রাজশাহীতে মাদক দিয়ে সাংবাদিককে ফাঁসানোর অভিযোগ!!!

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে ইয়াবা ও ফেনসিডিল দিয়ে সাংবাদিককে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে চারঘাট থানা পুলিশের একটি দল এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। দৈনিক যুগান্তর ও স্থানীয় দৈনিক সানশাইনের চারঘাট প্রতিনিধি মিজানুর রহমান এ ঘটনার শিকার হয়েছেন।
পুলিশের বিরুদ্ধে মাদক ও মামলা ‘বাণিজ্য’, তল্লাশির নামে হয়রানি এবং লুটপাটসহ বিভিন্ন অনিয়মের খবর প্রকাশ করায়, সাংবাদিক মিজানের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে মনে করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। পুলিশের এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাজশাহীর গণমাধ্যমকর্মীসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে চলছে তোলপাড়। চরম ক্ষোভ এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, সাংবাদিক মিজান এ সময়ের সাহসী সন্তান। তিনি দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম সৈনিক হিসাবে অত্যন্ত সোচ্চার। পুলিশ যে ‘অপকর্মটি’ করেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে চারঘাট পৌরসভার সামনে দিয়ে মোটরসাইকেলযোগে রাজশাহী নগরীতে যাচ্ছিলেন সাংবাদিক মিজান। এসময় চারঘাট থানা পুলিশের এসআই শরিফুল ইসলামসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার পথরোধ করেন। এরপর মিজানকে জোরপূর্বক থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় নেয়ার পরে এসআই শরিফুল ওসি নজরুল ইসলামসহ অন্য পুলিশ সদস্যদের চিৎকার করে একটি ব্যাগ দেখিয়ে বলেন ফেনসিডিল ও ইয়াবা পাওয়া গেছে। এসময় ব্যাগে ২২ বোতল ফেনসিডিল ও ৭০ পিস ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে এসআই শরিফুল উল্লেখ করেন। এরপর মিজানকে ওসির কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘটনা জানার পর চারঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে যান। এসময় সাংবাদিক মিজান প্রেসক্লাবের সদস্যদের বলেন, আমাকে জোরপূর্বক এসআই শরিফুলসহ পুলিশের সদস্যরা থানায় তুলে এনেছেন। এরপর পরিকল্পিতভাবে বলছেন, আমার কাছে ফেনসিডিল ও ইয়াবা পাওয়া গেছে।
ইতোপূর্বে চারঘাট থানায় কর্মরত এসআই উৎপল ও শরিফুলসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোসহ বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ পরিবেশন করায় আমাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। বুধবার রাত আটটায় এ রিপোর্ট লেখার সময় সাংবাদিক মিজান চারঘাট থানায় ওসির কক্ষে আটক ছিলেন।
এদিকে গত ২৮ জানুয়ারি ‘তল্লাশির নামে লুটপাট!’ শিরোনামে দৈনিক যুগান্তর এবং সানশাইনে একটি সংবাদ পরিবেশন করেন সাংবাদিক মিজান। প্রকাশিত ওই সংবাদে রাজশাহীর চারঘাট থানা পুলিশের বিরুদ্ধে থানা এলাকার বাইরে গিয়ে তল্লাশির নামে নগদ টাকা ও স্বর্নের গয়না লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ ভানুকর এলাকায় গরু ব্যবসায়ী আখতার হোসেনের বাড়িতে ওই অভিযান চালানো হয়। আর এ অভিযানে অংশ নেন- চারঘাট মডেল থানার তৎকালীন এসআই উৎপল কুমারের নেতৃত্বে এসআই শরিফুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ ও তরিকুল ইসলাম।
সংবাদটি যুগান্তর ও সানশাইন ছাড়াও অন্য গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ পেলে তোলপাড় শুৃরু হয়। এ ঘটনায় তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া সদ্য বদলিকৃত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরীকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে এসআই উৎপলকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। আর অন্য তিন এসআই শরিফুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ ও তরিকুল ইসলাম বর্তমানে চারঘাট থানায় কর্মরত আছেন। অভিযোগ রয়েছে, এরপর থেকেই সাংবাদিক মিজানকে ফাঁসানোর জন্য উঠেপড়ে লাগে এ চার পুলিশ কর্মকর্তা।
সাংবাদিক মিজানকে হয়রানির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী শাহেদ বলেন, মাদকবিরোধী অভিযান সরকারের মহৎ উদ্যোগ। এ ধরনের উৎদোগকে বিতর্কিত করতে কতিপয় পুলিশ সদস্য নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে গণমাধ্যমকর্মীদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছেন।
আর এরই ধারাবাহিকতায় সাংবাদিক মিজানকে মাদকদ্রব্য দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। এ ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি সাংবাদিক মিজানের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় গণমাধ্যমকর্মীরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করেন এ সাংবাদিক নেতা।
অভিযোগ অস্বীকার করে চারঘাট থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক মিজানের ব্যাগ থেকে ফেনসিডিল ও ইয়াবা পাওয়া গেছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর অভিযোগ সঠিক না বলে দাবি করেন ওসি।
রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল্লাহ বলেন, বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন। সাংবাদিক মিজানকে যদি কোনো পুলিশের রোষানলে পড়ে এ ঘটনার শিকার হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই সে ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.