নিজস্বপ্রতিবেদক: ছয় ঋতুর দেশ আমাদের দেশ।যদিও এখন সেই আগের মত একেকটি ঋতুর একেক রূপ বিলুপ্ত প্রায়। তথাপিও এই শীতের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে।
রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট, পুঠিয়া,মোহনপুর উপজেলায় শুরু হয়েছে আগাম মিষ্টি খেজুর রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। গৌরব আর ঐতিহ্যের প্রতীক মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ। গ্রামীণ জীবনের প্রাত্যহিক উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে খেজুর গাছকে ঘিরে। শীত এগিয়ে আসছে। অযত্ন ও অবহেলায় বেড়ে উঠা খেজুর গাছের কদরও বাড়ে শীত এলেই।
খেজুর গাছ সুমিষ্ট রস দেয়। রস থেকে তৈরি হয় গুড় ও পাটারি। যার সাদ ও ঘ্রান আলাদা। পুরো শীত মৌসুমে চলে পিঠা-পুলি আর পায়েস খাওয়ার পালা।
বাঘা উপজেলা কৃষি অফিস ও বিশেষ তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার দুটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার কৃষি পরিবার রয়েছে। দুই হাজার খেজুরের বাগান রয়েছে। সড়ক পথ, রেল লাইনের ধার, পতিত জমি, জমির আইল ও বাড়ির আঙ্গিনায় রয়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক খেজুর গাছ। একজন ব্যক্তি প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫৫টি খেজুর গাছের রস আহরন করতে পারে। এ রকম আড়াই হাজার ব্যক্তি প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মৌসুমী ভিত্তিক আড়াই হাজার পরিবার খেজুর গাছের উপর নির্ভরশীল। একজন গাছি এক মৌসুমে অর্থাৎ ১২০ দিনে একটি গাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ কেজি গুড় পেয়ে থাকেন। খেজুর গাছ ফসলের কোন ক্ষতি করে না। এ গাছের জন্য বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না। ঝোপ-জঙ্গলে কোন যত্ন ছাড়াই বড় গয়ে ওঠে।
শুধুমাত্র মৌসুম এলেই নিয়মিত গাছ পরিস্কার করে রস সংগ্রহ করা হয়। রস, গুড়, পাটারি ছাড়াও খেজুর গাছের পাতা দিয়ে মাদুর তৈরি ও জ্বালনি হিসেবে ব্যবহার হয়। পরিকল্পিত ভাবে খেজুর গাছ বৃদ্ধি করা হলে দেশের গুড় পাটারীর চাহিদা মেটানোর পর বিদেশেও রপ্তানি করা হলে অর্থ উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে।
বাঘার পদ্মার চকরাজাপুর চরের গাছি আবুল হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, চর এলাকায় তেমন কোন খেজুর গাছ নেই। শীত মৌসুমে আমরা আড়ানী, বাঘা, মনিগ্রাম, গড়গড়ি, পাকুড়িয়, বাউসা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এসে তিন থেকে চার মাসের জন্য খেজুর গাছ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় চুক্তি নিয়ে রস সংগ্রহ করি।
এগুলো গুড় তৈরি করে হাট বাজারে বিক্রি করি। এবার ১২০টি গাছ চুক্তি নিয়েছি। এ গাছগুলো আমরা দুইজনে রস সংগ্রহ করব। সংসারে ছয় সদস্যের পরিবার। এর উপর তিন থেকে চার মাস ভাল ভাবে চলবে। অন্য সময়ে অন্যের জমিতে কাজ করি। কাজ না থাকলে শহরে রিসকা চালিয়ে সংসার চালায়।
আড়ানী হামিদকুড়া গ্রামের গৃহকর্তী কাজলী বেওয়ার সাথে কথা হলে তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আমার চার কন্যা ও দুই ছেলে। সবাইকে বিয়ে দিয়েছি। শীত এলেই জামাই-কন্য, নাতী-নাতনী, ছেলেদের শশুর-শাশুড়ী ও আত্মীয়দের নিয়ে দুই/একবার উৎসবের আয়োজন করি। এ প্রথাটা আমার শশুর-শাশুরীর আমল থেকে চলে আসছে। তাই আমিও করি। নিজের প্রায় ১৫ থেকে ২০টার মতো খেজুর গাছ রয়েছে। এ গাছ থেকে নিজের বাড়িতে খাওয়া হয়। সংসারে কিছু কাজে লাগে।
বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, শুধু সরকারি ভাবেই না, আমরা কৃষকদের মাঝে খেজুর গাছ লাগানো জন্য পরামর্শ দিচ্ছি। যা কৃষকদের মাঝে রস ও গুড়ের চাহিদা মিটাবে। এছাড়া আখের পাতা ও গমের কোড়া সংগ্রহ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি যেন, গুড় তৈরিতে সহজ হয়।
এছাড়া এ মৌসুমে রাস্তার ধারে খেজুর গাছ রোপন করা হয়েছে। কৃষকরাও নিজ নিজ পতিত জমিতে গাছ লাগাই তাহলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে ব্যাপক অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.