রাজশাহী নগরজুড়ে তীব্র যানজটে জনদুর্ভোগ চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক: জনপ্রতিনিধিত্ব করতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নানারকম প্রচারণা চালিয়েছিল  বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। জয়ী হলে নানামুখী উন্নয়ন করবেন বলেও  প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । নির্বাচনী ইশতেহারেও ছিল সেসবের প্রতিচ্ছবি। সারাদেশে ২৫৯ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা কমানোর তালিকায় ‘বিশ্বসেরা শহর’ হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করা উত্তরের রাজশাহী শহরে জনপ্রতিনিধি ফজলে হোসেন বাদশা। রেকর্ডসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় আছে ‘শিক্ষানগরী’ খ্যাতি পাওয়ার গৌরব।

দেশের অন্যতম পরিচ্ছন্ন এই শহরের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হেনার সুযোগ্য সন্তান এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। আর সদর আসনে এমপি হিসেবে নৌকা প্রতিকে আবারও নির্বাচিত হলেন বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। সংসদ সদস্য বাদশা গত দুই মেয়াদে এমপি থাকা কালে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী দৃষ্টিগোচর হলেও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়  আরও একটি সমস্যা সমাধানের দাবি নগরবাসীর। “নগরজুড়ে যানজট”। প্রায়শই তীব্র যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সর্বসাধারণকে।

অতিরিক্ত অটোরিকশা, অবৈধ ফুটপাত দখল, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অসচেতন হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি নগরীর তীব্র যানজটে জনসাধারণের দুর্ভোগ যেন কোনোভাবেই কমছেনা। ফলে রাজশাহী নগরী  এখন ‘মিনি রাজধানীতে’ পরিণত হয়েছে।

নগরজুড়ে অতিরিক্ত যানজটের কারণে দফায় দফায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দেশের পরিচ্ছন্ন এই শহরবাসীকে।

সরেজমিনে ঘুরে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টের সমস্যা প্রত্যক্ষ করে কারনসহ নিম্নে উল্লিখিত হলো:-

* জিরো পয়েন্ট- কোর্ট সড়ক :
অটোরিকশায় দশ মিনিটের রাস্তা। যানজটে আধাঘন্টার ওপরে সময় লেগে যায়। কোর্টে যেতে কতক আইনজীবী সমস্যায় পড়েন। মনিচত্বরে সবজিবাজার,অবৈধ ফুটপাতে অর্ধেক সড়ক তাদের দখলে। রাজশাহী কলেজের প্রধান গেটের সামনে স্টেশনারী পণ্য বিক্রি, সিম অপারেটরগুলো সিম বিক্রতেই সড়ক বন্ধ!

কলেজ গেটের সামনে ট্রাফিক পুলিশকেও দায়িত্ব পালনে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফুটপাত দখলমুক্ত হলে ভোগান্তি কমবে বলে মনে করছেন পথচারীরা।

* জিরো পয়েন্ট- বিনোদপুর :
সড়কটি নিরিবিলি এবং মনোরম দৃশ্য হলেও তালাইমারী মোড়ে যানজট নিত্যদিনের দৃশ্য। সড়কের পার্শে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ি পার্কিং এবং যত্রতত্র সেগুলো বোঝাই করার ফলে এমনটা সমস্যা হচ্ছে বলে জনসাধারণের অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে সময়ক্ষেপণ করতে হচ্ছে বলেও সমস্যায় পড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কতক শিক্ষার্থী।

*রেলগেট-নওদাপাড়া:
নগরীর অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়ক এটি।  চাঁপাইনবাবগঞ্জ,নওগাঁ,জয়পুরহাট থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোর মিলনস্থল রেলগেট। যদিও  নওদাপাড়ায় নতুন বাস টার্মিনাল রয়েছে।

এখানে থেকে জিরো পয়েন্ট অটোরিকশায় মিনিট পাঁচেক দূরত্ব। আর উত্তর দিকের সড়কে মিনিট সাতেক গেলেই আমচত্বর। তবে তীব্র যানজটে গাড়ির লম্বা সারিতে  দ্বিগুণ সময় লাগছে। নিউ মার্কেট এলাকায়  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভারী গাড়িতে পণ্য উঠানামা করার জন্য এবং শিরোইল পুলিশ ফাঁড়ির সামনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এর কারনে যানজট রোধ করা অসম্ভব হচ্ছে। নওদাপাড়া যেতে রেলগেটে সিএনজি, অটো স্টান্ড এর কারনে যানজট চরমে।

অর্ধেক সড়ক সিএনজি আর বাসের দখলে থাকায় ভোগান্তিতে কেউ কেউ সড়কের দুপাশে গাড়িচালকের অসচেতনতাকে দুষছেন।

*রেলগেট – বর্নালী:
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কে

সার্বক্ষণিক গাড়ির লম্বা সারি। বর্নালী মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ কর্তব্যরত থাকলেও চৌরাস্তার সেই সড়কটিতে সর্বদা যানজট থেকে নিস্তার চান যাত্রীরা।

*রেলগেট – তালাইমারী:
ব্যস্ততম সড়ক রাজশাহী-ঢাকা  মহাসড়কের রেলস্টেশন এই সড়কে। নতুন বাস টার্মিনাল করা হলেও রেলস্টেশনে অতিরিক্ত বাস পার্কিং করায় পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রেলস্টেশনের সামনে প্রতিনিয়ত যানজট।

রাজশাহী থেকে ঢাকায় নিয়মিত যাতায়াত করেন মোঃ আরিফুল ইসলাম। রেলস্টেশনে এসে প্রায় সময়ই  যানজটে পড়তে হয়।শান্তির শহরে এসেও অস্বস্তিতে পড়তে হয় তাকে। কথাগুলো ক্ষোভের স্বরে বিটিসি নিউজকে বলছিলেন তিনি।

ভদ্রায় তো ঝুকি নিয়েই রাস্তা পারাপার হন জনসাধারণ। ট্রাফিক পুলিশের চেষ্টা থাকলেও বাসের বেপরোয়া গতিতে ঘটে যায় নানারকম দুর্ঘটনা। রেহাই পাননা পুলিশ কর্মকর্তারাও।

অটোরিকশা চালকরা বাস-ট্রাক চালকদের উপর দিলেও তারা উল্টো অতিরিক্ত অটোরিকশার কারনে যানজট আর দুর্ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেন।  উপরভদ্রা এলাকায় ফিলিং স্টেশন এবং বাস-ট্রাক সার্ভিসিং কেন্দ্রগুলোর জন্য প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে। ঝুকি নিয়ে পথচলতে হয় অগ্রনী স্কুল এন্ড কলেজ,মদীনাতুল উলুম কামিল মাদরাসা,শিমুল মেমোরিয়াল স্কুল,আদর্শ স্কুলের শিক্ষার্থীদের।

তাছাড়া উপরভদ্রা এলাকায় অন্যরকম চিত্রও চক্ষুষ্মান হয়েছে। মোটরসার্ভিসিং কেন্দ্রের অতিরিক্ত শব্দে ক্লাস করতে সমস্যা হয় এসব প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ শিক্ষার্থীদেরকে।

দেশের অন্যতম বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেতে নগরীর তালাইমারী চৌরাস্তায় সমস্যায় পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। নিরাপদ সড়কের দাবিতে তীব্র আন্দোলন হলেও তালাইমারী, ভার্সিটি গেটে কানাকড়িও সমাধান হয়নি বলে মনে করছেন রাবির গণিত বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী  সালেহ আহমেদ।  সকাল সন্ধ্যায় তীব্র যানজটে সময়মত ক্লাসে পৌঁছতেও পারেননা তিনি।
সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি। আর টার্নিং পয়েন্টগুলোতে সতর্কতার সাথে গাড়ি  চালানোর অনুরোধ সাধারন যাত্রীদের।

*ঘোষপাড়া – লক্ষিপুর: 
দেশের অন্যতম বৃহত্তম মেডিকেল ও চিকিৎসা কেন্দ্র রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনেও তীব্র যানজট।  মুমূর্ষু রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার পথেও যানজটে পড়তে হয় গ্রামাঞ্চল থেকে ছুটে আসা জনসাধারণকে। হাসপাতালের সামনে মাইক্রো ও এ্যাম্বুলেন্স পার্কিং ও ফুটপাতের দোকানগুলোর জন্য সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।

ফলে লক্ষীপুর মোড়ে দিবারাত্রি গাড়ির যানজট নিত্যদিনের দৃশ্য।চিকিৎসা নিতে এসে সড়কেই আটকে থাকতে হচ্ছে মানুষকে। চিকিৎসা নিতে এসে যানজট ভোগান্তির সমাধান চান তারা।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক এসব মাইক্রোবাস ও এম্বুলেন্স পার্কিং উচ্ছেদ চান। জীবাণুযুক্ত এসব ফুটপাতে ভাতের হোটেলগুলোর অপসারণ দাবি তার।

এসবের কারনে অনেককে হয়রানীতেও পড়তে হচ্ছে। নাটোর থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মোঃ মুনতাজ আলী নামের একজন অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে ঢুকতে ফুটপাতে দোকানীদের ডাকাডাকি! ভাত,তরকারী খেতে বাধ্য করতে তাদের তাদের অতিরিক্ত ডাক। আর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে মাইক্রোবাস,এম্বুলেন্স ভাড়া নিতে তাদের অতিরিক্ত তোষামোদি। এগুলোতে অস্বস্তিতে পড়তে হয় বলে তার অভিযোগ।

এছাড়া, রাজশাহী- চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের কাশিয়াডাঙ্গাতে রয়েছে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে অতিরিক্ত অটোরিকশা আর বাস-ট্রাকের হর্ণের শব্দে পাঠদান ব্যহত হয় বলে জানিয়েছেন সেখারকার শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় মনযোগী হতে পারেন না।

কিন্তু প্রশাসনের তৎপরতা এবং জনপ্রতিনিধিদের জোরালো ভূমিকায় সমস্যার দ্রুত সমাধান চান শিক্ষিতমহল।  প্রয়োজনে মেয়র মহোদয়ের দৃষ্টিপাতে সিটি কর্পোরেশনের বিশেষ উদ্দোগে জনসচেতনতা সৃষ্টি, অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদ হলেও যানজট নিরসন সম্ভব হবে বলে মনে করছেন নগরবাসী।

যানজট নিরসনে ও দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে গতিরোধক (স্পিড ব্রেকার) বসানো যেতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করেন। নতুবা উন্নয়নের  অগ্রযাত্রায় দেশের ক্লিনসিটি ও গ্রিনসিটি খ্যাত রাজশাহী নগরী অনেক পিছিয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা নগরবাসীর।

তাই এটি সমাধানে রাজশাহী সিটি মেয়র,সংসদ সদস্য সহ সকল জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের স্বদিচ্ছা ও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত সমস্যাটি সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসা চাকুরীজীবীরা।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি আমানুল্লাহ আমান, 

ছবিঃ বিটিসি নিউজ এর ফটো সাংবাদিক শামীম আক্তার ডাবলু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.