নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর তানোর উপজেলায় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। খড়ের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ কৃষকরা গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। বিকল্প হিসেবে তারা পুকুর, ডোবা ও খাল-বিলের কচুরিপানার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
তবে সম্প্রতি অকাল বন্যা এবং স্মরণকালের ভয়াবহ ভারী বর্ষণে গোচারণভ‚মি ও ফসলের মাঠ ডুবে যাওয়ায় সেই বিকল্পও বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ফলে সংকটকে আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
এ বছর মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টি এবং পরবর্তীতে বন্যার কারণে উপজেলায় গো-খাদ্যের অন্যতম প্রধান উৎস খড়ের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। জমিতে পানি জমে যাওয়ায় কৃষকরা সময়মতো ধান কেটে খড় সংগ্রহ করতে পারেননি। অনেক কৃষকের আউশ ও আমন ধানের চারা এবং ঘাস নষ্ট হয়ে গেছে।
তানোরের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, খড়ের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় তা সাধারণ কৃষকদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মেশিনে কাটা এক কেজি খড় ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বর্তমানে অনেক কৃষকের পক্ষে কেনা অসম্ভব।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল ও আইয়ুব বিটিসি নিউজকে জানান, আগে খড়ই ছিল গরুর প্রধান খাবার। কিন্তু এখন ১৪ হাজার টাকা কাউন দরে খড় কিনতে হচ্ছে। এত দামে আমাদের পক্ষে কেনা অসম্ভ। তাই বাধ্য হয়ে গরুকে কচুরিপানা খাওয়াচ্ছি। খড়ের এই চড়া দামের কারণে গরু মোটাতাজাকরণ এবং কৃষি কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
কৃষকরা খড়ের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারি হস্তক্ষেপ এবং বিকল্প পশুখাদ্য সহজলভ্য করার দাবি জানিয়েছেন।
গত ২৯ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় উপজেলার আধাপাকা আমন খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এই অকাল বন্যায় গো-খাদ্যের সংকট আরও তীব্র হয়েছে। গোচারণভ‚মি ও জমির আইল ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা ঘাসও কাটতে পারছেন না। ফলে গবাদিপশুর খাবারের জন্য একমাত্র সহজলভ্য বিকল্প হয়ে উঠেছে কচুরিপানা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের এখন পুকুর, ডোবা ও নিচু জমি থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করতে দেখা যাচ্ছে। কেউ নৌকা ব্যবহার করে, আবার কেউ বাঁশ বা লাঠির সাহায্যে এই ভাসমান উদ্ভিদ সংগ্রহ করছেন। অনেক খামারি শ্রমিক দিয়েও দূর-দূরান্ত থেকে কচুরিপানা সংগ্রহ করাচ্ছেন।
গ্রামীণ জনপদে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে কচুরিপানার ব্যবহার নতুন নয়, তবে খড়ের অস্বাভাবিক দামের কারণে এবার এটিই প্রধান খাবারে পরিণত হয়েছে। কৃষকদের মতে, কচুরিপানা গরুর জন্য খুব একটা পুষ্টিকর খাবার না হলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটিই তাদের একমাত্র ভরসা।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা (এএও) আকবর হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, কচুরিপানা একটি বহুবর্ষজীবী ভাসমান উদ্ভিদ যা গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হতে পারে। কৃষিতাত্তি¡কভাবে এটি আগাছা হিসেবে বিবেচিত হলেও, এর ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন নিচু ফসলি জমিতে কচুরিপানা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। অন্যদিকে গো-খাদ্যের চাহিদাও মিটবে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওয়াজেদ আলী বিটিসি নিউজকে জানান, শুধু কচুরিপানার ওপর নির্ভর করে গবাদিপশু পালন করা কষ্টকর। তিনি পরামর্শ দেন, কচুরিপানা রোদে শুকিয়ে খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, এ মৌসুমে খাল-বিলে পচুুর কচুরিপানা পাওয়ায় গবাদিপশু পালনকারীদের জন্য কিছুটা সুবিধা হয়েছে।
সার্বিকভাবে, তানোরের কৃষকরা এক নজিরবিহীন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। গো-খাদ্যের আকাশছোঁয়া দাম এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে, সরকারি সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের দিকে তাকিয়ে আছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #















