নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পদ্মা নদীর দুর্গম মাঝচর এলাকায় সীমান্তবর্তী ভারত থেকে দলবেঁধে আসা শেয়ালের আক্রমণে এক রাতেই অন্তত দুই শতাধিক গরু ও মহিষ আহত হয়েছে।
এর আগে কখনো একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক গবাদিপশুকে শেয়ালের কামড়ে আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন স্থানীয় খামারিরা। ফলে পুরো চরজুড়ে খামারিদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনাটি ঘটে গত ২০ ডিসেম্বর রাতে। পরদিন ভোরে রাখালরা চরে গিয়ে দেখতে পান, বহু গরু-মহিষ রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছে। কোনো কোনো গরুর কান কামড়ে ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে, অনেকের মুখ ও কানে গভীর ক্ষত রয়েছে। একই সময় চরের আশপাশে শতাধিক শেয়ালের ছুটাছুটি করতে দেখা যায়।
খবর পেয়ে স্থানীয় খামারিরা ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য আবু জাফর ইবনে আলম প্রমিজকে বিষয়টি জানান। তাঁর মাধ্যমে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসকে অবহিত করা হলে পরদিন দুপুরেই ঘটনাস্থলে গিয়ে আক্রান্ত গরু-মহিষগুলোর শরীরে র্যাবিজ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, জলাতঙ্কের ঝুঁকি এড়াতে পর্যায়ক্রমে আরও চারটি ডোজ দেওয়া হবে।
ইউপি সদস্য আবু জাফর ইবনে আলম প্রমিজ বিটিসি নিউজকে বলেন, এক রাতেই প্রায় ২০০ গরু-মহিষ আক্রান্ত হয়েছে। দ্রæত ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আক্রান্ত গরু-মহিষ বিক্রি না করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাঝচরের অধিকাংশ বাসিন্দাই গরু-মহিষের খামারি। তারা দলবদ্ধভাবে গবাদিপশু চরে চরান এবং রাতে বাঁশ বা খড়ের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখে বাড়িতে ফেরেন। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
খামারি মাহাবুবুল শেখ বলেন, আমার ৪০টি গরু-মহিষ রয়েছে। কয়েকজন মিলে প্রায় ৬০০ গরু-মহিষ একসঙ্গে রাখা ছিল। ভোরে গিয়ে দেখি অনেকগুলোকে শেয়াল কামড়েছে। এমন ঘটনা আগে কখনো দেখিনি।
আরেক খামারি মোঃ আওয়াল বিটিসি নিউজকে বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে খামার করছি। কখনো মহিষে শেয়ালের আক্রমণ হয়নি। এই প্রথম এমন দেখছি।
স্থানীয় খামারি বাবু বিটিসি নিউজকে জানান, মাঝচরের অদূরে ভারতের ষাটবিঘা চর এলাকায় বিপুলসংখ্যক শেয়াল ও বনশূকর বসবাস করে। ঘটনার আগের দিন সেখানে শিকার হওয়ায় শেয়ালগুলো ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশ অংশের চরে ঢুকে গবাদিপশুর ওপর হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে অতীতে এমন নজির নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ঘটনার পর থেকে গরু-মহিষ রক্ষায় রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন খামারিরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত চরে বাড়তি সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #















