নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজশাহী নগরীতে টিসিবি পণ্য বিতরণকে কেন্দ্র করে চলছে অনিয়ম, প্রভাব খাটানো ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্ধারিত ডিলারের মাধ্যমে আলাদাভাবে পণ্য বিতরণের কথা থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ১৮ ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের পণ্য একই জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে সাধারণ ভোক্তারা যেমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তেমনি অভিযোগ উঠেছে পণ্য পাচার ও কৃত্রিম সংকট তৈরির।
সরেজমিনে গত শনিবার (২৩ আগস্ট) নগরীর আসাম কলোনি বৌবাজার এলাকায় দেখা যায়, সারওয়ার এন্টারপ্রাইজ ও আবুল কালাম আজাদ এন্টারপ্রাইজ নামে দুটি ডিলারশিপ রয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ শুধু একজন ব্যবসায়ী নন, তিনি শাহমখদুম থানা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদকও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিতরণ ব্যবস্থার ওপর প্রভাব বিস্তার করেছেন।
তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি সরাসরি বিতরণ কার্যক্রমে যুক্ত নন। পুলিশের নজরদারি বেড়ে গেলে তিনি উত্তর কোরিয়া বসবাস শুরু করেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো—তিনি না থাকলেও তার লাইসেন্স ব্যবহার করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টিসিবির পণ্য চালাচ্ছেন রবের মোড় এলাকার নুরুজ্জামান তুহিন নামের এক ব্যক্তি।
তুহিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, একটি ওয়ার্ডের পণ্য অন্য ওয়ার্ডে এনে এক জায়গায় বিতরণের মাধ্যমে দীর্ঘ লাইনের অজুহাত তৈরি করা হচ্ছে। এতে অসহায় ভোক্তারা ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অনেক সময় খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। ফলে “চাহিদার চাপ” দেখিয়ে সহজেই পণ্য পাচারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, এটি আসলে একটি সিন্ডিকেটের কাজ, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও কিছু ব্যবসায়ী মিলেমিশে সাধারণ মানুষের প্রাপ্য সুবিধা থেকে তাদের বঞ্চিত করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে নুরুজ্জামান তুহিন বলেন, “১৯ নম্বর ওয়ার্ড সচিব রফিকুল ইসলাম মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন দুটি ওয়ার্ডের পণ্য এক জায়গায় দেওয়ার জন্য।” তবে তিনি একইসঙ্গে স্বীকার করেন, দোকান ভাড়ার খরচ সামলাতেই এক জায়গায় বিতরণ করা হচ্ছে।
কিন্তু ১৯ নম্বর ওয়ার্ড সচিব রফিকুল ইসলাম এ অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে বলেন, “আমি কোনো ধরনের অনুমতি দেইনি। তারা যা করছে, তা তাদের নিজেদের উদ্যোগে।”
পরক্ষণে বলেন, ১৯ নং ওয়ার্ডে কোনো দোকান বা খালি ঘর না থাকার কারণে তিনি এমনটি করতে পারেন।
এদিকে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন (টিসিবি)-এর সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান বিটিসি নিউজকে জানান, “প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য নির্ধারিত পণ্য অবশ্যই সেই ওয়ার্ডেই বিতরণ করতে হবে। একটি ওয়ার্ডের পণ্য অন্য ওয়ার্ডে দেওয়া বা একই দোকানে সরবরাহের কোনো নিয়ম নেই। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন তুলেছেন—যদি সচিব অনুমতি না দেন, তবে একজন সাধারণ ব্যক্তি কীভাবে ডিলারের লাইসেন্স ব্যবহার করে টিসিবির মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পণ্য বিতরণের দায়িত্ব নিতে পারেন? প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব কেন?
তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয়ের জোরে দীর্ঘদিন ধরে টিসিবির পণ্য বিতরণকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত সুবিধাভোগী বঞ্চিত হচ্ছেন, আর লাভবান হচ্ছে একটি গোষ্ঠী।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.