রাজশাহী অঞ্চলে ভারী বর্ষণের কবলে বোরো ধান, হতাশায় কৃষক


নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী অঞ্চলের বোরো আবাদ ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এ অঞ্চলের প্রায় ৮৫ ভাগ বোরোর ক্ষেত। এর মধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে পানির নিচে তলিয়ে গেছে ১৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল। এতে হতাশায় পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক, ভেঙ্গে পড়েছে কৃষানীসহ পরিবারের সদস্যরা। গত কয়েকদিনের কালবৈশাখীর তান্ডব ও ভারী বর্ষণসহ ঝড়ো হাওয়াই এ অঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর পাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে এবং মাটিতে শুয়ে পড়েছে।

এছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলে নিম্ন অঞ্চলে অনেক স্থানে উজান থেকে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর কৃষকের পাকা ধান। সেই সাথে যোগ হয়েছে শ্রমিক সংকট। আধা-আধী ধান দিয়েই মিলছেনা কৃষিশ্রমিক। কাঙ্খিত কষ্টের ধান ঘরে তুলতে না পারাই বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষকের মধ্যে চলছে চাপা কান্না।

কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর আঞ্চলিক অফিসের তথ্য মতে,রাজশাহী,নাটোর,নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা নিয়ে রাজশাহী অঞ্চল। চলতি মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে বোরো চাষাবাদ হয়েছে তিন লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে।

এর মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল থেকে এ অঞ্চলে উপর দিয়ে কালবৈশাখী তান্ডব,ভারী বর্ষন ও শিলাতে প্রায় ৭৫ ভাগ জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে ১৭ হাজার হেক্টর পাকা ধান। এর মধ্যে রাজশাহীতে ১১ হাজার ১৬৩ হেক্টর, নওগাঁ ১২০ হেক্টর, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭২১ হেক্টর ও নাটোর জেলায় পাঁচ হাজার ৩১২ হেক্টর।

শুধু ধান নয়,ক্ষতিগস্থ হয়েছে আম বাগানেরও। রাজশাহী জেলায় ১৫২ হেক্টর,নওগাঁ ৯৯ হেক্টর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৯১ ও নাটোর জেলায় ৮৭ হেক্টর আমের ক্ষতি হয়েছে বলে বলে কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর আঞ্চলিক অফিস জানিয়েছে। তবে,বোরো ধানের মোট আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কত হবে সে তথ্য দিতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানান তারা।

তলিয়ে যাওয়া অঞ্চল গুলো হলো বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজশাহীর তানোর, মোহনপুর এবং পবা উপজেলার নি¤œ অঞ্চলের বোরো ধান, নাটোরের সিংড়া উপজেলায়সহ চলন বিলের মধ্যে পাঁচ হাজার হেক্টর,নওগাঁ মান্দা উপজেলায় বিলে মধ্যে ১২০ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পাগলা নদসহ বিভিন্ন নিম্ন অঞ্চলে ৭২১ হেক্টর ফসলি জমি।

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে তার পাঁচ বিঘা বোরো ধান পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া ধানগুলো দেখে দুই চোখে জল চলে আসছে। ধানগুলোর শীষ কাটার জন্য নৌকায় নিয়ে কেটে আনতে শ্রমিকদেও অতিরিক্ত খরচ দিতে চাইলেও শ্রমিক মিলছেনা। এমন অবস্থায় তার বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম ভুগান্তিতে পড়েছেন।

রাজশাহীর তানোর উপজেলার ধানতৈড় গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন,গত কয়েকদিনে উজন থেকে আসা পানিতে শিব নদের পাড়ে থাকার তার পাঁচ বিঘা বোরো ধান পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া ধানগুলো দেখে দুই চোখে জল চলে আসছে। ধানগুলো নৌকায় নিয়ে কেটে আনতে আধা-আধীভাগ দিতে চাইলেও শ্রমিক মিলছেনা।

একই উপজেলার পাঁচন্দ্রর গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান জানান,দেওলা-ডাঙ্গাপাড়া মৌজায় তিনি চার বিঘা জমিতে অনেক কষ্ট করে ধার-দেনা নিয়ে বোরো আবাদ করেছিলেন। আর এক দুই দিন পড়েই তার ধান ঘরে উঠার কথা ছিল। কিন্ত হঠাৎ করে ৩০ এপ্রিল সন্ধায় শিলা বৃষ্টিতে তার ক্ষেতের থাকা পাঁকা ধান ঝড়ে পড়েছে। এখন ধানে বদলে ক্ষেতে শুধু খড় দাড়িয়ে আছে। এখন এক বিঘা জমির ধান কেটে পাঁচ মণ ধানও পাওয়া যাবেনা। এ ধান কোন শ্রমিক ও কাটতে চাইছে না। তার আর্থিক ক্ষতি হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা।

জেলার পবা উপজেলার কৃষক সদর আলী বলেন, চলতি বোরো মওসুমে অগ্রিম বর্ষণ হওয়ায় ধানের উৎপাদন রেকর্ড পরিমান কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া তিনি বলেন, ধানের গাছ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আগামীতে গো-খাদ্যর সঙ্কট চরম আকারে দেখা দিতে পারে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি জানান,গত কয়েকদিনে কালবৈশাখী তান্ডবে জেলায় অনেক স্থানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কৃষকদের আর্থিক ক্ষতির পরিমানে মাঠ পর্যায়ে জরিপের কাজ চলছে। গত বুধবার ক্ষতিগস্থ তানোর শিব নদের মধ্যে থাকা তলিয়ে যাওয়া ধান পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা করা হচ্ছে। এছাড়া আমের ও অনেক ক্ষতি হয়েছে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.