রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তপক্ষ (বিএমডিএ)’র নির্বাহী পরিচালক(ইডি)’র অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক:  রাজশাহীর ‘বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’র (বিএমডিএ) প্রধান ভবনে অভিযানের পর এবার পুরোদমে অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনিয়ম-দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক (ইডি) আব্দুর রশীদের গড়ে তোলা সম্পদের অনুসন্ধান চালানোর পাশাপাশি যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সমস্ত কাগজপত্র এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে।

খাল খনন, কর্মচারীদের লাঞ্চিত করার ঘটনায় গৃহীত পদক্ষেপ, অতিরিক্ত বেতন উত্তোলন, বিভিন্ন উন্নয়নকাজের ফটোকপিসহ দুই কর্মচারীর সার্ভিস বইয়ের ফটোকপি সংগ্রহ করেছে দুদক। পাশাপাশি খাল খননের অনিয়মের তদন্তের খোঁজ নিতে গতকাল নওগাঁ সরেজমিন তদন্তে যান দুদকের একটি দল।

এদিকে বিএমডিএ’র একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ইডি আব্দুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত থেকে সরিয়ে তাঁর স্থলে গত ১৬ অক্টোবর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে শ্যাম কিশোর রায়কে পদায়ন করা হয়। জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে পদায়ন করা হলেও গত বহস্পতিবার পর্যন্ত শ্যাম কিশোর রায়কে মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। ফলে মন্ত্রণালয়ে যোগদান করলেও তিনি বিএমডিএ’র কোনো দায়িত্ব বুঝে পাননি।

অভিযোগ উঠেছে, ভারপ্রাপ্ত ইডি’র আব্দুর রশীদের প্রত্যক্ষ প্রভাবের কারণে এ পর্যন্ত তিন বার ওই পদে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দিয়ে কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু এর আগের দু’জনকেও দায়িত্ব বুঝে দেওয়া হয়নি। ফলে এবারো আশঙ্কা দেখা দিয়েছে নতুন ইডিকে আদৌ দায়িত্ব দেওয়া হবে কিনা সে বিষয়টি নিয়ে।

বিএমডিএ সূত্র জানায়, সম্প্রতি এ সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ করা হয় দুদকে। পাশাপাশি উন্নয়নের নামে সরকারি অর্থ লোপাট, ৭৩ জন কর্মকর্তা বিরুদ্ধে বেতনের অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলনসহ নানা অভিযোগ করা হয়।

এ নিয়ে একটি অনুসন্ধানীয় খবর প্রকাশের পর গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ভবনে অভিযান চালায় দুদক রাজশাহীর একটি দল। ওইদিন জব্দ করা হয় বেশকিছু নথিপত্র। সেইসঙ্গে আরো কিছু নথিপত্র চেয়ে পাঠানো হয়। নথিপত্রগুলো হাতে পাওয়ার পরে এরই মধ্যে সেগুলো নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

বিএমডিএ’র একাধিক সূথ্র নিশ্চিত করেছে, সংস্থাটির বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম তদন্তে গত বুধবার দুদকের একটি দল নওগাঁয় অভিযান চালায়। এসময় খাল খননের নামে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা সেটি সরেজমিন অনুসন্ধান করে দুদক। এর বাইরে নির্বাহী পরিচালকের অবৈধ সম্পদ, গোদাগাড়ী জোন অফিসে কি কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, ৭৩ কর্মকর্তার অতিরিক্ত বেতন উত্তোলন, রাস্তা পাকারকরণের নামে অর্থ তোছরুপসহ সহকারী কোষাধ্যক্ষ রাকিব হোসেন ও খাবিরুদ্দিনের নিয়োগে অনিয়ম তদন্তেও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।

নওগাঁয় চলতি বছরে নওগাঁয় বিলমনসুর, চকপাকুড়িয়া ও পলাশবাড়ি খনন করা হয়। এর মধ্যে বিল মনসুর খালটির আয়তন প্রায় ৯শ বিঘা। এই খালটি খননের ফলে এলাকার কৃষকদের অনেকটা উপকার হলেও খননকাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এ নিয়েও অভিযোগ করা হয় দুদকে। এই তিনটি খালের বিপরীতে ৬টি গ্ররুপে প্রায় ৯ কোটি টাকা খরচ করা হয়। এটি করতে গিয়ে ৬টি গ্ররুপের কাজ পাওয়া ঠিকাদারদেরই পরবর্তিতে ইচ্ছেকৃতভাবে নতুন করে সাত থেকে ১৬ লাখ টাকা করে অতিরিক্ত হারে অর্থ প্রদান করা হয়। বর্ধিতকাজ দেখিয়ে এই টাকা তোছরুপ করা হয়। এভাবে আরো প্রায় এক কোটি টাকা তোছরুপ করা হয়।

ওই সূত্র আরো জানায়, বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ গত প্রায় ৫ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেন। এর মধ্যে রয়েছে রাজশাহী নগরীর উপশহরের এক নম্বর সেক্টরে একটি বাড়ি, তেরোখাদিয়া এলাকায় একটি বাড়ি ও নগরীর নাহার স্কুল এলাকায় ১০ কাঠার একটি প্লট। এর বাইরেও তাঁর কি কি সম্পদ রয়েছে সেগুলো অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক।

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অডিট আপত্তি, কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারি প্রকৌশলী ভবন নির্মাণ করেও সেখানে প্রকৌশলী না থাকা, পিপিআর অমান্য করে খÐ খÐ আকারে প্রয়োজনীয় সরঞ্জমাদি ক্রয়ের মাধ্যমে সরকারি অর্থের ক্ষতি সাধন, গোদাগাড়ীতে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার হিসেব জালিয়াতি, চলমান প্রকল্পে অনিয়ম, সরকারি পরিপত্র অমান্য করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বেতন স্কেল প্রদান ও পল্লী বিদ্যুতের অবৈধ ব্যবহার করা এমন সাতটি সুনির্দিষ্ট অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়।

দুদকের চলা চলমান অনুসন্ধান সম্পর্কে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত ইডি আব্দুর রশীদ বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘তাঁরা যেসব তথ্য চেয়েছে সেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন করে তারা অনুসন্ধান করছে বলে শুনেছি। তাঁরা তাঁদের কাজ করছেন। এখানে আমাদের কিছু বলার নাই। তবে আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হয়নি। আমার কোনো অবৈধ সম্পদও নাই।’

জানতে চাইলে বিএমডিএ’র নতুন ইডি শ্যাম কিশোর রায় বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘দায়িত্ব বুঝে পাইনি। মন্ত্রণালয় থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি এখনো। তাই রাজশাহী এসে বসে আছি।’

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক রাজশাহী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালকসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও সরকারী অর্থ লোপাটের অভিযোগের অনুসন্ধানে আমরা কাজ শুরু করেছি। অনুসন্ধান শেষে পরবর্তি কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.