রাজশাহী এড: ক্লার্ক সমিতির ২নং নতুন(টিনসেড)ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ন ও দুর্নীতির অভিযোগ,অফিসে তালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত আদালত পাড়া। এখানে আইন পেশা সংশ্লিষ্ট প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত দুটি সংস্থা। একটি রাজশাহী আইনজীবী সমিতি ও আরেকটি আইনজীবীদের সহায়তার জন্য রয়েছে এডভোকেট ক্লার্ক সমিতি রাজশাহী।

প্রতি বছর নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ কার্যনির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হন। মূলত সমিতির সদস্যদের পেশাগত মান ও জীবনের মান উন্নত করার লক্ষ্যে এই সব সমিতি,বিশেষ করে এড:ক্লার্ক সমিতি বেশ কযেক দশক আগে গঠিত হলেও শুরু থেকেই এই সমিতির ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যায় নি বলে অনেক সাধারণ সদস্য অভিমত ব্যাক্ত করেন।

কিন্তু গেল ৫/৭ বছর যাবত দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়।যারা নির্বাচিত হন তারা কার্যনির্বাহী কমিটির মাধ্যমে সমিতি পরিচালিত হওয়ায় ও নতুন নেতৃত্ব আসায় আগের চেয়ে অনেক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় এসেছে।

অতি সম্প্রতি অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে রাজ:এড:ক্লার্ক সমিতি র নতুন ভবন (টিনসেড) নির্মিত হয় নিজস্ব অর্থায়নে। যার উৎস ছিল পূর্ববর্তী সময়ে কিছু যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে কিছু অর্থ ডিপোজিট করা ছিল তা ভাঙিয়ে  ব্যায় নির্বাহ করেন বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটি। ঘর নির্মাণ কমিটিতে যাদের সম্পৃক্ততা ছিল তারা হলেন (১) মোঃ মোকছেদ আলী, সভাপতি (২) মোঃ মুস্তাকিম বিল্লাহ,সাধারণ সম্পাদক (৩) মোঃ শাহীন রেজা,ঘর কমিটির আহবায়ক ও অডিটর (৪) মোঃ ইফতেখার হোসেন লেলিন,সহ সাধারণ সম্পাদক (৫) মোঃ আব্দুল মালেক,সহ সভাপতি। এদের প্রত্যক্ষ পৃষঠপোষকতায় ঘর নির্মাণের যাবতীয় খরচ করা হয়।

গত সপ্তাহে জেনারেল মিটিং এ উক্ত কমিটি ঘর নির্মাণের ব্যায় হিসাবে ৮,০২,১৬৮/-(আট লক্ষ দুই হাজার একশত আটষট্টি) টাকা হিসাব দখিল করলে তুমুল হট্টগোল ও বাক বিতন্ডা র মাধ্যমে তাদের হিসাব প্রত্যাখ্যান করে সাধারণ সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভীতিতে নতুন অডিট কমিটি গঠিত হয়।

সর্বসম্মতিক্রমে অভিজ্ঞ পূর্ববতী সফল নেতৃত্ব (১)মোঃ হামিদুল ইসলাম (২) মোঃ সরোয়ার হোসেন রান্টু (৩) মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব, এই তিনজনকে অডিট সম্পাদন করত রিপোর্ট প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

গত ০৮/০১/২০২০ ইং তারিখে তাদের অডিট রিপোর্ট পেশ করেন। যাতে ব্যাপক দুর্নীতি,অণীয়ম সহ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে ঘর নির্মাণ কমিটির বিরুদ্ধে।তুমুল হট্টগোল,বাক বিতন্ডার মাধ্যমে সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সমিতির অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

৫০০ এর অধিক সাধারণ সদস্যের এই সমিতির প্রায় ৫০ জনের সাথে কথা বলে অত্র প্রতিবেদন প্রস্তুতকালে জানা যায় প্রায় বেশীর ভাগ সদস্য মনে করেন ঘর কমিটির উত্থাপিত খরচ যুক্তিহীন ও অসামঞ্জস্য পূর্ণ। তারা ঘর কমিটির নিকট থেকে অতিরিক্ত খরচ দেখিয়ে আত্মসাত কৃত অর্থ রিকভারি করে সমিতির ফান্ডে যোগ করার জোর দাবি জানান।

ঘর নির্মাণ কমিটি কাজটি টেন্ডার দেওয়ার সময় বড় মাপের দুর্নীতির আশ্রয় নেন বলে অডিট কমিটির রিপোর্টে ধরা পড়ে। লিটন ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপ নামের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দৈর্ঘ ৭০ ফিট,প্রস্থ ৩০ফিট সর্বমোট ২১০০ বর্গফুট,মেঝে,সিড়ি,ফলস সিলিং এর পরিবর্তে ইনসুলেটর ও টিনের উপরের সাইড দিয়ে ১ফিট প্রস্থ গ্রিল নির্মাণ সহ সর্বমোট ব্যায় ৭,০৮,০৮০/(সাত লক্ষ আট হাজার আশি)টাকা নির্মাণ ব্যায় চায়।কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে কাজটি তাদের না দিয়ে ৪৫ ফিট দৈর্ঘ ও ২৯ ফিট প্রস্থ ঘরের নির্মাণ খরচ ৮,০২,১৬৮/-টাকা চাইলেও তাদেরকে ই কাজটি দেওয়া হয়। এখানেই দুর্নীতি হয়েছে ৪,৩৯,৭৮৫/-(সাত লক্ষ উনচল্লিশ হাজার সাত শত পঁচাশি)টাকা বলে নতুন অডিট রিপোর্টে ধরা পড়ে।

রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয় চা চক্র বাবদ ব্যয় ধরা হয় ৮,০০০/টাকা, যা রূপপুর বালিশ কান্ডকে হার মানায়।

অডিট প্রসঙ্গে সরোয়ার হোসেন রান্টু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আমরা চুল চেরা বিশ্লেষণ করে তিনজন মানুষ দিনরাত পরিশ্রম করে এই অডিটের অসঙ্গতি তুলে ধরেছি সমিতির কল্যাণে,আমাদের ব্যক্তিগত কোন চাওয়া পাওয়া নাই বা কারো প্রতি বিদ্বেষ বা হিংসার বশবর্তী হয়ে আমরা এই অডিট রিপোর্ট পেশ করিনি।

পূর্ববর্তী সাধারণ সম্পাদক হামিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে সমিতির কল্যাণে ডিপোজিট করেছিলাম।বর্তমানে তা তছরুপ করা হয়েছে।

সিনীয়র সদস্য মিজানুর রহমান বাদল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, একটি ছোট ছেলেকে যদি বলা হয় এই ঘরের নির্মাণ খরচ ৮,০২,১৬৮/- টাকা তবে সেও বলবে এত টাকা খরচ হতে পারে না। রিপোর্টে পরিশেষে যে সর্বমোট দুর্নীতি ধরা হয়েছে ১,১৯,৪১৭/ টাকা তার সাথে টেন্ডার দেওয়ার সময় যে দুর্নীতি হয়েছে তার যোগফল দাড়ায় ১,১৯,৪১৭/-+৪,৩৯,৭৮৫/-=৫,৫৯,২০২/-(পাঁচ লক্ষ ঊনষাট হাজার দুই শত দুই)টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাধারণ সদস্য বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এই আত্মসাত কৃত টাকা যে কোন ভাবেই হোক ঘর কমিটির নিকট হতে আদায় করতে হবে।প্রয়োজনে ফৌজদারি মামলা দায়ের করার পক্ষে মত দেন এবং দুদক এর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এই বিষয়ে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও একাধিক বার ফোন করেও ফোন রিসিভ না হওয়ায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.