নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী নগরীতে আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে চুরির ঘটনা। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে। এতে চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন নগরীর সাধারণ মানুষ।
নগরীর কিছু কিছু এলাকায় চোরদের এতোটাই উপদ্রব যে, শুধু রাতে নয়, দিনে প্রকাশ্যে লোকজনের বাসায় চুরি করছে। নগরীর এমন কোনো এলাকা নেই যে এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছে না। কখনো বাসায় চুরি হচ্ছে, আবার কখনো বাসার বাইরে বিদ্যুতের তার চুরি হচ্ছে।
এসব চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হচ্ছে, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগিরা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্টভাবেই চোর শনাক্ত হলেও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ এসব চোরদের আটকের ব্যাপারে উদাসিন।
স্থানীয়রা বলছেন, চোরদের এক শ্রেণির প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সেল্টার দিচ্ছে। এসব প্রভাবশালীরা চোরদের চুরি করতে সহযোগিতা করছে। আবার কখনো চুরি করতে গিয়ে চোর ধরা পড়লে এসব ব্যক্তিরাই সুপারিশ করে ছাড়িয়ে নিচ্ছে। যার কারণে কমছে না চুরির ঘটনা। সাধারণ মানুষের ভাষ্যমতে, চোরের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে নগরীর মানুষ। অথচ মহানগর পুলিশের এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৬ মাসে রাজশাহী নগরীতে দুইশতাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। একেকটি বাড়িতে দুই থেকে তিনবার করেও চুরির ঘটনা রয়েছে। এমন কি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক ব্যক্তির বাসাতেও চুরির ঘটনা ঘটছে।
এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগ হয়েছে, কিন্তু কোনো চোর আটক হয়নি। উদ্ধার হয়নি চুরি হওয়া মালপত্র। বর্তমানে নগরীতে চুরির ধরণ বদলেছে। চোরের সেল্টারেও রয়েছে ভিন্নতা। নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অপরাধ প্রবনতা কমানোর জন্য আরএমপি থেকে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা।
নগরীতে বসবাসকারীরা নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করছেন। নগরীর সরকারী অফিস আদালত ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে নগরীর প্রায় ৯০ শতাংশ বাড়িতেই সিসি ক্যামেরা রয়েছে। তারপরও চুরি কমছে না। সিসি ক্যামেরাও আর নিরাপত্তা দিতে পারছে না। এখন বাসা বাড়িতে লাগানো সিসি ক্যামেরা নিরাপদ নয়। কারণ একটি বাড়িতে চুরির আগে ভেঙ্গে ফেলা হয় সিসি ক্যামেরা। তারপর চুরি করা হয়। যার কারণে চোর শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। আর চোর শনাক্ত হলেও তৎবিরে ছাড়া পেয়ে যায়।
জানা গেছে, গত মে মাস থেকে চলতি মাস পর্যন্ত নগরীর ২৪ নং ওয়ার্ডে রামচন্দ্রপুর এলাকায় ১৫টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। নগরীর উপশহর এলাকায় এক পুলিশ সদস্য ও বিএনপির এক শীর্ষ নেতার বাসা চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত ৬ মাসে অভিজাত উপশহর এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটেছে ১৬টি। আবাসিক এলাকা ভদ্রায় চুরির ঘটনা রয়েছে ১২টি, নগরীর বিনোদপুর এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটেছে ৮টি।
এছাড়াও নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে মাসে গড়ে ৫ থেকে ৭টি করে চুরির ঘটনা রয়েছে। কখনো বাসায়, আবার কখনো বিদ্যুতের তার চোররা চুরি করছে। আর এসব চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন নগরবাসী।
গত ৬ মাসে রাজশাহী নগরীতে চুরির ঘটনায় ১২ থানায় অভিযোগ হয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক। নাম মাত্র চোর আটক হলেও চোর সিন্ডিকেটের মুল হোতারা রয়েছে অধরা।
জানা গেছে, গত ২০ অক্টোবর নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার রামচন্দ্রপুর কালুমিস্ত্রির মোড় এলাকায় মীর শাহরিয়ার সুলতানের বাড়িতে বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটে। এই বাসায় চুরির ধরণটা ছিল ভিন্ন। প্রথমে এক চোর বাসার সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে। এরপর তার গ্যারেজে থাকা প্রায় আড়াই লাখ টাকার মালপত্র চুরি করা হয়। চোর শনাক্ত হলেও এ চুরির ঘটনা নিয়ে ব্যাপক নাটকের সৃষ্টি হয়। এক দিকে পুলিশ ও অন্যদিকে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। প্রমান থাকার পরও চুরি হওয়া মালপত্র উদ্ধার তো দুরের কথা, চোরকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। বিপরিতে এই চোর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে মীর শাহরিয়ার সুলতানের বাসায় মব সৃষ্টির চেষ্টা করে। আর এতে সেল্টার দেয় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
এই চুরির ঘটনায় মীর শাহরিয়ার সুলতানের ভাই মীর বুদীন সুলতার বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগ করেছেন। কিন্তু অভিযোগ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে চুরির এ ঘটনাটি। মূলত ওই এলাকার শীর্ষ চোর আশিক ল্যাপা মীর শাহরিয়ার সুলতানের গ্যারেজের মালপত্র চুরি করে যা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে শনাক্ত হয়। মীর শাহরিয়ার সুলতান চোর শনাক্তের পর তাকে ধরে চুরির বিষয়টি জানায়। কিন্তু উল্টো চোর আশিক ল্যাপা মীর শাহরিয়ার সুলতানের উপর চড়া হয়। বিষয়টি গড়ায় ওই এলাকারই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি পর্যন্ত। তারা মীর শাহরিয়ার সুলতানকে জানান, ৭০% মালামাল তাদের কাছে আছে, তিনি ওইগুলো ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু দুদিন না গড়াতেই এই চোরকে দিয়ে মারধরের নাটক সাজিয়ে ঘটনা উল্টে দেয়া হয়।
এখন ল্যাপা চোরই শাহরিয়ার সুলতানের পরিবারের লোকজনদের নানা ভাবে হয়রানি করছে, ভয়লীতি দেখাচ্ছে। এছাড়াও চোর ল্যাপা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের নিয়ে মীর শাহরিয়ার সুলতানের বাড়িতে মব সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এই ল্যাপা চোর গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতেও চুরি করেছে।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে আরমান নামে আরো একজনের বাড়িতে চুরি হয়েছে। প্রতিরাতেই কোনো না কোনো এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটছেই। প্রতিরাতে এসব চুরির ঘটনায় পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নগরবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর উপশহরসহ আবাসিক এলাকাগুলোতে বাড়ির মেইন লাইনের তার চুরির ঘটনা ঘটছে বেশি। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে চোররা তার চুরি করছে। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে মানুষ। চোররা তার কেটে চুরি করার পর কিছু অংশ থাকছে ঝুলন্ত। এতে থাকছে বিদ্যুৎ, একটু অসাবধান হলেই মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটার সম্ভবনা দেখা দিচ্ছে।
ভুক্তভোগিদের বক্তব্য, রাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। সকাল উঠে লোকজন জানতে পারেন, বিদ্যুতের মেইন লাইনের তার চুরি হয়ে গেছে।
ভুক্তভোগিরা বলছেন, চোর প্রতিরোধে তারা যাবেন কোথায়। থানায় অভিযোগ দেয়া হচ্ছে, অথচ চোর আটক হচ্ছে না। এমন কি চুরিও বন্ধ হচ্ছে না। যেকোনো সময়ের চেয়ে নগরীতে চুরির পরিমান বেড়েছে বলে দাবি করেছেন নগরবাসী। আর এই চুরির ঘটনার জন্য দায়ি করা হচ্ছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
বিষয়টি নিয়ে নগর পুলিশের মুখপাত্র গাজিউর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, নগরীতে অপরাধ প্রবনতা কমানোর জন্য টহল টিম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগের চেয়ে চুরি অনেকটাই কমেছে। নগরীতে গত ৬ মাসে কতটি চুরি হয়েছে আর কতজন চোর আটক হয়েছে, এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, এমন কোনো ডাটা আপাতত নেই। তবে চুরি হওয়ার পর থানায় অভিযোগ দিয়েও যারা প্রতিকার পাচ্ছেন না বা থানা পুলিশ চোর ধরছে ওইসব ভুক্তভোগিদের পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ দেয়ার পরামশ্য দেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #

















