রাজশাহীতে কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কৃষি আদালত প্রতিষ্ঠার দাবী : বাদশা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, এ দেশের কৃষকরা এখনও বঞ্চিত। তারা কষ্ট করে ফসল ফলান, কিন’ দাম পান না। রয়েছে ভূমিসহ নানান সমস্যা। তাই কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশে কৃষি আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

জাতীয় কৃষক সমিতি ও খেতমজুর ইউনিয়নের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে নাটোর শহরে কানাইখালী পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। স্বচ্ছতার মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে আমন ধান ক্রয় এবং পলস্নী বিদ্যুৎ সমিতির অনিয়মের প্রতিবাদসহ ১০ দফা দাবিতে জাতীয় কৃষক সমিতি ও বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ইউনিয়ন এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ফজলে হোসেন বাদশা।

তিনি বলেন, সংসদে কৃষকদের পক্ষে আমি সবসময় কথা বলেছি। দেখেছি, কৃষকরা অনেক সময় প্রতারিত হন। এছাড়াও তারা আইনি সুবিধা পেতে নানানভাবে হয়রানির শিকার হন।

তাই আমি দেশে কৃষি আদালত চালুর জন্য সংসদে একাধিকবার দাবি উত্থাপন করেছি। দুইবার আলোচনার পর তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী সেটি নীতিগতভাবে গ্রহণ করেছিলেন। কিন’ সে সময় সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় সেটির আর বাসত্মবায়ন হয়নি। আমি আশাবাদী, সরকার এই আইন বাসত্মবায়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

সমাবেশে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতেরও দাবি জানান ফজলে হোসেন বাদশা। এছাড়া সব কৃষকের কৃষি বীমার নিশ্চয়তা এবং ক্ষেতমজুর দের ১০০ দিনের কর্মসংস’ানের ব্যবস্থা করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বলেন, কৃষকরাই বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন’ দুঃখজনক হলেও সত্য কৃষকরাই আজ অবহেলিত। তাই কৃষকের স্বার্থ রড়্গায় কৃষি আদালত প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

রাকসু’র এই সাবেক ভিপি বলেন, কৃষি আদালত প্রতিষ্ঠা হলে ভেজাল কৃষি উপকরণ উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে কার্যকর আইনগত ব্যবসা নেওয়া যাবে। এর মাধ্যমে প্রতারণার শিকার কৃষকদের ক্ষতিপূরণের নিশ্চয়তা বিধান করা যাবে। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন’ এই এগিয়ে যাওয়ার মূল চালিকাশক্তি আমাদের দেশের কৃষক। তারা দেশের মেরম্নদ-। তাদের জন্যই আজ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা কৃষকদের জন্য সর্বাত্মকভাবে কাজ করতে চাই। সবাই এগিয়ে যাবে, আর তারা পিছিয়ে যাবে এটি হতে পারে না।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনের টানা তিনবারের এই সংসদ সদস্য বলেন, বন্যা-খরা-জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকি নিয়ে ফসল উৎপাদন করেন কৃষক। কৃষকের কঠোর পরিশ্রমে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। প্রতিদানে কৃষক ন্যায্যমূল্যটুকুও পান না। সরকার ধান ক্রয় কার্যক্রম চালু করলেও তা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া কৃষকরা ধান দিতে গুদামের দরজা পর্যনত্ম পৌঁছাতে পারে না। এটা হতে পারে না। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি মজুরদের শ্রমেরও ন্যায্যমূল্য দিতে হবে। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ড়্গতিগ্রসত্ম সব কৃষকই যেন কৃষি বীমা থেকে ড়্গতিপূরণ পান সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

কৃষিজমির মালিকানা কৃষকদের হাতে রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, কৃষিজমি যেন শিল্পগোষ্ঠীর হাতে না চলে যায় সেজন্য দেশের কৃষকদের সংগঠিত হতে হবে। কৃষক কৃষিজমি বঞ্চিত হলে আর অসিত্মত্ব থাকবে না। কৃষকের ভূমি মালিকানা নিশ্চিতের জন্য সরকারকে ভূমিনীতিও গ্রহণ করতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত সরকারের সংশিস্নষ্ট বিভাগে কথা বলে যাচ্ছেন।

সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গোলাপ ও বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন রাজু। তারা বলেন, এখনো সরকার কৃষকের ধান পাট আখের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারেনি, চিনিকলগুলো রক্ষায় কার্যকরী ব্যবস’া নিতে পারছে না। বিদ্যুৎ বিভাগে অনেক অনিয়ম, ঘুষ, দুনীতি রয়েছে সেগুলো না দেখে বার বার শুধু বিদ্যুতের বিল বাড়িয়ে সাধারণ কৃষকদের কষ্ট দেয়া হচ্ছে। তারা ৬০ বছর বয়স পার হলে কৃষক খেতমজুরদের পেনশন চালু করারও দাবি জানান।

জাতীয় কৃষক সমিতির নাটোর জেলা শাখার সভাপতি মিজানুর রহমান মিজানের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নজরম্নল ইসলাম, সদস্য কায়েস উদ্দীন, আনোয়ারম্নল হক, বগুড়া জেলার সভাপতি আবদুর রউফ, ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, জেলা কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম প্রমুখ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.