রাজশাহী তথ্য সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান এবং দৃশ্যমান বাস্তবতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে মাদকের ব্যাবহার দীর্ঘদিন যাবত ধরে চলে আসলেও বর্তমানে মাস কয়েক আগে যেরূপ ভাবে অভিযান শুরু হয়েছিল তা ইতিপূর্বে কখনও দেখা যায়নি অনস্বীকার্য।

অভিযান শুরুর প্রথম দিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভাল পারফরমেন্স দেখলেও বর্তমানে তা অনুপস্থিত।

কারন মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে জিহাদ শেষ না করেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করার কারণে এখন সকলের দৃষ্টি দুর্নীতির দিকে,ফলে কিছুটা হলেও মাদক বিরোধী অভিযান এখন স্তিমিত লক্ষ করা যায়।

জনমনে নানা প্রশ্ন কেউ বলছে আই ওয়াস আবার কেউ বলছে দেখা যাক কোথাকার পানি কথায় যায়। আদৌ কি মাদক ও দুর্নীতি দমন সম্ভব? কিভাবে সম্ভব?ইত্যাদি। এখন দেখা যাক মাদকের ইতিহাস।

প্রায় ৮০ দশকে দিকে ভারত থেকে কফ সিরাপ হিসেবে ফেন্সিডিল আসে এদেশে কিন্তু জনগণ জানতে পারে তৎকালীন এরশাদ সরকার যখন বাংলাদেশে ফেন্সিডিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তখন আমরা আরো জানতে পারি সমাজের একটি অংশ (বিশেষ করে তরুণ শ্রেণী ) ফেন্সিডিল নেশা হিসেবে ব্যাবহার করছে।

আতঙ্কিত হওয়ার কথা সেবনকারীর সিংহভাগ শিক্ষিত যুবক। ততদিনে হেরোইন ঢুকে পড়েছে, সেবনকারীর সংখ্যাও বেড়েছে কিন্তু সেবনকারীর করুন পরিনতি দেখে শিক্ষিত,সচেতন বেকার যুবকদের হেরোইন আসক্তির সংখ্যা নগণ্য।

কিন্তু ভয়াবহ ভাবে বাড়তে থাকে ফেন্সিডিল সেবনকারীর শিক্ষিত বেকার যুবকের সংখ্যা। কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয় সহ এমন কোন ফাঁকা বা প্রাকৃতিক কর্ম সারার মত জায়গায় নেই যেখানে ২/১টি ফেনসিডিলের খালি বোতল পড়ে নাই এরকম দৃশ্য বিরল।

বিংশ শতাব্দীতে এসে কিশোর,তরুণ,যুবক,যুবতী,শিক্ষিত,মূর্খ এক কথায় সর্ব শ্রেণী পেশার লোকজন এই নেশায় জড়িয়ে পড়েন।

সবাই জানে কিন্তু বলে না।এরপর নেশার রাজ্যে আগুনে ঘি ঢালার মতো ঢুকে পরে ইয়াবা নামক ট্যাবলেট। বাংলাদেশে নেশার জগতে ষোলকলা পূর্ণ হয়ে যায় এই ইয়াবা প্রবেশের ফলে।

ফেন্সিডিল,ইয়াবা ও শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মাদক বিরোধী অভিযানের ফলে দৃশ্যমান কম হলেও এর ব্যাপকতা শহরের তুলনায় প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

এখন সেবনকারীরা গ্রামে বেশী আনাগোনা করে। কারন একটি শহরের তুলনায় গ্রাম গঞ্জে পুলিশ কম। একটি গ্রাম এলাকায় থানায় আর কতটা পুলিশ থাকে? তাছাড়া পুলিশ খবর পেলেও সাজগোজ করতে করতেই তাদের বেলা চলে যায়।

ইনফরমেশন ছাড়া তাদের পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব নয়। যায় হোক বর্তমান মেয়াদের আওয়ামী সরকার যখন ক্ষমতায় এসেই প্রথমেই হুংকার ছুড়েন,যে কোন মূল্যে মাদক নির্মূল করা হবে।

তখন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটু নড়েচড়ে বসে এবং দৃশ্যমান কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

এই অভিযানের সফলতার একটি নুন্যতম স্থানে আসার পূর্বেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেন। করে নির্মূলের কথা বলেন।

খোদ প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা করেন জিরো ট্রলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হবে। কাজের কাজ যে একদম কিছু হইনি তা বলা যাবে না।

কিন্তু এই মহীরুহ এর শেকড় অনেক গভীরে চলে গেছে। এই ৪০/৫০ বছরের এই মহীরুহ দুর্নীতি ও মাদক কিভাবে নির্মূল করবেন তার সঠিক ব্যাখ্যা প্রশাসন তথা সরকারের কর্তা ব্যাক্তি করো কাছ থেকে পাওয়া যায় না।

দুর্নীতির চিত্র নিয়ে অন্য কোনদিন লেখা যাবে। বর্তমানে দেখা যাক মাদকের আসল চিত্র কি।

অত্র প্রতিবেদন প্রস্তুতকালে রাজশাহীর সকল থানা এলাকায়, গ্রাম গঞ্জে সরেজমিনে ঘুরে যা দেখা যায় তা লোম হর্ষক। সাধারণ অনেক পাবলিক ধারণায় করতে পারবে না। বাস্তব চিত্র অনেক শহর এলাকায় একরকম আর গ্রাম এলাকায় আরেক রকম। শহর এলাকায় মাদক হোমসেলে পরিণত।

গ্রাম গঞ্জে বিশেষ করে মহানগর এর বাইরে প্রায় প্রকাশ্যেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নাকের ডগায় বিক্রি হচ্ছে ফেন্সিডিল।

একাধিক ফেন্সিডিল বিক্রেতার সাথে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলে জানা যায় পুলিশকে টাকা দিয়েই তারা এটা করছে।

তারপরও যেকোন সময় ধরা পড়ে যায় যেতে পারে সেই ঝুঁকি নিয়েই তারা এটা করে। প্রত্যেকের নামেই এক বা একাধিক মামলা আছে। হবে আগের চেয়ে অনেক কমেছে তাদের ব্যবসার পরিধি। কারন হিসেবে উল্লেখ করেন মূল্যবৃদ্ধি।

তাই অনেক ফেন্সিডিল সেবনকারীরা ইয়াবা ও গাজা সেবন করছে। বেশ কয়েক জন সেবনকারীর সাথে কথা বলে জানা যায় গাজা পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম এলাকায়।

কিন্তু ইয়াবা মোবাইলে অর্ডার করলে নিরাপদে পৌঁছে দেন বিক্রেতারা। আরো জানায় ফেন্সিডিল এবং গাঁজা বহন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এর দৌরাত্ম্য কিছুটা শহর অঞ্চলে কমলেও বাড়ছে ইয়াবা সেবনকারীদের সংখ্যা।

সহজে বহনযোগ্য ও যৌনতার কারণে অনেকেই এই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে বলে অনেক সেবনকারী জানান। বর্তমানে মাদক বিরোধী অভিযানের কারণে এই ইয়াবা কিনতে আর স্পটে যেতে হয়না।

Door to door এখন তা হোম সেলে পরিণত হতে চলেছে।যে যেখানে পেতে চাই তাদের চাহিদা মত স্থানে পৌঁছে যায়।মোবাইল এর মাধ্যমে। এবার আসি মাদক বিরোধী অভিযানের কথায়।

খোদ প্রধানমন্ত্রী সহ অনেকেই আন্তরিক বাংলাদেশ থেকে মাদক ও দুর্নীতি শেকড় সহ মূল উৎপাটনের জন্য। কিন্তু কাদের দ্বারা এই এত দিনের ব্যাধি দ্রুত আরোগ্য সাধন করবেন। কিছু লোককে বন্দুক যুদ্ধে নিহত বা ধরে ধরে মামলার ভারে নুয়ে ফেললেই হবে?লোক দেখানো শুধু নিরীহ দর্শক নামের জনগণকে দেখিয়ে কিছু বাহবা হয়ত পাওয়া যাবে।

এর বেশী কিছু না। মাদক এখন সমাজের দুরারোগ্য ব্যাধির মত। এটাকে উচ্ছেদ শুধু দমন পীরণ দিয়ে হবে না। আশ্চর্য্য বিষয় হল”ব্যাবসায়ী পুনর্বাসন এর কথা বলা হলেও শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটা ব্যাপক অংশ মাদক সেবনকারী “। তাদের পুনর্বাসনের কথা বলা হয় নি। এর জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজন বলে অনেক সচেতন সাধারণ জনগণ মনে করেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.