রাজশাহীতে হাইটেক পার্ককে ঘিরে নতুন দিনের সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: হযরত শাহ মখদুম (রু:) এর পুণ্যভূমি শিক্ষা নগরী অন্যান্য শহরের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। কারন হিসেবে উল্লেখ করার মত, সেটা হচ্ছে কর্মসংস্থান।
শিল্পায়নে অনেক পিছিয়ে পড়ায়  শিক্ষানগরী রাজশাহীতে বেকার সমস্যা প্রকট। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া এ শহরে কর্মসংস্থানের কোন জায়গা পেতেন না তরুণ-তরুণীরা।
তবে এ শহরেই কর্মসংস্থানের একটা স্বপ্ন দেখাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাইটেক পার্ক। সেটিকে ঘিরেই নতুন দিনের সম্ভাবনা দেখছেন রাজশাহীর মানুষ।
শহরের পশ্চিম প্রান্তে পদ্মার পাড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে এই হাইটেক পার্ক। পার্কটির প্রধান দুই অংশের মধ্যে ‘শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’ এর কাজ ইতোমধ্যে শেষ। ভবনটি হয়ে উঠেছে কর্মমুখর। আর ‘সজীব ওয়াজেদ জয় সিলিকন টাওয়ার’ এর কাজও শেষ হবে দ্রুত সময়ের মধ্যে।
সবমিলিয়ে প্রকল্পের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক স্থাপনের জন্য রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা সংসদে একাধিকবার দাবি জানান। এরপর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই রাজশাহী মহানগরী বুলনপুর এলাকায় ৩১ দশমিক ৬৩ একর জমির উপর ২৮১ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে হাইটেক পার্কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নিয়মিত এই প্রকল্পের অগ্রগতি তদারকি করেন সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। সর্বশেষ গেল সেপ্টেম্বরে তিনি হাইটেক পার্কের অগ্রগতি পরিদর্শনে যান।
হাইটেক পার্ক নিয়ে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, পিছিয়ে পড়া রাজশাহীকে এগিয়ে নিতে সংসদে বার বার এই হাইটেক পার্কের জন্য তিনি দাবি তুলেছিলেন। সেটি এখন বাস্তবে রূপ পাচ্ছে। হাইটেক পার্কে ইতোমধ্যে স্পেশ বরাদ্দ শুরু হয়েছে। এর ফলে খুলে যাচ্ছে কর্মসংস্থানের দুয়ার। দ্রুত সময়ের মধ্যে পুরো হাইটেক পার্ক চালু করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি পুরোপুরি চালু হওয়ার পর রাজশাহী হবে প্রযুক্তির নগরী। দ্রুত সময়ের মধ্যেই যেন নির্মাণ কাজ শতভাগ শেষ হয়, সে জন্য তিনি সব সময় খোঁজখবর রাখছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, হাইটেক পার্কের শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার অফিস পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে স্থান বরাদ্দ পেয়েছে ১০টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। কাজ করছেন প্রায় দুই শতাধিক কর্মী। চোখের সামনেই প্রযুক্তি শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার এমন দৃশ্য রাজশাহীবাসীর মনে নতুন দিনের আশার সঞ্চার করেছে। বিশেষ করে তরুণ পেশাজীবীরা স্বপ্ন দেখছেন রাজশাহীতে থেকেই সম্ভাবনাময় এক ক্যারিয়ার গড়ার।
পার্কটিতে বরাদ্দ পাওয়া ফ্লিট বাংলাদেশ নামক এক আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন আফরোজা আরবি তুষি। গ্রাহক সেবা নির্বাহী তুষি বলেন, যখন ছাত্রী ছিলাম তখন ভয় পেতাম যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ভালো একটা ক্যারিয়ার গড়তে হলে হয় ঢাকায় যেতে হবে আর নয়তো ক্যারিয়ারই হবে না। রাজশাহীতে তেমন কোন সুযোগ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাইবোনদের দেখেছি ক্যারিয়ারের জন্য ঢাকা যেতে। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছা ছিল পরিবার পরিজন নিয়ে রাজশাহীতে থেকেই একটা ক্যারিয়ার গড়ার। আমাকে সেই সুযোগটা দিয়েছে ফ্লিট বাংলাদেশ আর ফ্লিট বাংলাদেশকে সেই সুযোগটা দিয়েছে এই হাইটেক পার্ক। এখানকার পরিবেশও বেশ সুবিধাজনক বিশেষ করে নারী কর্মীদের জন্য।
মোবাইল গেমস এবং অন্যান্য সফটওয়্যার সেবা দেওয়া আরেক প্রতিষ্ঠান টেক রাজশাহী’র প্রধান নির্বাহী মাহফুজুর রহমান বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে মোট ১৪২ জন কর্মী। হাইটেক পার্কে ২৮ জন কর্মী এখন কাজ করছেন। নামের সঙ্গে রাজশাহী শব্দ থাকা প্রতিষ্ঠানটির অফিস শেষ পর্যন্ত রাজশাহীতেই হলো। হাইটেক পার্কটির অবস্থান এবং অন্যান্য আধুনিক সুবিধার পাশাপাশি এখানে একটি অফিস থাকা মানে প্রতিষ্ঠানের ‘ব্র্যান্ড ভ্যালু’ অনেকখানি বেড়ে যাওয়া। তরুণ পেশাজীবী এবং বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আস্থা অনুভব করবে।
হাইটেক পার্ক ইন্ডাস্ট্রি এবং অ্যাকাডেমিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক তাসনিম বিনতে শওকত। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই শিক্ষিক বলেন, এদেশের মেধাবীরা বাইরে যাচ্ছে। যাকে আমরা বলছি ‘ব্রেইন ড্রেন’। আবার আমরা বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসছি এখানকার কোম্পানী পরিচালনার জন্য। এই দ্বিমুখী সমস্যার সমাধান করবে হাইটেক পার্ক।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.