রাজনৈতিক বিভক্তি: বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের দেউলিয়া হওয়ার শঙ্কা

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ক্রমেই বাড়ছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের দেউলিয়া হওয়ার শঙ্কা। এরই মধ্যে ওয়ালস্ট্রিট সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হলে তার ফল হবে মারাত্মক। এ পরিস্থিতিতে দেশটির সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা বাড়ানোর বিষয়ে এখনও বড় ধরনের মতানৈক্য রয়ে গেছে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দেশটি প্রথমবারের মতো দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায়। এ অবস্থায় সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থির মধ্যে। তবে দুজনই বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন।
এরই মধ্যে, হোয়াইট হাউস এবং মার্কিন কংগ্রেসের বিরোধীদল রিপাবলিকান পার্টির নেতারা বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। এর মধ্যে শুক্রবার (১২ মে) বাইডেন এবং ম্যাককার্থি আবারও বৈঠকে বসছেন।
প্রেসিডেন্টের ওভাল অফিসে বিরোধীদল রিপাবলিকান পার্টি এবং তার নিজের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতাদের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেছেন বাইডেন। এসব বৈঠকের পর তিনি বলেন, বিগত কয়েকদিন, কয়েক সপ্তাহ অনেক ভাবভঙ্গি, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলেছে, তবে এগুলো আর অল্প সময়ই অব্যাহত থাকবে।
এসব আলোচনাকে তিনি ‘কার্যকর’ বলেই বিবেচনা করছেন।
এর আগে, দেশকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা আরও ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়ানোর প্রস্তাব দেন স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি। এ প্রস্তাব পাস হলে দেশটির সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা বেড়ে দাঁড়াবে ৩১.৪ ট্রিলিয়ন ডলারে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় ৫০০ বিলিয়ন ডলার কমানোরও প্রস্তাব দেন তিনি।
ম্যাককার্থির প্রস্তাবে দেশের অভ্যন্তরীণ এবং সামরিক ব্যয় ২০২২ সালের সমান রাখার কথা বলা হয়েছে। এরপর থেকে প্রতিবছর আগের বাজেটের চেয়ে মাত্র এক শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে তার প্রস্তাবে দেশটির পেনশন এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় কমানোর বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দেয়া হয়নি।
ম্যাককার্থির প্রস্তাবে জো বাইডেনের সবুজ জ্বালানি খাতে ভর্তুকি এবং ৪০০ বিলিয়ন ডলারে শিক্ষার্থী ঋণ প্রকল্পটি বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব উৎস থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের উত্তোলন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
ডেমোক্র্যাট পার্টি সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে বিরোধীদল রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে, বাইডেন চাইলেও তার চাওয়ামাফিক সবকিছু করতে পারছেন না। এ অবস্থায় তার সামনে একটি পথই খোলা রয়েছে। আর তা হলো, বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে নেয়া।
এদিকে মার্কিন শেয়ার বাজারের সর্বোচ্চ জায়গা ওয়ালস্ট্রিটের বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হলে তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হবে ‘অকল্পনীয়’।
মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি তথা অর্থমন্ত্রীকে লেখা এক চিঠিতে ওয়ালস্ট্রিটে অর্থ লগ্নিকারী শীর্ষ ১৭টি প্রতিষ্ঠান বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের দেউলিয়া হওয়ার স্বল্পমেয়াদি ফলাফল অনুমান করে বলা যায়, খুবই ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু দেউলিয়া হওয়ার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল আসলে অকল্পনীয়।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কার কথা প্রথমবার উচ্চারণ করেন দেশটির অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন। তিনি বলেন, আগামী পহেলা জুনের মধ্যেই অর্থসংকটে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র। আর তা এতটাই তীব্র হবে যে, দেশটি ঋণ পরিশোধেও ব্যর্থ হতে পারে। সোজা কথায়, দেশটি দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।
মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার কেভিন ম্যাককার্থি এবং অন্যান্য নেতার উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে জ্যানেট ইয়েলেন বলেছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের সবচেয়ে নির্ভুল অনুমান হল যে, আমরা জুনের প্রথম দিকে সরকারের ব্যয়ের সমস্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে অসমর্থ হব। বিশেষ করে কংগ্রেস যদি ঋণগ্রহণ সীমা না বাড়ায় কিংবা এ সংক্রান্ত প্রস্তাব স্থগিত না করে তবে ১ জুনের মধ্যেই এমনটা ঘটতে পারে।’ #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.