রাজশাহীতে এসআরডিআই এর ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘সুস্থ জীবনের জন্য সুস্থ মাটি’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অম্লীয় মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলা ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকার উপর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা/প্রগতিশীল কৃষকগণের দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার (০৩ জুন) দ্বিতীয় দিনে সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি সম্পন্ন হয়। কর্মশালাটি আয়োজন করে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই)।
রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আ.ফ.ম মনজুরুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচারক কৃষিবিদ মো. জালাল উদ্দিন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: আনিছুর রহমান ও রাজশাহী জেলা কৃষি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে ছালমা।
অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কর্মসূচী পরিচালক ড.মো: নূরুল ইসলাম।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন- প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শহিদুল ইসলাম, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাদিয়া আফরীন, পাবনা আঞ্চলিক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফারুক হোসেন প্রমুখ।
মাটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় মৃত্তিকা গবেষণার গুরুত্ব নিয়ে সেমিনারে বক্তারা বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তারা বলেন, দেশের আবাদী জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে মাটির অম্লত্ব বাড়ছে।
এছাড়া, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং নদী, খাল-বিল, পুকুর শুকিয়ে যাওয়াও মাটির অম্লত্ব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত সার প্রয়োগের ফলে মাটিতে রাসায়নিক বিষক্রিয়া ঘটে, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
বর্তমানে দেশের প্রায় ৪৬ শতাংশ জমিতে অম্লত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু সাধারণ কৃষকরা এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। এর ফলে কৃষিজাত ফসলে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই মাটির অম্লত্ব দূর করার জন্য আবাদী জমি পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। এই সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে এসআরডিআই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় রেখে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করছে।
সেমিনারে কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা দেশের প্রতিটি জেলায় মৃত্তিকা গবেষণাগার স্থাপনের দাবি তোলেন। তাঁরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন। মাসে অন্তত ৪০ থেকে ৫০টি স্থানের জমি পরিদর্শন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার তাগিদ দেন। এতে করে কৃষকরা মাটির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে পারবেন।
মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য মৃত্তিকা গবেষণার কার্যক্রম বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে মাটির গুণগত মান বজায় রাখা সম্ভব হবে, যা ফলন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পাবে এবং কৃষিজীবী মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। মৃত্তিকা গবেষণার প্রসার ও কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের কৃষি খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে সেমিনারে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসআরডিআই’র মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. জালাল উদ্দিন বলেন, অম্লত্বের মূল কারণ মাটির ক্ষারীয় উপাদান। একটি হল ক্যালসিয়াম অন্যটি ম্যাগনেসিয়াম। এই দুইটি কারণের একটি যদি মাটি থেকে চলে যায় তাহলে মাটির অম্লত্ব কমে যায়। আরেকটি কারণ হচ্ছে অপরিমিত সার ব্যবহার।
তিনি বলেন, মাটি ক্ষারীয় হলে সেখানে ভালো ফসল ফলানো সম্ভব নয়। মাটিতে অম্লের পরিমাণ বেশী হলেও সেখানে খুব ভালো ফসল পাওয়া যাবে না। অম্লের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত মাটির ভাল অবস্থা নির্দেশ করে। এর বেশী চাষের জন্য উপযোগী নয়। কাজেই সার্বিক কৃষি কাজের জন্য মাটির অম্লতা এবং ক্ষারীয় মান জানা একান্ত জরুরি যা কেবল মাটির পিএইচ মান দ্বারা জানা সম্ভব এবং পিএইচ মান ল্যাবরেটরিতে মাটি পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা সম্ভব। কৃষকরা মনে করেন, পিএইচ বাড়ালে ফসল ভালো হবে কিন্তু পিএইচ বাড়ালে ফসলের ক্ষতি হয়। মাটির ক্যালসিয়াম অথবা ম্যাগনেসিয়াম বাড়াতে হবে তাহলে ফসল ভালো হবে। এখানে সার কম দিলেও ভালো কাজ করবে।
সেমিনারে ‘মাটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় মৃত্তিকা গবেষণারের ভূমিকা’র পাশাপাশি ভেজাল স্যার চেনার উপায় ও জমিতে স্যার ব্যবহারের পরিমাণের ব্যাপারেও আলোচনা করা হয়। এছাড়াও মাটির অম্লত্ব দূর করতে ডলোচুনের প্রয়োগের বিষয়েও আলোকপাত করা হয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.