রাজশাহীতে বেপরোয়া এসআই উৎপল ও শরিফুল!!!

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর চারঘাটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন পুলিশের এসআই উৎপল কুমার সরকার এবং শরিফুল ইসলাম। চাকরিবিধির তোয়াক্কা করছেন না বহুল আলোচিত এ দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
চারঘাটে কিছু বিপথগামী যুবকের মাধ্যমে নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন মাদকের স্পট। চারঘাটের অন্তত ১০টি পয়েন্টে এ দুই পুলিশ কর্মকর্তার নিয়োগকৃত যুবকরা বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া চারঘাট-বাঘা রুট দিয়ে নির্বিঘ্নে মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র প্রবেশ এবং তা বাইরে সরবরাহের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করেন এ দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
মাদক মামলা দিয়ে ফাঁসানো, ধারা-ছাড়া বাণিজ্য, চারঘাট এবং বাঘার দুই মাদক মাফিয়া কালাম মোল্লা এবং আফজালের সঙ্গে বিশেষ সখ্যতার মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা আদায়সহ এ দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে পাহাড়সম অভিযোগ।
অভিযোগ রয়েছে চারঘাট উপজেলার শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা আদায়সহ নানা ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ দুই কর্মকর্তা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের কয়েকজন সদস্য জানান, এ দুই পুলিশ কর্মকর্তার দাপটের কারণেই চারঘাটে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া চারঘাটের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
অভিযোগ উঠেছে, এ দুই পুলিশ কর্মকর্তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান মাদকবিরোধী অভিযান সম্পর্কে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এ ধরনের মহৎ উদ্যোগ।
এছাড়া এসআই উৎপল চারঘাট এলাকায় মাদকসেবী হিসেবেও পরিচিত। তিনি ফেনসিডিল ও ইয়াবায় আসক্ত বলে চাউর রয়েছে।
এসআই উৎপল চারঘাট থানায় চার বছর একটানা কর্মরত ছিলেন। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি তাকে ওই থানা থেকে অভিযানের নামে নগদ টাকা এবং স্বর্ণের গয়না লুটপাটের অভিযোগে সরিয়ে দেয়া হয়।
বর্তমানে জেলা গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত আছেন এসআই উৎপল। কিন্তু তিনি চারঘাটের বিভিন্ন এলাকার মাদক স্পটগুলোতে দিনভর সময় কাটান। গত ৩১ মে এসআই উৎপল চারঘাটের সাদিপুর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে দিনদুপুরে তাণ্ডব চালিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
চারঘাটে সরেজমিনে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কথা বলেন সংশ্লিষ্ট এ প্রতিবেদক।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসআই উৎপল এবং শরিফুলের হয়রানির কারণে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। চারঘাট সদর, ট্রাফিক মোড়, পিরোজপুর, বাবুপাড়া গোপালপুর, রাওথা, ইউসুফপুর ও টাঙ্গনসহ মাদকপ্রবণ এলাকাগুলোর শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছেন।
শুধু তাই নয়। রাজশাহীসহ সারা দেশে বহুল আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী কালাম মোল্লা সিন্ডিকেটের সঙ্গেও রয়েছে এ দুই পুলিশ কর্মকর্তার নিবিড় যোগাযোগ।
বর্তমানে সামাদ এবং দোয়েলের সঙ্গে এ দুই পুলিশ কর্মকর্তার যোগাযোগ রয়েছে বলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার মানুষ জানান।
অপরদিকে অস্ত্র এবং মাদক ব্যবসার গডফাদার হিসেবে পরিচিত চারঘাটের আফজালের সঙ্গে এসআই উৎপল এবং শরিফুলের সখ্য রয়েছে। আফজালের বিরুদ্ধে বাঘা এবং চারঘাটসহ বিভিন্ন থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
আফজাল বর্তমানে একটি অস্ত্র মামলায় রাজশাহী কারাগারে বন্দি রয়েছেন। তারপরেও থেমে নেই তার অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা। এ সিন্ডিকেট বর্তমানে পরিচালনা করছেন আফজালের সহযোগীরা। আর এদের সঙ্গে আলোচিত এ দুই পুলিশ কর্মকর্তা যোগাযোগ রেখে চলেছেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
এছাড়া এসআই উৎপল এবং শরিফুল চারঘাটের মুক্তারপুরের শাওন এবং জয়পুরের মোমিনকে দিয়ে উপজেলা সদরের কলেজ গেটসহ অন্তত ১০টি এলাকায় মাদক স্পট নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে গত ৩১ মে দুপুর ৩টায় চারঘাটের সাদিপুর এলাকার মোতালেব হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালিয়েছেন এসআই উৎপল কুমার।
মোতালেব জানান, ১৪টি মোটরসাইকেলে ৩০ জন ব্যক্তি এসে তাকে আকস্মিকভাবে ধাওয়া দেয়। এ সময় তিনি প্রাণভয়ে পালিয়ে যান। এরপরে এসআই উৎপলের নেতৃত্বে আগতরা তার বাড়িতে তাণ্ডব চালান।
এ সময় তাণ্ডবকারীরা তার পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত জামাকাপড়, বিতরণের জন্য বাড়িতে রাখা সেমাই, চিনি এবং আলমারিতে রক্ষিত জমির দলিল নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় এসআই উৎপলের সঙ্গে চারঘাটের বিভিন্ন এলাকার যুবকরা অংশ নেয় বলে মোতালেব গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন।
এলাকায় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে মোতালেবের বিরোধ থাকায় এসআই উৎপল তাদের পক্ষ নিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
অপরদিকে গত ২৮ জানুয়ারি চারঘাট থানা এলাকার বাইরে বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ ভানুকর এলাকায় গরু ব্যবসায়ী আখতার হোসেনের বাড়িতে তল্লাশির নামে লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। আর এ লুটপাটে চারঘাট মডেল থানার তৎকালীন এসআই উৎপল কুমারের নেতৃত্বে এসআই শরিফুল ইসলাম, মামুনুর রশিদ ও তরিকুল ইসলাম অংশ নেন। সংবাদটি যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তোলপাড় শুরু হয়।
এ ঘটনায় তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁইয়া সদ্য বদলিকৃত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরীকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে এসআই উৎপলকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়। এর এক মাসের মাথায় এসআই উৎপলকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) পদায়ন করা হয়।
অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্যের জন্য এসআই উৎপল কুমার সরকারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তার ফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে এসআই শরিফুল ইসলাম বলেন, মাসোহারা গ্রহণের অভিযোগ সঠিক না। আমার সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতার অভিযোগটিও ভিত্তিহীন। এছাড়া মাদক এবং অস্ত্র ব্যবসায়ী কলাম ও আফজালের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই বলেও দাবি করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে চারঘাট থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, এসআই উৎপল আমার অধীনে চাকরি করেন না। তবে শরিফুলের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ ওঠে, তবে তা তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তে অভিযোগের ব্যাপারে সত্যতা পেলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ওসি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.