নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে দ্বিতীয় দফায় মানববন্ধন করেছে রাজশাহী ঠিকাদার সমিতি।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন শেষে ভুক্তভোগী ঠিকাদাররা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি স্মারকলিপিও প্রদান করেন।
এর আগে গত ৩ সেপ্টেম্বর একই দাবিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের সামনেও মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছিল। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাজ বণ্টনে পক্ষপাতিত্ব করছেন, গোপনে দরপত্রের রেট ফাঁস করে ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাজ দিচ্ছেন এবং বিলের অর্থ ছাড়ে বাধা দিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায় করছেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। তিনি অফিসে পোষা কুকুর নিয়ে প্রবেশ করেন, যা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতের বেলায় বাসভবনে ডেকে নিয়ে অতিরিক্ত কাজ করান কর্মচারীদের দিয়ে। অভিযোগ আরও উঠে আসে, প্রকৌশলী হারুন তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কামাল হোসেনের প্রতিষ্ঠান মেসার্স মনির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেডকে এককভাবে ১১ কোটি টাকার দশটি প্রকল্পের কাজ দিয়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, এসব কাজের অনেক অংশ এখনো অসমাপ্ত রয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, হারুন-অর-রশিদ ঠিকাদারদের বিল আটকে রেখে এক শতাংশ ‘উৎকোচ’ দাবি করেন—যার কারণে তিনি ‘মিস্টার ওয়ান পারসেন্ট’ হিসেবে কুখ্যাত হয়ে উঠেছেন। এছাড়া জামানতের টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব করে ইচ্ছাকৃত হয়রানি করার অভিযোগও ওঠে।
অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ সরাসরি অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, “আমি নিয়মিত অফিস করি এবং সরকারি বিধি মোতাবেক টেন্ডার প্রক্রিয়া পরিচালনা করি। কিছু ঠিকাদার আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ষড়যন্ত্র করছেন, কারণ আমি তিন কোটি টাকা ওভার পেমেন্টের একটি অনিয়ম ধরিয়ে দিয়েছিলাম।”
তিনি দাবি করেন, মানববন্ধনের পেছনে আছেন ‘সারা ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং তার ঘনিষ্ঠ মহল। হারুন বলেন, “২০২০-২১ অর্থবছরের পিইডিপি-৪ প্রকল্পে সারা ইন্টারন্যাশনাল প্রায় ১৫ কোটি টাকার কাজ পেয়েও সময়মতো শুরু করেনি। সেই প্রকল্পের কাজ আজও অসম্পূর্ণ। কাজের গাফিলতির জন্য আমি তাদের ৬ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে সতর্কীকরণ নোটিশ দিয়েছি। এরপরই তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নামে।”
হারুন জানান, ওই ঠিকাদার ও তার প্রতিনিধির বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ উঠেছে এবং প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি বাতিলের প্রক্রিয়াও চলমান। তিনি বলেন, “মানববন্ধনে যাদের দেখা যাচ্ছে, তাদের অনেকেই প্রকৃতপক্ষে তালিকাভুক্ত ঠিকাদার নন। এটি একটি সংগঠিত অপপ্রচারের অংশ।”
বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের বিভিন্ন কাজ নিয়ে রাজশাহীতে যে উত্তেজনা ও দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, তা শুধুই ব্যক্তি বিরোধের চেয়ে বড়—এটি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। আন্দোলনকারীরা যেমন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন, তেমনি প্রকৌশলী হারুন নিজেও তার পাল্টা ব্যাখ্যায় কিছু কাগজপত্র ও অতীত প্রকল্পের ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন।
এদিকে বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, যা বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি ইফতেখার আলম (বিশাল) / রাজশাহী। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.