রাজশাহীতে ফারাক্কা বিষয়ক আলোচনা সভা বাংলাদেশের ক্ষতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক :  রাজশাহীতে আয়োজিত ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফারাক্কা লংমার্চের গুরুত্ব’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিশিষ্ট নদী ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করতে হবে।

কারণ এটি একটি আন্তর্জাতিক অপরাধের মধ্যেই পড়ে। তারা বলেন, দীর্ঘ ৪২ বছর পার হয়ে গেলেও পানি চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি। দেশের বিভিন্ন সরকারের আমলে পানি নিয়ে নানা ধরনের চুক্তি হলেও কার্যত এর কোন ফল বাংলাদেশের মানুষ পায়নি। ফারাক্কা লংমার্চের ৪২তম বার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার দুপুরে রাজশাহী নগরীর একটি কমিউনিটি সেণ্টারে নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক প্রকৌশলী এম ইনামূল হক। প্রধান বক্তা ছিলেন জাতিসংঘ পানি প্রবাহ কনভেনশনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইউম। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সরদার আবদুর রহমান।

নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: এনামুল হকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী পিয়ারার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) রাজশাহী জেলা সভাপতি ডা. ওয়াসিম হোসেন, রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান সিদ্দিকী এবং বিশিষ্ট গবেষক ও হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী।

বক্তব্য দেন নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ, ফরিদ মামুদ হাসান, সহসভাপতি অধ্যক্ষ ড. আবু ইউসুফ সেলিম, সাইদুর রহমান সাইদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সরদার এসএম সিরাজুল করিম এবল, যুব বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান শাকিল, বিএফইউজে’র নির্বাহী সদস্য সাদিকুল ইসলাম স্বপন, মহিলা সম্পাদক ডা. তাজমা চৌধুরী, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক গোলাম নবী রনি প্রমুখ।

উপস্থিত ছিলেন নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের উপদেষ্টা হারুন অর রশিদ, রাবির আরবী বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদ, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মুহা: আব্দুল আউয়াল, রাজশাহী সচেতন নাগরিক সমাজের সভাপতি মো: হাবিবুর রহমান, নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন অর রশিদ মামুন, সাহেববাজার বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অশোক কুমার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।

সভায় প্রধান অতিথি ও প্রধান বক্তা নদী বাঁচানোর জন্য আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে বলেন, দীর্ঘ ৪২ বছর পার হয়ে গেলেও পানি চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি। দেশের বিভিন্ন সরকারের আমলে পানি নিয়ে নানা ধরনের চুক্তি হলেও কার্যত এর কোন ফল বাংলাদেশের মানুষ পায়নি।

১৯৭৬ সালে ১৬ মে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী পদ্মা নদীকে বাঁচানোর জন্য রাজশাহী থেকে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ শুরু করেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই লংমার্চ করার জন্য সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদান করেছিলেন। এছাড়া জাতিসংঘে তিনি পানির ন্যায্য হিস্যার দাবী জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। নদীর সাথে রয়েছে বাঙালীর নিবিড় সম্পর্ক। প্রবাহমান পদ্মা নদী আজ বালুচরে পরিণত হয়েছে। এই নদীর উপর নির্ভর করে চলে বেশীর ভাগ মানুষের জীবন জীবিকা। আজ নদী বিশেষ করে পদ্মা নদী শুকিয়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনান্য অঞ্চল ক্ষতির মুখে পড়েছে।

পদ্মা নদীতে স্রোত না থাকায় লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে সুন্দরবন নষ্ট করছে। উত্তারাঞ্চলের কৃষিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে। ফলসহ অন্যান্য কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেমে গেছে। নদী এলাকার জনগণের নানা ধরনের রোগ হচ্ছে।

তারা আরো বলেন, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হচ্ছে আন্তর্জাতিক আদালতে দোষী দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। সেইসাথে রাজনৈতিক দলসহ জনগণকে একত্রিতভাবে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া দেশ পরিচালনায় যারা আছেন এবং আগামীতে যারা ক্ষমতায় বসবেন তাদের দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান তারা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.