রাজশাহীতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মা নদীর বক্ষ ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ, বালু উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহীর পদ্মা বক্ষে ভরাট করে অবৈধভাবে রাস্তা নির্মাণ করছে প্রভাবশালী এক নেতা। ভাংড়ি ইট, রাভিস ও বালু দিয়ে পদ্মা নদী বক্ষ ভরাট করে বালু উত্তোলনের জন্য বেআইনিভাবে এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং ভোরে শ্রমিকরা বালুবাহী ট্রলারযোগে বালু নিয়ে তালাইমারী সংলগ্ন পদ্মা নদী ভরাট করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আদালত ও জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং বালু দিয়ে পদ্মা ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ না করতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকার দলীয় একজন প্রভাবশালীর নেতার ছত্রছায়ায় নানা কৌশলে এই অবৈধ নদী বক্ষ ভরাট কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এ নিয়ে রাজশাহীর পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন কর্মসূচি পালনসহ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে আলটিমেটামও দিয়েছেন সংগঠনগুলোর নেতারা।

তবে এবার এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হতে পারে বলে আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোর একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

এরআগে অবৈধ বালু ঘাট বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন। একই সাথে পদ্মা নদীর মাঝ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ কাজ বন্ধের দাবি জানানো হয় ওই মানববন্ধন থেকে। একইসঙ্গে বক্তারা নদী ভরাট কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম অপসারণের দাবি জানান।

কিন্তু এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

বক্তারা হুসিয়ারি দিয়ে বলেন, পদ্মা নিয়ে খেলা ও ব্যবসা অবিলম্বে বন্ধ করুন। রাজশাহীর পরিবেশকে সুস্থ্য রাখতে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে। পদ্মাকে হত্যা করা যাবে না।

তারা বলেন, নগরীর মধ্যে ধুলিময় পরিবেশের একমাত্র কারণ তালাইমারী অবৈধ বালু ঘাট। এই ঘাট দিয়ে বালু উত্তোলন নগরবাসী মানবে না।

ওইদিন মানববন্ধন শেষে পদ্মা নদীকে বাঁচানোর জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়।

সরেজমিনে তালাইমারী সংলগ্ন পদ্মা নদীতে গিয়ে দেখা গেছে, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা আর জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অমান্য করেই চলছে বালু উত্তোলন ও পরিবহন। শ্রমিকেরা তালাইমারী ঘাটে ভেকু মেশিন দিয়ে ডাম-ট্রাকে বালু লোড করে নিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বছরের ২৪ জুলাই জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত বালু ঘাটটি বন্ধ করে দেয়। জব্দ করা হয় ভেকু ও আনলোড মেশিনের ব্যাটারী। আটক করা হয়েছিল ট্রাক চালকসহ আটজনকে। ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক এক মাস মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ছয়জনকে। আর ১৫ দিন করে সাজা হয়েছিল দুইজনের।

ওই দিনই জেলা প্রশাসন একটি সাইন বোর্ড পুতে যায় তালাইমারী ঘাটটিতে। সেখানে বিজ্ঞপ্তিতে পরিস্কার বাংলায় লেখা আছে। “মহামান্য হাইকোট বিভাগের রিট পিশিটন নং ৬৫২১/২০১৯ এর আদেশ মোতাবেক মৌজা/কাজলাঘাট ব্যবহার করে সকল ধরনের বালু উত্তোলন/ বালু পরিবহন নিষিদ্ধ করা হলো। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।- আদেশক্রমে জেলা প্রশাসক, রাজশাহী।

মাদক কারবারী, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও সামাজিক নানা অপরাধের বিরুদ্ধে যখন সরকার শক্ত অবস্থানে তখন রাজশাহীতে সরকার দলীয় একজন নেতার প্রশ্রয়ে কিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে, আদালতের আদেশ অমান্য করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন এবং পদ্মা নদী ভারাট করে রাস্তা নির্মাণ করছেন তা নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে মহানগরীর তালাইমারী বালুঘাটে বালু উত্তোলন, বালু পরিবহন ও নদী বক্ষ ভরাট বন্ধের দাবি নগরবাসীর।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.