রাজধানীতে পানি পার ২০ টাকা!

ঢাকা প্রতিনিধি: ভোর থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। আজ শুক্রবার (১২ জুলাই) সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই হয়তো সকালটা ঘরে বসে বেশ আয়েশেই কাটিয়েছেন। কিন্তু এদিনও যাদের অফিস থাকে কিংবা জরুরি কাজে বাইরে যেতে হয়, তাদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
বিশেষ করে শ্রমিক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চিকিৎসা নিতে হাসপাতালগামীদের বেশ বিপাকেই পড়তে হয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু হয়েই গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে অনেককেই।
তবে ভোগান্তি আরও চরমে উঠেছে বেলা খানিকটা বাড়লে। টানা বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে গেছে। আর স্যুয়ারেজ লাইনের পানির সঙ্গে মিশে পথঘাট হয়েছে একাকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুটা ঘুরলেই চোখে পড়ছে ঢাকার জলাবদ্ধতার চিত্র। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করতে দেখা গেছে অনেককেই।
আর রাস্তায় পানি জমে থাকায় যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। ফলে রাস্তায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে যাত্রীরা একসময় বিরক্ত হয়ে হাঁটা শুরু করেন। কিন্তু কিছুটা পর পর ফুটপাতও ডুবে থাকায় সেটাও সম্ভব হচ্ছিল না। এই সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন রিকশাওয়ালারা। এমনকি কোথাও কোথাও জমে থাকা পানি পার করে দিতে ১০-২০ টাকা করে নিচ্ছেন তারা।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে প্রধান সড়কের পানি জমে আছে বিকাল পর্যন্ত। সেখানে পানির কিছুটা অংশ পার করে দিতে দেখা গেলো রিকশাওয়ালা ও ভ্যানওয়ালাদের হাঁকডাক। ভ্যানওয়ালারা নিচ্ছেন জনপ্রতি ২০ টাকা। একসঙ্গে চার থেকে পাঁচ জন ভ্যানে উঠে বসলেই পানি পার করে দিচ্ছেন তারা। লোক না হওয়া পর্যন্ত ডেকে যাচ্ছেন, ‘পানি পার ২০ টাকা, পানি পার ২০ টাকা’। আবার একই রাস্তা পার করে দিতে রিকশাচালকরা চাইছেন ৪০ টাকা। পথচারীরাও বাধ্য হয়ে পার হচ্ছেন অতিরিক্ত এই টাকা গুনেই।
এটুকুর জন্য এত বেশি ভাড়া চাইছেন কেন—প্রশ্ন করতেই এক ভ্যানচালক বললেন, ‘ভাই, সবসময় তো নেই না। অন্য সময় কি এই ভ্যানে উঠতেন? বৃষ্টির সময় এই ময়লা পানি পায়ে লাগিয়ে পার করে দিচ্ছি একটু বেশি আয়ের আশায়। বৃষ্টি হয়ে আমাদের বাড়তি কিছু টাকা আয়ের সুযোগ হয়েছে, তাই নিচ্ছি।’
ভ্যানে পার হওয়া এক যাত্রী বলেন, ‘আমরা তো নিরুপায়। কিছুই করার নেই। কাজে তো যেতে হবে। মিরপুর থেকে এসেছি কিন্তু ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে এসে পানির কারণে জ্যামে পড়েছি। তাই বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে পানিটুকু পার হচ্ছি।’
রাস্তায় পানি জমা নিয়েও ক্ষোভও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। ছবি তোলার সময় পাশ দিয়ে ভ্যানে পানি পার হচ্ছিলেন তরুণদের কয়েকজন। একজন প্রতিবেদককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ভাই, ছবি না তুলে ভিডিও করেন। আর ভিডিও করেই বা কী হবে! বৃষ্টি হলে এখানে সবসময়ই এমন হয়, সবাই দেখে কিন্তু কোনও সমাধান নাই।’
পাশেই প্রাইভেটকার দাঁড় করিয়ে অন্য গাড়িগুলো সিগন্যাল দিয়ে পার করে দিচ্ছিলেন মামুন নামে এক তরুণ। দাঁড়িয়ে আছেন কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, পানি ঢুকে গাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে। মেকানিকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তার জন্য অপেক্ষায় আছেন।
দুপুরের পর ২৭ নম্বরের মোড়ে গিয়ে দেখা গেলো সিটি করপোরেশনের লোকজন সড়কে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছেন। স্যুয়ারেজ লাইনের ঢাকনা খুলে পরিষ্কার করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে ডিএনসিসি থেকে জানানো হয়েছে, ছুটির দিন সকাল থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পানি অপসারণ হতে কিছুটা সময় লেগেছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজারের বেশি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ১০টি অঞ্চলে কাজ করছে ১০টি কুইক রেসপন্স টিম। ইতোমধ্যে প্রধান সড়কগুলো থেকে পানি নিষ্কাশন করা হয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মোমাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.