রাজশাহীতে বিরল প্রজাতির সাপ রেড কোরালের চিকিৎসা চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝালইশালসিরি ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ বাজারের পাশে গত সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারী) যন্ত্র দিয়ে নির্মাণাধীন একটি বাড়ির মাটি খোঁড়ার সময় নিচ থেকে বেরিয়ে আসে বেশ কয়েকটি সাপ। তখনও কারও ধারণা ছিল না এখানেই মিলবে বিরল প্রজাতির প্রাণী রেড কোরাল কুকরি সাপ।
বিশ্বের বিরলতম বিলুপ্ত প্রজাতির উদ্ধারকৃত রেড কোরাল কুকরি সাপের চিকিৎসা চলছে রাজশাহীতে। বর্তমানে সাপটির শারীরিক অবস্থা খুবই নাজুক। মাটির নিচ থেকে উদ্ধারের পর দেখা যায়, সাপটি যন্ত্রের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়েছে। এ অবস্থায় সেটিকে চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য রাজশাহীতে পাঠানো হয়।
সাপটি বর্তমানে রাজশাহীর পবা উপজেলার সাপ উদ্ধার ও সংরক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানেই রেখে চলছে সাপটির চিকিৎসা।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রধান প্রশিক্ষক রাজশাহীর বোরহান বিশ্বাস সাপটির চিকিৎসা দিচ্ছেন। তিনি জানান, এ যাবতকালে দেশের শুধু পঞ্চগড় জেলাতেই গবেষকরা মাত্র দুটি এ প্রজাতির সাপের দেখা পেয়েছেন। গত দুই মাস আগে এরকমই একটি সাপ উদ্ধার করা হয়েছিলো যেটি মারা যায়। এই সাপটির শারীরিক অবস্থাও খুব নাজুক। সাপটার পেটের নাড়িভূড়ি বেরিয়ে পাকস্থলিটাও ফুটো হয়ে গেছে। আর শীতকালে সে খাবারাও নিবে না। তবে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন সাপটিকে বাঁচানোর।
তিনি জানান, বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের বোদা এবং তেঁতুলিয়ায় এই সাপটি দেখা গেছে। এটি বাংলাদেশের সাপের তালিকায় যুক্ত হবে এবং গবেষণা হবে। এটা অবশ্যই একটা ভালো খবর। এই সাপটিকে অল্প বিষধর বলা হয়। তবে এটা থেকে যদি আমরা ভেনম সংগ্রহ করতে পারি তাহলে গবেষণা করে বুঝতে পারব এটা কতটা বিষধর।
বোরহান বিশ্বাস বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সাপটা দেখতেও যেমন সুন্দর তেমন এর জীবন প্রাণালীও চমৎকার। অন্য সাপের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এটা মাটির নিচে থাকতে পছন্দ করে। দিনের বেলায় একদমই বের হয় না। যেখান থেকে সাপটি উদ্ধার করা হয়েছে সেখানকার মানুষরা জানিয়েছেন, এটিকে দেখা যেত খুবই কম।
তিনি জানান, তিনি ১৩ বছর থেকে সাপ নিয়ে গবেষণা করছেন। পঞ্চগড় ছাড়া অন্য কোনো জেলায় এই সাপ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। এটা দেশের তালিকায় ১০৩তম সাপ হবে। বিরল প্রজাতির এই সাপ মূলত হিমালয় অববাহিকায় থাকে। পাথর বা মাটির নিচে এদের বসবাস। সাধারণত সবসময়ই তারা লুকায়িত অবস্থায় থাকতে পছন্দ করে। এর নাম রেড কোরাল কুকরি হলেও স্থানীয়ভাবে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কমলাবতী’। স্থানীয়রা সাপটিকে এই নামেই এখন ডাকছেন।
এদিকে সাপটি দেখতে রাজশাহী এসেছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান। তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সারাবিশ্বে এই সাপ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে বিশ্বে মাত্র ২২টি এ প্রজাতির সাপের দেখা পেলেন গবেষকরা। উদ্ধারকৃত সাপ কিছুটা সুস্থ হলে সেটিকে চট্টগ্রামে নিয়ে ভেনম রিসার্স সেন্টারে রাখা হবে। সেখানেই সাপটিকে নিয়ে গবেষণা হবে। তারা ভেবেছিলাম এই সাপটি বিলুপ্ত।
তবে যেহেতু দেশের পঞ্চগড়ে এই বিরল প্রজাতির সাপের দেখা মিলেছে সেহেতু বলাই যায় সেখানে এমন প্রজাতির সাপ আরও থাকতে পারে। এছাড়া এটি একটি সাইন যে, বাংলাদেশে এমন বিলুপ্ত বা বিরল প্রজাতির আরও অনেক সাপ আছে। শুধু তাদের আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এরা বিলুপ্ত হয়েছে। তাই আমাদের মনোযোগ দিতে হবে যাতে গবেষণা করে এই সাপগুলো কোথায় থাকে সেই জায়গাগুলো নষ্ট না করা হয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.