রাজশাহীর বাগমারায় থামছে না পুকুর খনন, কমছে ফসলি জমি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাগমারায় অব্যাহত পুকুর খননে বিল-খাল আর থাকছে না। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিল-খাল, মাঠে মাঠে সবুজ দিগন্ত রেখা ছিল। যতদূর চোখ যায় দেখা মিলে সবুজের সমারোহ। মাঠ ভরে থাকতো সোনালী ফসল। গ্রাম বাংলার চিরাচারিত সে রুপ হারাতে বসেছে।
বিগত ৬-৭ বছর ধরে একের পর এক বিল-খালে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব।
খালে বাঁধ দিয়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে, আর বিলের মধ্যে পুকুর খননের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে বিল-খাল বিলিন করে দিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষে বারবার ফসলি জমিতে পুর খনন বন্ধের চেষ্টা করা হলেও একটি চক্র রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পুর খনন অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাকায় এক শ্রেণির পুকুর ব্যবসায়ী স্থানীয়দের কাছে লোভ দেখিয়ে বেশী মূল্যে কিছু কৃষককের জমি লিজ নেয়। লিজকৃত জমিতে পুকুর খনন শুরু করে আশে পাশের জমি জোরপূর্বক দখল নিয়ে প্রভাব খাটিয়ে পুকুর করে। পুকুর খনন সিন্ডিকেট বেশি লাভের আশায় বিঘা চুক্তিতে কৃষকের কৃষি জমি পুকুর খনন করে ওই পুকুরই মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করছে। এতে কতিপয় লোক লাভবান হলেও অধিকাংশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ রয়েছে, জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না। আইনের প্রতি প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে রাতের অন্ধকারে কিংবা ছুটির মধ্যে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে বিলের জমি শেষ করছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার ঝিকরা, হামিরকুৎসা, শ্রীপুর ইউনিয়নে মজিদপুর গ্রামে ও গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বর্তমানে মোট ১০-১২টি স্পটে কৃষি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন কাজ চলছে। এসব পুুকুর দিনের বেলা লুকোচুরিভাবে ও রাতের অন্ধকারে খনন অব্যাহত রেখেছে।
উপজেলা প্রশাসন থেকে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ফসলি জমিতে বরাবরই করছে পুকুর খনন। এতে গ্রাম বাংলার বিল-খালগুলো পুকুরে ভরে যাচ্ছে।
এদিকে অবৈধ জমিচাষের ট্রাক্টরের মাধ্যমে মাটি বহনে যানবহনে রাস্তা ভেঙ্গে চলাচলে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। মাটি বহনের সময় মাটি পড়ে রাস্তায় যানবহন ঝুঁকিতে পড়ছে। এতো সব অভিযোগ মাথায় নিয়ে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অবৈধভাবে পুকুর খননের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ড্রেজারের (ভেকু) চালকসহ তিনজনের দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ঝিকরা ইউনিয়নের পুকুর খনন চক্রের মূলহোতা আমজাদ হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে নামকান গ্রামে কৃষিজমিতে জোরপূর্ব পুকুর খনন শুরু করেন। এতে এলাকার কৃষকরা বাধা দিলেও তাদের পাত্তা না দিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তারা অবৈধভাবে পুকুর খনন কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
এই ঘটনায় এলাকার কৃষকরা একত্রিত হয়ে অবৈধভাবে কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারি কমিশনারের (ভূমি) কাছে পৃথকভাবে লিখিত অভিযোগ দেন।
একই ভাবে শ্রীপুর ইউনিয়নের মজিদপুর গ্রামে, রামগুয়া গ্রামে ও হামিরকুৎসা ইউনিয়নের কালুপাড়া গ্রামে নাইম হোসেন এবং গোন্দিপাড়া ইউনিয়নের বোয়ালিয়া মোড়ে আব্দুল জব্বার ওরুফে হুয়া মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে অবৈধভাবে কৃষি জমিতে পুকুর খনন করে ট্রাক্টরযোগে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি সরবরাহ করছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে অবৈধভাবে পুকুর খননের দায়ে ড্রেজারের চালকসহ তিনজনের ৫০ হাজার করে মোট দেড় লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
এছাড়া অবৈধভাবে পুকুর খনন কাজে নিয়োজিত ড্রেজার (ভেকু) ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়ে অবৈধ পুকুর খনন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উপজেলায় অবৈধভাবে কোন পুকুর খনন করা যাবে না। অবৈধ ভাবে কোথাও ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা দুই বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হবে। ফসলি জমিতে পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.