রাজশাহীতে পত্রিকা অফিসে মাদক কারবারীদের হামলা-লুটপাট সম্পাদককে হত্যার হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশ করার জের ধরে রাজশাহী থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলার বিবেক পত্রিকা ও রাজশাহীর সময় নিউজ পোর্টাল কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে এক দল মাদক কারবারী ও সন্ত্রাসীরা। তারা প্রত্যেকেই সরকারী দলের পরিচয় বহন করে। হামলার পর সন্ত্রাসীরা পারভেজ নামের একজন রিপোর্টারকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাকে প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে নিয়ে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি ও মারধর করে ছেড়ে দেয়।
শুক্রবার (৫ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর কাজলা অক্ট্রয়মোড়ে অবস্থিত পত্রিকাটির কার্যালয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় অর্ধশত সশস্ত্র সন্ত্রাসী সাংবাদিক ও স্টাফদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। হামলাকারীরা অফিসের আসবারপত্র ভাংচুর ও অফিসে অবস্থানরত নারী সাংবাদিকসহ চারজন সাংবাদিককে মারধরসহ অফিসের টেবিলের ড্রয়ারে থাকা সাংবাদিক, কর্মচারীদের এপ্রিল মাসের বেতন-ভাতা ও অফিস খরচের ৯৭ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। তারা সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে এবং ডিভাইস এবং ১টি হার্ডডিক্সও নিয়ে যায় তারা। এছাড়াও দুটি কম্পিউটার, ১টি ডিএসএলআর ক্যামেরা ভাংচুর করে।
সাপ্তাহিক বাংলার বিবেক ও রাজশাহীর সময়ের স্টাফ রিপোর্টার ইব্রাহীম হোসেন সম্রাট জানান, ঘটনার দিন বিকেল থেকেই মাদক কারবারীরা অফিসের অদুরে আনাগুনা করতে দেখা যায়। পরে সন্ধ্যার পর তারা হঠাৎ করে অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী অফিসে বাইরে অবস্থান করে এবং ৬/৭জন অফিসে প্রবেশ করে প্রথমেই সিসি ক্যামেরার ডিভাইস খুলে নেয়। এসময় আমি বাধা দিতে চাইলে আমাকে এবং সাংবাদিক দুর্জয়কে চর থাপ্পর মারতে থাকে এবং মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে ক্যামেরা এবং কম্পিউটারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙ্গচুর চালায়।
পত্রিকাটির নারী সাংবাদিক জুলেখা বলেন, আমি অফিসে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হঠাৎ কিছু সন্ত্রাসী অফিসে প্রবেশ করেই আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে এবং আমার সাথে অশ্লিল আচরণ করে এবং গত ৩ ও ৪ এপ্রিল প্রকাশিত মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদটি কেন প্রকাশ হয়েছে তার কৈফিয়ত জানতে চান। তারা বলতে থাকেন, ‘তোরা আমাদের বিরুদ্ধে নিউজ করেছিস। পলাশ (মাদক কারবারি) আমাদেও লোক। এই সমস্ত কথা বলে, অফিসের আসবাবপত্র ভাঙ্গচুর চালায়। যাওয়ার সময় তারা বলে এর জন্য ক্ষমা না চাইলে পত্রিকা অফিস জ্বালিয়ে দেব ও সম্পাদককে গুলি করে মেরে ফেলব।’
পত্রিকাটির ফটো সাংবাদিক পারভেজ ইসলাম বলেন, তারা প্রায় ১৫ মিনিট অফিসে অবস্থান করে হুমকি দিতে থাকে। যাওয়ার সময় তারা আমাকের কিল-ঘুসি মারতে মারতে জোর করে একটি অটো রিক্সায় তুলে নিয়ে যায় এবং প্রায় দুই কিলোমিটার দুরে গিয়ে আমাকে হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেয়।
মাদক কারবারীদের আকস্মিক হামলায় অফিসে অবস্থানরত সাংবাদিকরা ও আশপাশের লোকজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। এসময় তাদের হামলায় চারজন সাংবাদিক আহত হন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। যাওয়ার সময় হামলাকারীরা সাপ্তাহিক বাংলার বিবেক পত্রিকার প্রকাশক সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা জামান, পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক খোলা কাগজ ও দৈনিক বার্তার স্টাফ রিপোর্টার মাসুদ রানা রাব্বানীকে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। ওই ঘটনায় হামলাকারী মাদক কারবারীদের সহযোগী আসাদুল হক দুখুকে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ আটক করেছে। পরে রাত তিনটার দিকে মতিহার থানায় হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় মতিহার থানায় সাপ্তাহিক বাংলার বিবেকের স্টাফ রিপোর্টার মাসুদ আলী পুলক বাদি হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ১০/১৫জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং-৪, তাং-০৬-০৫-২০২৩।
এ ব্যাপারে নগরীর মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুহুল আমীন বলেন, মাদক কারবারীদের পত্রিকা অফিসে হামলা, ভাঙ্গচুর, লুটপাট ও অপহরণ চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এ ঘটনায় প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকি আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিবাদ: এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়েছেন রাজশাহীর সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। পৃথক বিবৃতিতে রাজশাহী মহানগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন, দফতর সম্পাদক ইফতেখার আলম বিশাল, অর্থ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, রাজশাহী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি এসএম আব্দুল মুগনী নীরো প্রমুখ এই প্রতিবাদ জানান। বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, পত্রিকা কার্যালয়ে ও সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের কাপুরুষোচিত হামলা স্বাধীন গণমাধ্যম ও স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপের শামিল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.