নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় খরস্রোতা বড়াল নদী নাব্যতা হারিয়ে এখন পানিশুন্য খালে পরিণত হয়েছে। এই নদী পুনঃখননের দাবি স্থানীয়দের। তবে এই নদীর বুকে এখন ধান, আখ, তিল, কলাই, মরিচ, বেগুন এর আবাদ হচ্ছে। উজানে বাঁধ দিয়ে সেচ দেয়া, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ এবং যাতায়াতের জন্য নদীর বুকে একাধিক ব্রিজ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ফারাক্কার প্রভাবে প্রমত্তা পদ্মা নদী শুকিয়ে ধূ-ধূ বালুচরে পরিণত হওযায় পদ্মার শাখা বড়াল নদীর এ অবস্থা হয়েছে। নদীর বুকে পলি জমে উঁচু হয়েছে। দু’পাড় চেপে গেছে এবং নদীর পাড়ে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। নদীর চর ভূমিগ্রাসীরা দখল করে নিয়েছে।
জানা যায়, রাজশাহীর চারঘাট থেকে পদ্মার শাখা নদী হিসেবে বড়াল নদীর উৎপত্তি হয়ে রাজশাহীর বাঘা, চারঘাট, নাটোরের বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে বাঘাবাড়ী হয়ে হুনা সাগরের বুকে মিশে নাকালিয়ায় যমুনায় পড়েছে।
এক সময় যোগাযোগের সুবিধার কারনে বড়াল নদীর দুই পাড়ে আড়ানী বাজার, রুস্তমপুর পশুহাট, পাঁকা বাজার, জামনগর বাজার, বাশবাড়িয়া বাজার, তমালতলা বাজার, বাগাতিপাড়া থানা, দয়ারামপুর সেনানিবাসসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৯৮১-৮২ অর্থ বছরে নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলোকে বন্যামুক্ত করার জন্য উৎসমুখ চারঘাটে বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়।
আড়ানী আলহাজ্ব এরশাদ আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সাহাবাজ আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বড়াল নদীর বিভিন্ন স্থানে স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে সুইসগেট ও বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্রমান্বয়ে বড়াল নদী শুকিয়ে শীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে।
এখন কড়ালে তলদেশে বিভিন্ন আবাদ করা হচ্ছে। বর্ষায় নদীতে কিছু পানি জমলেও শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়।
আড়ানী হামিদকুড়া গ্রামের কামরুল হাসান জুয়েল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বড়ালে পানি না থাকায় এলাকার কৃষকরা নদীর বুক জুড়ে ফসলের আবাদ করেন। পরিণত হয় গবাদি পশুর চারণ ক্ষেত্রে। এক সময় যে বড়ালের পানির সেচে নদীর তীরবর্তি মানুষ তাদের জমিতে ফসল ফলাত।
এখন সে নদীর বুকে অগভীর নলকূপ বসিয়ে চলে ধান চাষ। আড়ানী সরকারি মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসান জুয়েল বলেন, বড়াল নদীতে পানি না থাকায় এ নদীর ধারে গড়ে উঠা ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
সেচসহ প্রতিদিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। এখনই সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করে পুনঃখনন করা না হলে বড়াল তার ঐতিহ্য হারিয়ে মরুকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লা সুলতান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, শুষ্ক মৌসুমের বড়ালে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে বড়ালে ধারে খেতে পানি দিতে অসুবিধা হয় কৃষকদের। তবে দ্রুত খনন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.