রহস্য ঘেরা এক এসআই’র জীবনী “বেতন ৪২ হাজার” বাড়ির দাম চার কোটি টাকা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: পুলিশ মানেই সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, দেশ এবং সাধারন জনগনের বন্ধু হচ্ছে পুলিশ যাদের কাছে মাথা গুজে সাধারন মানুষ। কিন্তু সেই পুলিশই যদি ভক্ষক হয় তাহলে আর সাধারন মানুষের কিছুই করার থাকে না। সেরকমই একজন পুলিশের খবর পাওয়া গেলো নারায়ণগঞ্জে।

পুলিশের চাকরি থেকে মাসিক আয় (বেতন ৪২ হাজার ৬৬০ টাকা)। সেই অনুযায়ী তিনি সরকারকে মাসিক করও পরিশোধ করেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা এই পুলিশ উপপরিদর্শকের আলিশান বাড়ির সন্ধান পেয়ে অবাক হয়েছে। তাঁর রয়েছে একটি ব্র্যান্ড নিউ গাড়িও। সংস্থার প্রতিবেদনে এ পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ির নির্মাণ ব্যয় হিসাব করা হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা।

সরকারের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাটির এই বাড়ি নির্মাণ ও তথ্য গোপনের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে সরকারি সংস্থাটির প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনের সূত্র ধরে রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা এলাকার পশ্চিম তল্লার গ্রিন রোডের বাড়িটিতে গিয়ে নানা তথ্য পাওয়া যায়। এলাকার মানুষের কাছে এটি ‘ডিবির বাড়ি’ হিসেবে পরিচিত। মালিকের নাম এসআই মিজানুর রহমান। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত বলে জানা যায়। তবে নিজেকে তিনি ডিবি পুলিশ পরিচয় দেন বলে বাড়িটি ডিবি পুলিশের বাড়ি বলেই সবাই জানে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ফতুল্লা থানার পশ্চিম তল্লা এলাকার গ্রিন রোডের বিলাসবহুল বাড়িটির মালিক বাংলাদেশ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত আছেন। সরকারের কাছে তাঁর দাখিলকৃত কাগজপত্রে তিনি ৪২ হাজার ৬৬০ টাকা বেতনপ্রাপ্ত হন। এর বাইরে অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই বলে জানান।

কিন্তু সরেজমিন তদন্তে তাঁর ভূসম্পত্তি ও বহুতল ভবনের মালিক হওয়া এবং ভবন থেকে প্রাপ্ত অর্থেরও সন্ধান পাওয়া যায়, যা আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। পিডাব্লিউডির (গণপূর্ত অধিদপ্তর) রেট অনুযায়ী ভবনটির নির্মাণে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। এ কর্মকর্তা টয়োটা ব্র্যান্ডের একটি নতুন মাইক্রোবাস ও ব্যবহার করেন। সংস্থাটি পৃথকভাবে ইট, রড, সিমেন্ট, টাইলস, স্টিল, গেট, পাইপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব ধরনের নির্মাণসামগ্রীর দরদাম উল্লেখ করে বাড়ির মোট ব্যয় নির্ণয় করেছে।

গতকাল শনিবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে আশপাশের লোকজনের কাছে জানতে চাইলে এক লহমায় সবাই ‘ডিবির বাড়ি’ দেখিয়ে দেয়। বাড়ির নিচতলায় গিয়ে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, মিজানুর রহমান পরিবার নিয়ে তৃতীয় তলায় থাকেন। ওই সময় তিনি বাসায় ছিলেন না। তৃতীয় তলায় খোঁজ নিলে গৃহকর্মী জোসনা বেগম বলেন, ‘মিজান স্যার ও ম্যাডাম বাইরে গেছেন।

বিশাল আকৃতির এ বাড়িতে প্রতি ফ্লোর চার ইউনিটের; মোট ফ্ল্যাট ২৪টি। প্রতিটি ফ্ল্যাটের ভাড়া গড়ে ১২ হাজার টাকা। সেই অনুযায়ী তিনি মাসে প্রায় দুই লাখ ৮৮ হাজার টাকা ভাড়া পান। নিচতলায় দেখা যায়, ‘মায়া ফার্মেসি ও সামিয়া ফ্যাশন’ নামের দুটি বাণিজ্যিক স্থাপনাও রয়েছে। ভবনের পাশের একটি দোকানের চা বিক্রেতা লিটন মিয়া বলেন, ‘ডিবি অফিসার মিজানুর রহমান তিন-চার বছর আগে ভবনটি বানিয়েছেন।

জানতে চাইলে এসআই মিজানুর রহমান গতকাল বলেন, ‘আমার বাড়ির সব তথ্য আয়কর রিটার্নে দেখানো আছে। কোনো কিছু গোপন করা হয়নি।’ কথা শেষ না করেই তিনি ফোন কেটে দেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.