রাজশাহীতে নেই বৃষ্টি, বাড়ছে তাপমাত্রা : মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীতে বৃষ্টি নেই। সেই সাথে বাড়ছে তাপমাত্রা। এতে করে রাজশাহীবাসীর অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে।
আজ বুধবার (২১ এপ্রিল) রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকালে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ ও সন্ধ্যায় ৩৬ শতাংশ। 
আর এর মধ্যে দিয়ে রাজশাহীতে চলমান মাঝারি তাপপ্রবাহ তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে।
ফলে আগুন ঝরা আবহাওয়ায় হাঁসফাঁস করছে রাজশাহীর মানুষ। স্বস্তিতে নেই পশু-পাখিরাও। তীব্র গরম থেকে মুক্তির কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না! কাঠফাঁটা গরমে সবার যেন নাভিশ্বাস উঠেছে।
এতে অস্থির হয়ে পড়ছে জনজীবন, বিশেষ করে শহুরে মানুষরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। বৃষ্টিবিহীন আবহাওয়ায় ঘরের চেয়ে বাহিরের অবস্থা আরও বেশি ভয়াবহ।
প্রতিদিনই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা। একটু বৃষ্টির জন্য চারিদিকে হাহাকার পড়ে গেছে। তাপমাত্রার দাপটে করোনার মধ্যে বাড়তি চাপ হিসেবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়াসহ গরম জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষজনের ভর্তি হওয়া সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
‘ত্রাতা’ হয়ে কখন বৃষ্টি ঝরবে সেই অপেক্ষার প্রহর গুণছে তীব্র গরমে নাস্তানাবুদ হওয়া পদ্মাপাড়ের মানুষগুলো।বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় মানুষ মাত্রাতিরিক্ত ঘামছেন।
তাই বাইরে বের হলেই রোজাদার কাহিল হয়ে পড়ছেন। গরমের কারণে বিভিন্ন স্থানে গাছের ছায়ায় অনেকেই বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আর পথচারীরা ইফতারের আগে ভিড় করছেন ফুটপাতের শরবত এবং ডাব বিক্রেতাদের কাছে।
নগরীর  বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এবার রমজানের শুরু থেকেই রাজশাহীতে দাবদাহ বইছে। গরমের তীব্রতায় আমাদের হাঁসফাঁস অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নগরীর বুলনপুর এলাকার রাসেল জানান, বৃষ্টি নেই। এতে করে গরম বেড়ে গেছে। পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিন যাপন করতে হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজশাহী মহানগরীর পূর্ব দিকে পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘা উপজেলার কিছু অংশে গত ১১ এপ্রিল ৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ৯ এপ্রিল সেদিকে দুই মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী শহরেরই পশ্চিম প্রান্ত থেকে গোদাগাড়ী, তানোর এবং মোহনপুর, পবা, দুর্গাপুর এবং বাগমারায় এখন পর্যন্ত বৃষ্টির খবর পাওয়া যায়নি। ফলে রাজশাহীতে তাপদাহ কমছে না।
জানা গেছে, সাধারণত দিনের তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ভেতর থাকলে তাকে মাঝারি তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। আর ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে বলে মৃদু তাপদাহ।
আর ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র তাপদাহ হিসেবে ধরা হয়। এর ওপরে উঠলে অতি উচ্চ তাপপ্রবাহ বলা হয় বলে জানিয়েছে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ ভারপ্রাপ্ত আবহাওয়া কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এর আগে রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল গত ১৪ এপ্রিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর গতকাল মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে এটিই চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আর গতকাল মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানান এ আবহাওয়া কর্মকর্তা।
এদিকে রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য মতে, ২০০০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর তাপমাত্রা বাড়লেও এখন পর্যন্ত রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আর ৪২ ডিগ্রি অতিক্রম করেনি।
১৯৪৯ সাল থেকে দেশে তাপমাত্রার রেকর্ড শুরু হয়। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলেও পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে আবহাওয়া অধিদফতরের ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের দুই থেকে এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। আর পটুয়াখালী অঞ্চলসহ রাজশাহী এবং খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.