রাজশাহীর প্রকৃতির গায়ে হলুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পৌষের প্রায় শেষ লগ্নে রাজশাহী অঞ্চলের মাঠ-ঘাট সেজে উঠেছে অপরূপ সাজে। যতদূর চোখ যায় মাঝে মাঝে সবুজের মিশ্রন আর হলুদের সমাহার। যেন সরষে ফুলে চোখ ধাঁধাঁনো হলুদ সাম্রাজ্য।

মনে হচ্ছে যেন এখন প্রকৃতির গায়ে হলুদ। প্রকৃতি যেন অঙ্গে গাঢ় সবুজ পাড়ের গাঢ় হলুদ রঙের শাড়ি পরেছে। মাঠ-ঘাট, প্রান্তরে শুধুই এখন হলুদের ছড়াছড়ি। সরষে ফুলের উপর খেলায় মাতোয়ারা বিভিন্ন প্রজাতির মৌমাছি, ভ্রমর, ফড়িং, প্রজাপ্রতিসহ নানা কিট-পতঙ্গ। সরষে ফুলের গাঢ় হলদে রঙ কয়েক শ’ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে প্রকৃতির শোভা।

হলুদ ফুলে যখন হাওয়া লাগে তখন ফুলগুলো মাতাল করা দোলা দিয়ে হলুদ তরঙ্গের জোয়ারে প্লাবিত করে প্রকৃতি প্রেমীদের হৃদয়।

ঋতুবৈচিত্র্যের সঙ্গে সঙ্গে রূপ বদল হয় প্রকৃতিরও। এখন শীতকাল। সরষে ফুলের মৌসুম। সঙ্গে ধানের চাষাবাদ। তাই ধানের চারার সবুজের সঙ্গে মিশেছে হলুদের আভা। এ যেন প্রকৃতির স্বর্গীয় আরেক রূপ।

এই সময়ে প্রকৃতি পানে চোখ মেলে যদি কেউ একবার তাকায় সে প্রকৃতির প্রেমে পড়তে বাধ্য। প্রান্তর জুড়ে উষ্ণ হলুদ ফুলের তোড়া নিয়ে যেন প্রকৃতি আপনারই অপেক্ষায়। প্রকৃতি প্রেমীদের প্রাণ আকৃষ্ট করে নেয় দৃশ্য ও মুগ্ধতায়। প্রকৃতি প্রেমীদের হৃদয়ে ভালোবাসার মাত্রা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দেয়।

কুয়াশা ভেজা হাড় কাপানো শীতের সকাল কিংবা বিকেল বেলায় হলুদ ফুলের ডগায় ডগায় এবং পাপড়িজুড়ে ছোট ছোট শিশির কণাগুলো দেখতে অবিকল মুক্তোর মত লাগে। তাতে কুয়াশার চাদর ভেদ করে সকাল এবং বিকেলের মিষ্টি সোনারোদ পড়ে ঝিকমিক করে উঠে। তখন প্রকৃতি আরো আকৃষ্ট ও মুগ্ধ করে কাছে টানে প্রকৃতিপ্রেমীদের।

রাজশাহীর বরেন্দ্রর মাঠে মাঠে হলুদ আভা ছড়িয়েছে সরষে ক্ষেতগুলো। ক্রমেই আগুন লাগা হলুদ রঙে অপরূপ হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। শীতের শেষ বিকেলের মিষ্টি সোনালী রোদ সরষে ক্ষেতের ওপর দোলা দেয় তখন চারপাশের প্রকৃতি আরও সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। শীতের রিক্ততায় সরষে ফুলে হলুদ রং যেন প্রাণের স্পন্দন নিয়ে আসে। শীতে সরষে ক্ষেত গ্রাম-বাংলার রূপকে আরও বেশি অপরূপা করে তোলে।

মাঠজুড়ে সে হলুদ আভায় আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছির দল ঝাঁকে ঝাঁকে আসছে মধু আহরণে। সরষে ফুলের হলদে সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই করবে। হলুদ সাম্রাজ্যে হারিয়ে যেতে চাইবে যে কেউই।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন চোখ ধাঁধাাঁনো হলুদের সাম্রাজ্য। হলুদ সাম্রাজ্যের পাশেই আবার আঁকাবাাঁকা আইল বেষ্টিত ধানের চারার গাঢ় সবুজ ক্ষেত। তাতে মনে হচ্ছে যেন হলুদ সাম্রাজ্যের পথে যাওয়ার জন্য সবুজ গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। তাতে যোগ হয়েছে সাজ-সজ্জায় ভিন্ন রূপ। এতে সৌন্দর্যের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতৃতির।

সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, এ বছর আবহওয়া ভালো হওয়ায় সরিষার ফলন অন্য বছরগুলোর চেয়ে ভালো হবে। সরেজমিন উপজেলার বাসুদেবপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এই এলাকার বেশিরভাগ শস্য খেতেই এখন সরিষার চাষ হচ্ছে। সরিষা গাছের হলুদ ফুলে উড়ে বেড়াতে শুরু করেছে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি।

দুপুরে গোদাগাড়ীর বাসুদেপ পুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় কৃষকরা তাদের ক্ষেতে গিয়ে আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত। কৃষকরা বলেন, ধান-সবজির পাশাপাশি এখন প্রতি মৌসুমে সরিষা চাষ করি। এতে ভালোই লাভ হচ্ছে।

তাদের ভাষ্যমতে, এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা খরচ হয়। ফলন ভালো হলে বিঘাপ্রতি চার থেকে পাঁচ মণ সরিষা উৎপাদন সম্ভব। আর প্রতি মণ সরিষার মূল্য দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।

মুলত: সরিষা একটি তৈল বীজ জাতীয় অর্থকরী ফসল। কৃষকরা সাধারণত নিজের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট ফসল বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করেন। চলতি বছর সরিষার ফলন ভালো। সাধারণত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। সরষের ঝরে পড়া পাতা ও ফুল জৈব সার হিসেবে কাজ করে।

এখন থেকেই সরষে ক্ষেত থেকে মধু আহরহনকারীরা মধু সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.