রাজশাহীতে টিসিবির সেবা আধুনিকায়নের দাবী ক্রেতা সাধারণের

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ সময় ধরে চলমান করোনা পরিস্থিতি সেবার আধুনিকায়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা উপলধ্বি করা যাচ্ছে। একারণে করোনার এ ঢেউয়ের সঙ্গে টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রযুক্তির ঢেউয়ে পাল উড়িয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। করোনার সংক্রমণ রোধ ও সেবা সহজিকরণে আধুনিক ব্যবস্থাপনার পরিসরও বিস্তৃত হয়েছে।
গতানুগতিক ধারায় আটকে থাকা সরকারি সেবাতেও লাগছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। তবে কিছু ক্ষেত্রে এখনো জনগণের কাক্সিক্ষত সেবার প্রতিফলন অধরাই রয়ে গেছে।
সম্প্রতি রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ আবার বেড়েছে। করোনাকালে মাঠ পর্যায়ে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি)’র পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাঙ্ক্ষিত এ সেবায় এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে নি বলে মনে করছেন ক্রেতারা। এমন অবস্থায় টিসিবির সেবা সহজিকরণের মধ্যে দিয়ে আধুনিকায়নের দাবি জানাচ্ছেন ক্রেতারা। একইসঙ্গে করোনার সুরক্ষায় ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আর টিবিবির কর্মকর্তা বলছেন- স্বচ্ছতা বজায় রেখে সেবা সহজিকরণই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে তারা আধুনিকায়নে কাজ করে যাচ্ছেন।
নগরীর টিসিবির বুথগুলো ঘুরে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সময়েও তিব্র রোদ ও গরমের মধ্যে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে নারী ও বৃদ্ধদের। অনেক সময় বৃদ্ধরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থও হয়ে যান। এক্ষেত্রে কিছু কিছু সময় টিসিবির পণ্য যারা বিক্রি করেন এবং যারা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন তাদের বিবেকে নাড়া দিলে কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধ ব্যক্তি দ্রুত পণ্য কিনতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি বুথের পুরো পরিবেশের শৃঙ্খলা নষ্ট করে ফেলে। বর্তমান করোনাকালে বুধগুলোতে স্বাস্থ্যবিধিও নিশ্চিত হচ্ছে না। অধিকাংশ ক্রেতার কাছে মাস্ক থাকলেও গরমের কারণে সঠিক নিয়মে অনেকেই ব্যবহার করেন না। সামাজিক দূরত্বেরও কোনো বালাই থাকে না। এতে সংক্রমণ ঝুঁকিও বাড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ জুন) নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় পণ্য নিতে এসেছিলেন আফরোজা বেগম। তিনি জানান, প্রায় প্রতি সপ্তাহে তিনি টিসিবির পণ্য নিতে আসেন। অধিকাংশ সময়ই বুথের সামনে দীর্ঘ লাইন থাকে। কখনো প্যাকেজ নিতে হয়। আবার কখনো চাহিদানুযায়ীও দেয়। অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি টিসিবির পণ্য কিনেছেন। আবার ঘুরেও গেছেন। করোনার মধ্যে তিনি মাস্ক পরেছেন। কিন্তু সামজিক দূরত্ব নিশ্চিত হয় না। ফাঁকা থাকলে দেখা যায় কেউ এসে ঠুকে যাচ্ছে। তাই যতক্ষণ পুলিশ থাকে ততক্ষণ লাইন কিছুটা ফাঁকা থাকে।
এমনিই অভিজ্ঞতা কাকলি বেগমেরও। তিনি জানান, এখানে দাম কম পাওয়া যায় তাই তারা এখানে আসেন। এখানে পণ্য নিতে যে বেলায় আসেন সে বেলায় আর অন্য কোনো কাজ করা সম্ভব হয় না। তিনি একটি অফিসে কাজ করেন। মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে পণ্য নিতে আসেন। রাস্তার উপর রোদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হয়। কিন্তু গরিবের তো কষ্ট না করলে পেটে ভাত জুটবে না। এমন অবস্থায় টিসিবির পণ্য বিক্রির এ কার্যক্রমকে সহজতর করার দাবি জানান তারা।
এদিকে, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এটার ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মো. সাইফুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, টিসিবির সেবা ব্যবস্থাপনাকে সহজতর করা বর্তমান সময়ের দাবি। এই প্রক্রিয়াটা আরো সহজ করা যায়। যেমন: টিসিবির যারা পণ্য বিক্রি করছেন তারা ক্রেতাদের চাহিদা জানেন এবং তারা একজন গ্রাহকের কাছে একটি লিমিট পর্যন্ত পণ্য বিক্রি করেন। সেহেতু এই গরমের মধ্যে আবার দীর্ঘ লাইনে যদি এই পণ্যটা তারা আগেই মেপে রাখেন তাহলে সময় বাঁচবে। বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী, নারী, শিশু ও পুরুষেরদের জন্য আলাদা লাইনও করা যায়। বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কেননা তারাও সমাজের একটি অংশ। তারা যেন কষ্ট না পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। টিসিবির পণ্য সেবার দিকে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ব্যক্তিরা চেয়ে থাকেন। অনেকে সামাজিক দিক বিবেচনায় লাইন ধরতেও পারেন না। সুতরাং এটিকে অনলাইনভিত্তিকও করা যায়। এছাড়া জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে কার্ড সিস্টেমেও করা যায়।
এ বিষয়ে টিসিবির আঞ্চলিক কর্মকর্তা রবিউল মোর্শেদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, টিসিবির পণ্য সেবার আধুনিকায়ন হচ্ছে না-এমনটা নয়। এই কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এরমধ্যে দিয়ে আধুনিকায়ণ হচ্ছে। যেমন: আগে টিসিবির পণ্য কিছু দোকানের মাধ্যমে বিক্রি হতো। এতে কিছুক্ষেত্রে পণ্য বাইরেও চলে যেত। এখন যে যায় না-এমনটা না। তবে সেটা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরো জানান, টিসিবির পণ্য এখন ট্রাকে করে বিক্রি করায় অনেকটাই স্বচ্ছতা এসেছে। জনসম্মুখে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। আর পণ্য আগে থেকে মেপে নিয়ে বিক্রি করতে গেলে জায়গার প্রয়োজন, অতিরিক্ত জনবল প্রয়োজন। আবার ওজন নিয়েও পরে প্রশ্ন উঠতে পারে। আর এখন ক্রেতাদের চোখের সামনে পণ্য মেপে দেয়া হচ্ছে। আর নারী ও পুরুষের জন্য লাইন আছে। বৃদ্ধরাও পুলিশের সহায়তায় আগে পণ্য নিতে পারে।
তবে অনেক সময় দেখা যায় একজনকে দিলে সবাই অসুস্থ সেজে যায়। আবার একশ্রেণির লোক আছে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পুলিশের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা আসলেই চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরো জানান, তবে এই সেবাটাকে অনলাইনভিত্তিক করা নিয়ে তারা কাজ করছেন। ঢাকাতে এরই মধ্যে চালু হয়েছে। রাজশাহীতে চালু হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে। অনলাইনে টিসিবির পণ্য কিনতে ক্রেতারা বাড়িতে বসেই পণ্য পাবেন। তবে সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য হবে। এছাড়া এসেবা কার্যক্রমকে স্বচ্ছতার সঙ্গে সহজতর করতে তারা ভাবছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো: মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.