রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার ভাঙ্গনে ২৪ ঘণ্টায় ১৩ পরিবার গৃহহারা, ঝুঁকিতে এক স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার ভাঙ্গনে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩ পরিবার গৃহহারা হয়েছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চকরাজাপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল। স্কুলটির ভবন ভাঙ্গন থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে রয়েছে। যে কোনো সময় স্কুলটি পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
আজ শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সরেজমিনে ভাঙ্গন কবলিত চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালিদাসখালী এলাকায় চোখে পড়ে পদ্মা নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষের আর্তনাদ। ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা গর্ভে ভিটে-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পরিবার গুলোর মাঝে বিরাজ করছে হাহাকার। ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে পদ্মার ধারে আরো বসবাসকারী শত শত পরিবার।
ভাঙ্গনের ভয়ে তারা বাড়িঘর সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। ভাঙ্গনের কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছপালা, শত শত বিঘার ফসলি জমি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চকরাজাপুর প্রাইমারি স্কুলটি ১৯৭৩ সালে স্থাপন করা হয়। নদী ভাঙ্গনের কারণে ৩ বার স্থানান্তর করা হয়। এবারও স্থানান্তর করতে হবে। যে কোনো সময় স্কুলটি পদ্মা গর্ভে চলে যাবে।
চকরাজাপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমানে এই স্কুলে ১৮৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তিন কক্ষ বিশিষ্ঠ টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। করোনাকালিন স্কুল ছুটি ছিল। বর্তমানে স্কুল চালু হলেও নতুন ঘরে ক্লাসই শুরু করা হয়নি। এরমধ্যে পদ্মার ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। এদিকে স্কুল সরিয়ে নিব, কিন্তু কোনো জমিও পাচ্ছিনা।
স্থানীয়রা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আবদুল খালেক, আমজাদ হোসেন, গোলাম রহমান, বাহের আলী, পাখি আহম্মেদ, আয়নাল হক, রাসেদুল ইসলাম, সেকেন্দার রহমানসহ ১৩ জনের বাড়িঘর ও ভিটে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারা বাড়ির মালামাল বাঁচাতে ঘরবাড়ি ভেঙ্গে অন্যস্থানে সরিয়ে নিয়ে যায়। এরমধ্যে অনেকেই বাড়িঘর ভেঙ্গে সরিয়ে নিতে নিতে পদ্মা গর্ভে চলে গেছে।
এ বিষয়ে সেকেন্দার রহমান অত্র প্রতিবেদককে বলেন, আমি বাড়ি ঘরের মালামাল সরিয়ে নিতে নিতে চোখের সামনে বাড়ির ভিটে পদ্মা গর্ভে চলে গেল। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম, কিছুই করতে পারলাম না।
আবদুল খালেক, আমজাদ হোসেন, গোলাম রহমান, বাহের আলী, পাখি আহম্মেদ, আয়নাল হক, রাসেদুল ইসলাম বলেন, বাড়ি ঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। আমরা কোনো রকমে ঘর ভেঙ্গে সরিয়ে নিয়েছি। এখন ভিটে ভেঙ্গে যাচ্ছে। কোথায় আশ্রয় নিবো। কিভাবে চলবো। কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। নিরুপায় হয়ে পড়েছি। বাড়ি করার জমিও পাচ্ছিনা।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুল আযম অত্র প্রতিবেদককে বলেন, পদ্মার ভাঙ্গনে আমি নিজেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছি। আমার পরিবারের প্রায় দুই শতাধিক বিঘা জমি কয়েক বছরের ব্যবধানে পদ্মা গর্ভে চলে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্যাপকভাবে ভাঙ্গনের তীব্রতা বেশি দেখা দিয়েছে।
এদিকে ১০ বছরের ব্যবধানে কমিউনিইট ক্লিনিক, বিজিব ক্যাম্প, মসজিদ, হাজার হাজার একর ফসলি জমি, গাছপালা পদ্মা গর্ভে চলে গেছে। এরমধ্যে ২০১২ সালে পূর্ব চকরাজাপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল, ২০১৬ সালে চকরাজাপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল, ২০১৮ সালে চকরাজাপুর হাইস্কুল, ২০১৯ সালে চৌমাদিয়া সরকারি প্রাইমারি স্কুল, ২০২০ সালে চরকালিদাসখালী সরকারি প্রাইমারি স্কুল এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে চকরাজাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক পদ্মা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তবে এই স্কুলগুলোর মধ্যে চৌমাদিয়া বাদে সবগুলোর ভবন পাকা ছিল। বর্তমানে চকরাজাপুর সরকারি প্রাইমারি স্কুল ভাঙ্গন থেকে মাত্র ২০ মিটার দূরে রয়েছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বর আনোয়ার হোসেন শিকদার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ভাঙ্গনে বর্তমানে চকরাজাপুর বলে কোনো চিহ্ন নেই। সবগুলো পদ্মাগর্ভে চলে গেছে। আমার ৩০ বিঘা জমি পদ্মা গর্ভে চলে গেছে। ফলে নিঃস্ব হয়ে গেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, পদ্মার ভাঙনের বিষয়ে সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছি। ইতোমধ্যেই পদ্মার ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছি। চরের বিষয়ে সব সময় খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম শেখ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ৩০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের দরপত্র হচ্ছে। এরমধ্যে বাঘায় ১৩ কি. মি. নদী ড্রেজিং এর কাজ রয়েছে। ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ সোজা করে দিলে ভাঙন থেকে এলাকা বাঁচবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো: মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.