রাজশাহীতে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ: মালিক জানেন না, বাড়ি নিলামে বিক্রি!

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের বিরুদ্ধে একটি বহুল মূল্যবান পারিবারিক সম্পত্তি গোপনে ও জালিয়াতির মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে নিলামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
জমির প্রকৃত মালিক মোঃ আব্দুল মাজেদ জানান, তিনি ও তার পরিবার সম্পত্তি নিলামের বিষয়ে অবগত ছিলেন না, এমনকি তাদের কোনো অনুমতি বা নোটিশও দেওয়া হয়নি।
গতকাল বুধবার (১১ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে মাজেদ অভিযোগ করেন, তার পিতা ১৯৮৪ সালে মৃত্যুবরণ করার আগেই “কাবিল উদ্দিন মিয়া অ্যান্ড সন্স” নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ২ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেও ব্যাংক থেকে বিভিন্ন নামে মোট চার লক্ষ পঁচিশ হাজার টাকার ঋণ নেন, যার মধ্যে তিনি বিভিন্ন সময় মোট ৬ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন এবং সুদের বাকি অংশ মওকুফের জন্য আবেদন করেন।
মাজেদের দাবি, দীর্ঘ ২৮ বছর পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে কোনো দাবি জানায়নি কিংবা নোটিশ পাঠায়নি। কিন্তু হঠাৎ ২০২০ সালে মহামারি কোভিড-১৯ এর সময় তার পারিবারিক জমি, যার বাজারমূল্য আনুমানিক ১২ কোটি টাকা, গোপনে মাত্র ২ কোটি ৪০ লাখ টাকায় টেন্ডার করে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, জমির মালিকানা প্রমাণিত থাকলেও ব্যাংক কর্মকর্তারা জমি দখলের জন্য একটি ভূমিদস্যু চক্রের সহায়তা নেয় এবং প্রকৃত ওয়ারিশদের না জানিয়ে মিউটেশন করে নেয়। এ বিষয়ে চলমান মামলা রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হলো রাজশাহীর সহকারী জজ আদালতে বাটোয়ারা মামলা (মামলা নম্বর ৬৮/২০১৭ ও ২৬৫/২০২৩) এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল (নম্বর ৪২৩/২০২৫)
মাজেদ অভিযোগ করেন, জমি দখলের উদ্দেশ্যে মোঃ মাসুম সরকার, মোঃ ফারুক, মোঃ হেলাল, রাঙ্গাপরী ডেভেলপার লিমিটেডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একাধিকবার সন্ত্রাসী দিয়ে তার বাসভবনে হুমকি দিয়ে গেছে। এমনকি কিস্তির টাকা জমা দিতে গেলে ব্যাংকের ম্যানেজার তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান, কারণ “ভূমিদস্যুদের নিষেধ রয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমার জমি নিয়ে মামলা চলমান থাকার পরেও গোপনে নিলাম ও জাল দলিল তৈরি করা হয়েছে। যদি হঠাৎ আমার মৃত্যু হয়, তার দায় থাকবে ভূমিদস্যু চক্র ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের ওপর।”
এই ঘটনায় তিনি, পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, সাংবাদিক সমাজ, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এই অনিয়ম তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান।
এ বিষয়ে রাঙ্গাপরী ডেভেলপার লিমিটেডের পরিচালক মো. মাসুম সরকার বলেন, “মাজেদ সাহেব উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল করেছেন। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তাই আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছি। আমি ন্যাশনাল ব্যাংকের নিলামে নিয়ম অনুযায়ী অংশগ্রহণ করি এবং সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে জমিটি পাই। বর্তমানে ওই জমি আমার নামে নামজারি হয়েছে।”
অন্যদিকে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড রাজশাহী সাহেব বাজার শাখার ম্যানেজার অমল কুমার নন্দ বলেন, “বিষয়টি অনেক আগের, আমি সদ্য এই শাখায় যোগদান করেছি। আমার জানা মতে, সবকিছু আদালতের নির্দেশনা মেনেই হয়েছে। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই।”
তফসিল বর্ণিত জমি: জেলা: রাজশাহী থানা: বোয়ালিয়া মৌজা: বোয়ালিয়া জে.এল নম্বর: ৯ আর.এস খতিয়ান নম্বর: ৩৮৭ আর.এস দাগ নম্বর: ৪৫৩৭ রকম: বাড়ি পরিমাণ: ০.২৬৯ একর
অভিযোগকারী মাজেদের দাবি, “এই বাড়ি ভাঙার জন্য দালালচক্র ইতোমধ্যে সন্ত্রাসীদের পাঠিয়ে হুমকি দিয়েছে। আমার ও পরিবারের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।” এ বিষয়ে তিনি প্রশাসন ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.