রাজশাহীতে করোনা ভাইরাস সতর্কীকরণ বিধিনিষেধ মানছে না অনেক মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পরা ভয়াবহ করোনাভাইরাস বাংলাদেশে সংক্রমণের পর সাধারণ মানুষের মাঝে বেশ চাপা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে আতঙ্ক নয় প্রয়োজন সচেতনতার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের দায় ও দায়িত্ব কোন অংশেই কম নয়।মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান, হেক্সিসল দিয়ে হাত পরিষ্কারসহ ঘরের মধ্যে অবস্থানের মতো নির্দেশনা মানার পরামর্শ দিচ্ছেন সকলে। কিন্তু শহরের গণ্ডির মধ্যে কিছু মানুষ এসব বিধি ও নিষেধ মানলেও গ্রামসহ অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে এখনো অসচেতন; যা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের জন্য অশনিসংকেত।
গুটিকতোক মানুষের অসচেতনতার কারণে নানা পন্থা অবলম্বর করেও সরকার মানুষকে ঘরে রাখতে পারছেন না। কিছু মানুষ সচেতন হয়ে বাড়িতে অবস্থান করলেও অধিকাংশ মানুষকে এখনো বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন মোড়ে দিব্বি ঘোরাফেরা ও আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান হয়, বিদেশ ফেরতদের পাশাপাশি ঢাকা থেকে যারা রাজশাহী জেলায় এসেছেন তাদেরও ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি ছুটি ঘোষণার পর ঢাকা ফেরত অনেকেই রাজশাহীতে ফিরেছেন। তারা সরকারের নিষেধ অমান্য করে বাজারসহ বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাছাড়া মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নিয়ম।
গত বুধবার থেকে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সরেজমিনে রাজশাহী নগরী ও আশপাশের কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলাগুলোতে সাধারণ মানুষ কাজ শেষে বিকেল থেকে যথারীতি আড্ডা ও গল্পগুজব বজায় রেখে চলেছেন। আড়ালে আবডালে চলছে সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠান। তারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে না বা মানছেন না। তবে রাজশাহী নগরীর চিত্র কিছুটা ভিন্ন।
গত বুধবার নগরীর বিভিন্ন মার্কেট খোলা থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি নির্দেশনায় সারা দেশের মতো রাজশাহীর সকল মার্কেট ও দোকানপাট দুপুরের পর বন্ধ করে দেয় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এসময় শহরের বিভিন্ন রাস্তা ও মোড়গুলোতে মানুষের আনাগোনা হঠাৎ কমে যায়। তবে আড্ডাবাজেরা নিষেধ অমান্য করে মোড়গুলোতে তাদের আড্ডা অব্যাহত রাখে।
গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর জেলা প্রশাসক নিজে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যামন আদালত পরিচালনা করেন। এসময় রাতে আড্ডাবাজদের লাঠি পেটা করে ঘরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
শুক্রবারে নগরীর রাস্তা ও মোড়গুলো ছিল ফাঁকা। তবে শনিবার সকাল থেকে রাস্তা ও মোড়গুলোতে হঠাৎ মানুষের আনাগোনা বেড়ে যেতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে নগরীর অন্যান্য দোকানের মতো চায়ের দোকানগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে শনিবার অনেক চায়ের দোকান আবারো খুলে রাখতে দেখা গেছে। আর সেই দোকানগুলোকে কেন্দ্র করে জমে উঠছে আড্ডা। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন মোড় ও বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় বেড়েছে।
বিশেষ করে তরুণদের বাড়ির বাইরে বেশি দেখা যাচ্ছে। রাস্তায় যানবাহন কম থাকায় ফাঁকা রাস্তায় অনেকেই মোটরসাইকেলসহ নিজস্ব যানবাহন দ্রুতগতিতে ছুটিয়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। শুক্রবার দুপুরে শিরোইল বাস টার্মিনাল সড়কে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে রাস্তার ডিভাইডারে বেঁধে এক যুবক নিহত হয়।
উপশহর এলাকার বাসিন্দা মিঠু হোসেন জানন করোনা নিয়ে অনেকে এখনো মশকরা করছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বারবার বলা হলেও অনেকে তা অমান্য করে হাত মেলানো থেকে শুরু করে কোলাকুলিও করছেন। মোড়গুলোতে আবারো আড্ডা বাড়ছে। একই অভিযোগ করে সাহেব বাজর এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ঢাকা ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইনের কথা বলা হলেও অনেকেই তা মানছেন না। পরিচিত ঢাকা ফেরতদের অনেককেই শনিবার সাহেববাজারে সবজি বাজারে বাজার করতে দেখা গেছে।
এদিকে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও মানুষকে ঘরে রাখতে বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহী জেলায় পুলিশ ও র‌্যাবের তৎপরতা বেড়ে গেছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় টহল দিয়ে আড্ডাবাজদের দাবড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিচ্ছেন। মাস্কসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা না নিয়ে অহেতুক বাইরে বের হওয়া যুবকদের ধরে সড়কে সকলের সামনে কান ধরে উঠবস করানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে। তবে প্রশসনের এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরো শনিবার রাজশাহীর রাস্তা ও মোড়গুলোতে জনসমাগম ছিল তুলনামূলক বেশি।
গত বৃহস্পতিবার থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজশাহীতে টহলে নামে। এসময় তারা করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকলের করণীয় বিষয়ে মাইকিং করে। গত শনিবার সেনাবাহিনীর সদস্যদের মাইকিংএর পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে যানবাহন থামিয়ে জীবানুনাশক স্প্রে করতে দেখা যায়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.