রাজশাহী অঞ্চলে বোরো ধান কাটার উৎসব, মাঠে নামছে ১১০টি হার্ভেস্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী অঞ্চলের মাঠে মাঠে বইছে পাকা ধানের ঘ্রাণ। এরই মধ্যে অগ্রিম লাগানো বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। যদিও পুরোদমে ধান কাটা শুরু হতে সময় লাগবে আরো কিছুদিন। ধান কাটার পূর্ব মুহুূর্তের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। এ অঞ্চলে ধান পাকতে শুরু করেছে। তবে কাটার জন্যে উপযোগী হতে আরো ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে, কৃষি দপ্তর। আর এবছর শ্রমিকের পাশাপাশি কৃষকের সোনালি ধান কাটতে নতুন করে ৪৫ টিসহ জমিতে নামবে মোট ১১০ টি ধান কাটা মেশিন।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী অঞ্চলে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে এবার বোর আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহীতে ৬৬ হাজার ২১০ হেক্টর, নওগাঁয় ১ লক্ষ ৮১ হাজার ২১০ হেক্টর, নাটোর ৫৯ হাজার ৬২০ হেক্টর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর। যেখানে হেক্টর প্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬ মেট্রিক টন। এ অঞ্চলে ১৫ তারিখের দিকে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৭ হেক্টর হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। যা শতকরা প্রায় ১ শতাংশ। আর প্রতিকূল আবহওয়ার কারনে অঞ্চলে প্রায় ৩৫ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহী জেলার ২৮ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। অঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে এবার উচ্চফলনশীন বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ হয়েছে।
রাজশাহীর পবা, গোদাগাড়ী, তানোর উপজেলা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি এলাকাঘুরে দেখা গেছে, দৃষ্টি বিস্তৃত মাঠের প্রায় অধিকাংশ ধান ক্ষেত সোনালি রং ধরতে শুরু করেছে। অপরদিকে কোন জমির ধান আধাপাকা অবস্থায়ও রয়েছে। দেরি করে রোপণ করা কিছু জমিতে কেবল শীষ আসছে।
পবার মধুপুর এলাকার কৃষক জানান, বোরো ধানের আবাদে এবার তেমন কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। সেচের উপর নির্ভর করেই আবাদ করতে হয়েছে। এতে ধান চাষে খরচ বেশি হয়েছে। অনেক কষ্ট করেই ধানের আবাদ করতে হয়েছে। তার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ধান পাকতে শুরু করেছে। ১০-১২ দিনের মধ্যেই তিনি ধান কাটতে শুরু করবেন।
একই এলাকার আরেক চাষি  জানান, জমির ধান প্রথম দিকে ভালো থাকলেও শেষ পর্যন্ত গরমের কারণে প্রায় অর্ধেক ধান চিটা হয়ে গেছে। এবার খরচ উঠবে কি না? এমন শঙ্কায় আছেন। আর কিছুদিন পরই ধান কাটতে শুরু করবেন।
চাষিরা বলছেন, এক বিঘা হাইব্রীড জাতের বোরো ধান চাষে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বিঘাপ্রতি ২৫ থেকে ২৮ মণ ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। ভাল আবাদ হলে কোনো কোনো জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ মণ পর্যন্ত ধান হয়। বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করতে পারলে লাভ হবে। দিনকে দিন খড়ের দাম ভাল থাকায় ক্ষতিটা পুষিয়ে যায়।
মোহনপুর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের কৃষক বলেন, আমন ধানের ভালো দাম পেয়েছি। সে জন্য বোরো ধান চাষ করছি। আশা করি বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, গত বারের চেয়ে এবার ধান ভাল হয়েছে। আর কয়েকদিন পর কাটা শুরু করা যাবে। ক্ষেতে রোগ-বালাই ও পোকা আক্রমণ করতে পারেনি। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে স্বপ্নের সোনালী ধান যথাসময়ে ঘরে তুলতে পারবো।
সার্বিক বিষয়ে রাজশাহীর আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, রাজশাহী অঞ্চলে এবার ধানের আবাদ ভালো আছে। কিছু ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলো ছাড়া। এবার ধান কাটতে শ্রমিকের কোনো সংকট হবে না। চার জেলায় ধান কাটার জন্য নতুন করে ৪৫ টা হার্ভেস্টার মেশিন যোগ হয়েছে। রাজশাহীতে এখন ধান কাটাকাটি তেমন শুরু হয়নি। নাটোর ও নওগাঁয় কিছু শুরু হয়েছে। আর রাজশাহীর বাঘা, চাপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর এসব জায়গা থেকেই শ্রমিক ধান কাটতে যাচ্ছে। সুতরাং রাজশাহী অঞ্চলে ধান কাটতে শ্রমিক সংকট দেখা দিবে না। ধান কাটা পুরোদমে শুরু হতে এখনো ১০ থেকে ১৫ দিন লাগবে। চলবে প্রায় ১ মাস।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.