রাজশাহীর পুরাকীর্তি বড়কুঠি‘র সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী মহানগরীর পদ্মপাড়ে অবস্থিত সংরক্ষিত পুরার্কীতি ‘বড়কুঠি’ এর সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বড়কুঠি‘র সংস্কার ও সংরক্ষণ করেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন। কাজের উদ্বোধন শেষে বড়কুঠি পরিদর্শন করেন মেয়র।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন বড়কুঠি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বাংলায় এসে ডাচরা রাজশাহীর পদ্মার তীরে এই ভবনটি নির্মাণ করেছিল। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বড়কুঠি ভবনে প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন ছিল। বড়কুঠিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে আমি প্রথমবার মেয়র থাকাকালে (২০০৯-২০১৩) প্রাণপণে চেষ্টা করেছিলাম, তৎকালীন রাবি উপাচার্যকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে এটির সংস্কারের জন্য। কিন্তু সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক সাড়া দেননি। আজকে আনন্দের দিন অনেক পরে হলেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বড়কুঠির সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজ শুরু করতে পেরেছে।
মেয়র আরো বলেন, পদ্মাপাড়ে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত বড়কুঠি পর্যটকদের আকর্ষণ করবে। বড়কুঠি বিশে^র মধ্যে আইকনিক সিম্বল হতে পারে। এছাড়া রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ি, বাগমারা তাহেরপুরে কংস নারায়ণের রাজবাড়ীতে অবস্থিত মন্দির সহ অন্যান্য প্রচীন স্থাপনাকে ভালোভাবে সংরক্ষণ করে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা সম্ভব হলে দেশ-বিদেশী পর্যটকরা আকর্ষিত হবেন। পর্যটকদের আগমনে রাজশাহী সমৃদ্ধ হবে। আগামীতে পর্যটন খাত বাংলাদেশের অন্যতম একটি আয়ের খাতে পরিণত হবে। পর্যটন খাতের উন্নয়নে সরকার যথেষ্ট যত্নশীল।
সভায় বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, রাজশাহীর পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে আজকের দিন মাইলফলক।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে মে মাসে বড়কুঠিকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংরক্ষিত পুরার্কীতি হিসেবে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। বড়কুঠির সংস্কার ও সংরক্ষণ কাজ কোভিড-১৯ এর কারণে শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হলো। প্রথম পর্যায়ে ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার সংস্কার কাজ শুরু হলো। ইতোমধ্যে বড়কুটি‘কে একটি প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে, সেই প্রকল্প থেকে বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়া যাবে। সেই প্রকল্পের মাধ্যমে বৃহৎ পরিসরে সংস্কার, সংরক্ষণ ও জাদুঘর করা হবে।
তিনি আরো বলেন, সংস্কার ও সংরক্ষণের পর বড়কুঠিকে জাদুঘরে পরিণত করা হবে। যেহেতু এটি ডাচরা নির্মাণ করেছিলেন, তাই জাদুঘরটি ডাচদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, ছবি ও পেইন্টিং ও বড়কুটি নির্মাণের ইতিহাস সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমৃদ্ধ করা হবে। কাজ শেষে জাদুঘরটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ডাচদের ব্যবহৃত কোন জিনিসপত্র, তথ্য-উপাত্ত যদি কারো কাছে থেকে থাকে, তাহলে আমাদের প্রদানের অনুরোধ করছি।
বিশেষ অতিথিদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ ও ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু। অনুষ্ঠানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আবির বিন কায়সার, প্রকৌশলী খলিলুর রহমান, রাসিকের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আলমগীর কবির, মহানগর আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, বঙ্গবন্ধু কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.