রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে'(জেলা পুলিশে তোলপাড়)’শীর্ষ মাদক ব্যাবসায়ি ভোদল কে নিয়ে..?

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ‘ক্রসফায়ারের’ ভয় দেখিয়ে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের ঘটনায় রাজশাহী জেলা পুলিশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করছেন জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ভোদল (৩৫) গ্রেপ্তার করে তার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠে জেলার গোদাগাড়ী থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার ওই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। রাতে তার পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের এই টাকা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ।
গোদাগাড়ী থানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুরে ১০০ গ্রাম হেরোইনসহ উপজেলা সদরের ফায়ার সার্ভিসের মোড় থেকে পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী ভোদলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেদিন বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকেও গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তাদের শুক্রবার দুপুরের পরই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে ভোদলকে আদালতে তোলা হয় পরদিন সকালে। এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ‘ক্রসফায়ারের’ ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করতেই ভোদলকে রাতে থানা হাজতে রেখে দেওয়া হয়। এরপর তার কাছে দাবি করা হয় টাকা। প্রাণের ভয়ে ভোদল পুলিশকে টাকা দিতে রাজি হন। পরে থানার দুজন কনস্টেবল একটি মাইক্রোবাসে করে গিয়ে ভোদলের বাড়ি থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে আসেন।
মাদক ব্যবসায়ী ভোদলের বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি মহল্লায়। তার বাবার নাম আফসার আলী ওরফে ডাকু। কয়েক বছর আগে তিনি মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নকশি কাঁথা সেলাই করা সুতা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। ভোদল তখন মহিষালবাড়ি পশুহাটে করিডরের কাগজ লেখার কাজ করতেন। পশুহাট বন্ধ হয়ে গেলে তিনি স্থানীয় বাজারে বসে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করতেন।
হেরোইনের কারবার করে ভোদল এখন কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক। ভোদলের বিরুদ্ধে আগে থেকেই বিভিন্ন থানায় মাদকের তিনটি মামলা ছিল। কিন্তু এবার গ্রেপ্তারের আগে তাকে কখনোই গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। প্রথমবারের মতো থানার তালিকাভুক্ত এই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করলেও তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠলো পুলিশের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ অস্বীকার করে গোদাগাড়ী থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ ধরনের কথার কোনো ভিত্তি নেই। টাকা আদায়ের কথা এলাকায় প্রচার হলে আমার কানেও আসতো। আমি তো কিছু শুনিনি।’
ওসির দাবি, বেলা ৩টার পর এখন আদালত কোনো আসামি গ্রহণ করে না। তাই ভোদলকে পরদিন আদালতে তোলা হয়। টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে রাতে তাকে থানা হাজতে রাখা হয়নি।
মিয়ানমার থেকে দেশে ইয়াবা পাচার করে আনার ট্রানজিট যেমন কক্সবাজারের টেকনাফ, তেমনি ভারত থেকে হেরোইন পাচার করে আনার প্রধান পথ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা। সীমান্ত লাগোয়া এ উপজেলার বহু মানুষ হেরোইনের কারবারে জড়িত। কিন্তু সারাদেশে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হলেও এখানে তেমন অভিযানই চলছে না। এখানকার বড় মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে একমাত্র ভোদলকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, সম্প্রতি গোদাগাড়ী থানায় ওসি হয়ে আসা জাহাঙ্গীর আলম এর আগেও ২০০৮ সালের দিকে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে গোদাগাড়ীতে কর্মরত ছিলেন। তখন থেকেই মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক। তাই চলছে না অভিযান। এখন ওসি জাহাঙ্গীর আলমের যাতায়াত রয়েছে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী শীষ মোহাম্মদ ও জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে। থানায় এখন মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের দালালদের যাতায়াতও বেড়েছে।
রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শহীদুল্লাহ বলেন, বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে তার নজরে এসেছে। নিয়ে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এসপি বলেন, ভোদল গোদাগাড়ীর বড় মাদক ব্যবসায়ী। তাকে গ্রেপ্তার করায় পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হতে পারে। তারপরেও বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখছেন। টাকা নেওয়া এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের প্রমাণ মিললে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.