় অস্ত্র জিআই পাইপ, হাসুয়া ও সাইকেলের প্যাডেলের তৈরি রাওডি দিয়ে সিয়ামের (১৮) পায়ে ও ডান গালে আঘাত করে গ্যাং স্টার বন্ড গ্রুপের সদস্যরা। এছাড়া সিয়ামের বন্ধু আকাশ (১৭), সোহান (১৯) ও মাহিমকে (১৮) মাথায় ও পিঠের ওপ কোপা দেয় তারা। এঘটনায় রাজশাহীসহ অনলাইন ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এর পর মাঠে নামে পুলিশ। অভিযান চালিয়ে শিরোইল কলোনী এলাকা থেকে শিশির ও মোনাকে গ্রেপ্তার করে তারা।
রাজশাহী শহর জুড়ে প্রায় প্রতিটি পাড়া মহল্লায় বিভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং এর ভয়ানক গ্রুপ। তাদের মধ্যে অন্যতম ১০ স্টার বন্ড (10 star bond) গ্রুপের ব্যাপক নাম ডাক রয়েছে। গত ২ মে এই গ্রুপের হামলায় ৪ জন যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় সিয়ামের মা জেসমিন নাহার মিরা বাদি হয়ে গ্যাং স্টার বন্ড গ্রুপের সদস্য প্রেম, মোনা, শিশির, বাবু ও মারুফ মন্ডলের বিরুদ্ধে চন্দ্রিমা থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা এবং পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, সিয়ামের সাথে গ্যাং স্টারের প্রধান প্রেম নামের এই কিশোরের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে তর্কবিতর্ক হয়। এর জের ধরে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ধারালো অস্ত্র দ্বারা সিয়াম আকাশ, সোহান ও মাহিমকে ইচ্ছামত কোপায়।। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে তাদের উপর ও চড়াও হয় গ্যাং স্টার গ্রুপের সদস্যরা। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় মাহিম নামের এক যুবক রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, এদের বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ করছেন ওয়ার্ড পর্যায় নেতারা। ওই সকল নেতাদের ছত্রছায়ায় ছোটখাটো থেকে শুরু করে জঘন্যতম অপরাধের সাথে লিপ্ত এ গ্যাং স্টারের সদস্যরা। এসকল গ্রুপের সদস্যরা বেশিরভাগ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের বখে যাওয়া সন্তান। শহর জুড়ে কিশোর গ্যাং এর হামলার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
ভুক্তভোগী সিয়াম জানায়, গ্যাং স্টার বন্ড গ্রুপের সদস্যরা এলাকায় ডাব চুরি থেকে শুরু করে পোলের তার চুরি, চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ছিনতাই এছাড়া স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের উত্ত্যক্তসহ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এদের হামলার শিকার হয়ে অনেকে ভয়ে মুখ বন্ধ করে আছেন। প্রকাশ্যে সিগারেট ও মাদক সেবন করে তারা।
ছোট-বড় দেখার সময় নাই তাদের কাছে। বিভিন্ন সময় দেখা যায় অস্ত্ হাতে নিয়ে ছবি তুলে এবং ফেসবুকে আপলোড দেয়।
এছাড়া আরও একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গ্যাং স্টার বন্ড গ্রুপের সদস্যরা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় প্রত্যেকের হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে একটি ঢোলের ড্রামকে মানুষের মত কোপাতে থাকে। এ ছবিও তারা ফেসবুকে আপলোড দেয়।
ভুক্তভোগী সিয়াম জানায়, অনেক সময় তারা অস্ত্র হাতে নিয়ে ছবি ফেসবুকে আপলোড করে আতংক সৃষ্টি করার লক্ষে। চাকু হাতে নিয়ে ছবিতে দেখা যাচ্ছে তার নাম শিশির (১৮)। এছাড়াও দল ভারি করার জন্য তারা এলাকার বাইরে থেকে বন্ধু ভারা করে নিয়ে এসে ত্রাস সৃষ্টি করে। অনেকে তাদের বেপরোয়া চলাফেরা দেখে ভয়ে কিছু বলতে সাহস পায়না।
এ ব্যাপারে চন্দ্রিমা থানার (ওসি) রফিকুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, এজাহার নামীয় দুইজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হযেছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.