রাজশাহীর হাসপাতালে হঠাৎ করে বাড়ছে সাধারণ রোগির সংখ্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক: উত্তরবঙ্গের সর্ব বৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। তাছাড়াও এখানে খুলনা বিভাগের বেশকিছু জেলা থেকে রোগী আসেন চিকিৎসা সেবা নিতে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিম্নমুখী করোনা। দীর্ঘ সময়ের মহামারী এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসছে। হাসপাতালে কমেছে করোনা রোগি। কমেছে শয্যা সংখ্যারও।
তবে করোনা মহামারীর নিম্নমুখি অবস্থানে অন্যান্য সাধারণ রোগির সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে জরুরি বিভাগ সবখানেই সাধারণ রোগির ভিড় দেখা যাচ্ছে।
বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার ও ডাক্তারদের চেম্বারের সামনে থাকছে দীর্ঘ লাইন। শুধু সরকারি হাসপাতাল নয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও ভিড় দেখা যাচ্ছে। যেখানে অপেক্ষার প্রহরগুনতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন বয়সী মানুষকে। আর স্বল্প জায়গায় বাড়তি রোগির পদচারণায় নিশ্চিত হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব কিংবা স্বাস্থ্যবিধি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের তথ্য বলছে, করোনার মধ্যে সাধারণ রোগির তেমন চাপ ছিলো না। এখন প্রচুর রোগি সমাগম হচ্ছে। হাসপাতালে গত ১৯ আগস্ট বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছিলো ২ হাজার ৭৪৬ জন রোগি। জরুরি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলো ৩৫৬ জন রোগি। যা গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বহির্বিভাগে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫৯৮ জনে। জরুরি বিভাগে ৪৩০ জনে।
অপরদিকে, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২২ আগস্ট করোনায় মারা যায় ১২ জন। এদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত এই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি ছিলো ২৪০ জন। হাসপাতালে মোট করোনা ডেডিকেটেড শয্যার সংখ্যা ছিলো ৫১৩ টি। করোনার সংক্রমণের বৃদ্ধিকালে ৫১৩ টি শয্যা ছাড়িয়ে রোগিরা বারান্দাতেও চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু বুধবার(২২ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের ২৪০ শয্যার বিপরীতে রোগি ছিলো ১২২ জন। এদিন করোনায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন মারা যায়।
হঠাৎ করে রুগীর সংখ্যা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা বলছেন, সে সময় সবার মাঝে একধরনের আতংঙ্ক ছিলো। যার কারণে একান্ত জরুরি না হলে মানুষ হাসপাতালমুখি হয় নি। কিন্তু তারা এখন হাসপাতালে আসছেন। একারণে সে সময় সাধারণ রোগির চাপ কম ছিলো। যেটা মহামারী পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বাড়ছে।
এবিষয়ে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান ডা. আফরোজা নাজনীন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, করোনা মহামারীর মধ্যে অনেক রোগির এমন হয়েছে যে তার আরও দুই-তিন মাস পর অপারেশন করলে চলবে। আবার বার্ন ইউনিট যেহেতু করোনা ইউনিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই জটিল অপারেশনগুলোও করতে পারছেন না। কিছু রোগি ঢাকায় পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে। আবার গরিব রোগিরা অপেক্ষা করছে। তবে এখন আগের চেয়ে অপারেশনের সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে। এসব কারণেই হয়তো সাধারণ রোগী বাড়তে পারে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এটা প্রাকৃতিক একটি বিষয়। এছাড়া সে সময় যেহেতু মানুষ আতঙ্কিত ছিলো। জরুরি না হলে হাসপাতালে আসে নি। আবার এমনও হতে পারে সে সময় অনেক রোগি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাও কম নিয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাবিবুল আহসান তালুকদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এটা স্বাভাবিক। করোনার সময় অনেক সাধারণ রোগি যেমন- কারো হয়তো পিত্তথলির পাথর হয়েছে। যেটা কিছুদিন পরে অপারেশন করলেও চলবে। এমন রোগিরা করোনার মধ্যে হাসপাতালে তেমন আসে নি। কিন্তু এখন তারা হাসপাতালে আসতে শুরু করেছে। এ কারণে হয়তো সাধারণ রোগি বাড়ছে।
এবিষয়ে রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এটা খুবই ভালো দিক যে করোনার সংক্রমণ কমেছে। যে হারে করোনার সংক্রমণ বাড়ছিলো তাতে মনে হচ্ছিলো আর কিছুদিন বাড়লে হাসপাতালে হয়তো রোগি ভর্তি করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও জানান, বহির্বিভাগে রোগি বাড়ছে। সামনে আরও বাড়তে পারে। সাধারণ রোগি বৃদ্ধির পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। যেমন- লকডাউন নেই। আবার জরুরি ছাড়া হয়তো হাসপাতালে রোগিও আসে নি। যারা এখন আসছে। তবে সাধারণ রোগি বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে টিকিট কাউন্টারে জনবল বাড়ানো হয়েছে। মেডিসিন বিভাগের সামনের প্রাচীরটি ভেঙ্গে উন্মুক্ত করা হয়েছে। রোগিদের বসার জন্য জায়গাও বাড়ানো হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো: মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.