নিজস্ব প্রতিবেদক: এক সময়ের নির্মল বায়ুর শহর হিসেবে পরিচিত রাজশাহী এখন মারাত্মক বায়ু দূষণের কবলে। সম্প্রতি এক গবেষণায় শহরটির দুটি জনবহুল এলাকার বাতাসে স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পি.এম ২.৫) বাংলাদেশের নির্ধারিত মানের চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া গেছে।
শনিবার সকালে বরেন্দ্রশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে পরিচালিত এক চেতনতামূল প্রচারণা ও গবেষণায় এই উদ্বেগজনক চিত্র উঠে আসে।
বারিন্দ এনভায়রনমেন্টের সহযোগিতায় এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল শীতের প্রাক্কালে রাজশাহীর বাতাসে বিদ্যমান ভাসমান বস্তুকণা, বিশেষ করে পি.এম ২.৫ এবং পি.এম ১০ এর মাত্রা নির্ণয় ও পর্যবেক্ষণ করা। ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের শুষ্ক মৌসুমের গবেষণার ধারাবাহিকতায় এই কার্যক্রম পুনরায় পরিচালনা করা হয়। প্রকৌশলী মোঃ জাকির হোসেন খানের (পি.এইচ.ডি.) নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল এই পরীক্ষা চালান।
গবেষণার জন্য নগরীর জনবহুল এলাকা হিসেবে রেলগেট ও বন্ধগেট এবং শিল্প এলাকা হিসেবে বিসিক মঠ পুকুরের নিকটবর্তী স্থানকে বেছে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, রেলগেট মোড়ে পি.এম ২.৫ এর মাত্রা ছিল ৮৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার এবং পি.এম ১০ এর মাত্রা ছিল ৯৭ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার। বন্ধগেট এলাকায় এই মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৭৮ এবং ৯১ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার। অন্যদিকে, বিসিক এলাকায় পি.এম ২.৫ এবং পি.এম ১০ এর মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৫৭ এবং ৬৯ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার।
বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টার জন্য বাতাসে পি.এম ২.৫ এর সহনীয় মাত্রা ৬৫ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার এবং পি.এম ১০ এর জন্য ১৫০ মাইক্রোগ্রাম/ঘনমিটার নির্ধারিত। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, মহানগরীর রেলগেট এবং বন্ধগেট উভয় এলাকাতেই পি.এম ২.৫ এর পরিমাণ নির্ধারিত জাতীয় মানের চেয়ে অনেক বেশি, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
গবেষণায় বিগত বছরগুলোর তথ্য তুলে ধরে বলা হয়। নগরীতে ২০২২ সালে সর্বোচ্চ গড় পি.এম ২.৫ পাওয়া গিয়েছিল ৭৬, ২০২৩ সালে ৯৭ এবং ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২৫ মাইক্রোগ্রামে। বর্তমান পর্যবেক্ষণেও এর বিপজ্জনক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পি.এম ২.৫ নামক এই অতিক্ষুদ্র কণা এতটাই সূক্ষম যে, তা সরাসরি ফুসফুসের গভীরে এমনকি রক্তপ্রবাহেও মিশে যেতে পারে। এর ফলে ফুসফুস এবং হৃৎপিÐের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। অন্যদিকে পি.এম ১০ কণার কারণে চোখ, নাক ও গলায় অস্বস্তিবোধ হয়।
গবেষক দলটি রাজশাহীর বায়ু দূষণের মূল কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত নগরায়ন, নির্বিচারে গাছ কাটা। পুকুর ভরাট করে অবকাঠামো নির্মাণ এবং নির্মাণকাজের সময় বাংলাদেশের বায়ু দূষণ বিধি ২০২২ অনুসরণ না করাকে দায়ী করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এক যৌথ গবেষণায়ও ঢাকা ও রাজশাহীর ৬০-৭০ শতাংশ বায়ু দূষণের জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ন, পরিবেশগত নিয়ম না মেনে নির্মাণ কাজ, রাস্তার ধূলো এবং পুরোনো যানবাহনকে দায়ী করা হয়েছিল।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শহরজুড়ে পরিকল্পিতভাবে পর্যাপ্ত গাছ লাগানো। বিশেষ করে, আমের শহর রাজশাহীতে আম-জাম, নিম এবং সজনে গাছের মতো উপকারী বৃক্ষরোপণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গবেষকদের মতে, সজনে গাছ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণে অত্যন্ত কার্যকরী।
এছাড়াও, অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বায়ু দূষণ বিধি ২০২২ কঠোরভাবে মেনে চলা, নগরীর পুকুর ভরাট বন্ধ করা এবং অবৈধভাবে দখল হওয়া পুকুরগুলো উদ্ধার করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একই সাথে একটি গাছ কাটার পরিবর্তে অন্তত তিনটি নতুন গাছ লাগানোর নিয়ম বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

















