রং দেওয়া মাগুর ও শিং মাছে নাটোরের বাজার সয়লাব

নাটোর প্রতিনিধি: লোভনীয় হলুদ মনকাড়া তরতাজা মাগুর মাছ ও শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে নাটোরের বিভিন্ন বাজারে। ২০০ টাকা কেজি দরের বিদেশি মাগুর মাছকে দেশি মাছ বলে ৮০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। বিক্রিও হচ্ছে দেদারছে।
সুন্দর লোভনীয় একেবারে অবিকল দেশী শিং ও মাগুর মাছের মত রং হওয়ার কারণে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। দ্রুত ক্ষতিকর রং মেশানো মাছ যাতে বাজারে বিক্রি না হয় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি স্থানীয়দের।
এদিকে মাছের গায়ের রং সুন্দর হওয়ার ফলে দামের বিষয়টি নজরে আনছেন না ক্রেতারা। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই দেখা মিলবে মাছের গায়ে লাগানো অতিরিক্ত রঙের প্রলেপ। নাটোরের মাদ্রাসা বাজার, নিচাবাজার সহ বেশ কয়েকটি বাজারে রং মিশ্রিত মাছ বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে উপস্থিতৎ হয় বাজারে।
বাজার পরিদর্শন করে পাওয়া যায় অভিযোগের সত্যতা। মাছের গায়ে আঁচড় কাটলে উঠে আসছে ক্ষতিকর রং। মাছ কচলে ধুয়ে নিলে সেই জল হয়ে যাচ্ছে হলদেটে।সরেজমিনে নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় প্রধান মাছ বাজার, নিচা বাজার মাছ বাজার সহ বিভিন্ন উপজেলার বাজারেও মাছের শরীরে রং দিয়ে বিক্রি করতে দেখা গেছে। মাগুর ও শিং মাছে রং দিলে তা আকর্ষণীয় আর দেশী মাছের মতো দেখায়। এবং অন্যান্য মাছে রং দিলে পচনও রোধ হয় বলে দাবি মাছে রং ব্যবহারকারীদের। এই মাছ খেলে মারাÍক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে।
এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বলছে সত্যতা পেলে অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
আজ বুধবার সকালে মাদ্রাসা বাজার মৎস্য বিক্রয় শেডে দেখা যায় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নানা প্রকারের মাছ নিয়ে বসে আছেন। এর মধ্যে তিন থেকে চার জন রং দেওয়া মাগুর মাছ বিক্রি করছেন। কেউ কেউ এড়িয়ে যাচ্ছেন রং দেওয়া মাছ। আবার না বুঝে কিনছেনও অনেকে। একই চিত্র দেখা গেছে শহরের প্রধান বাজার নিচা বাজারেও।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সকালে নাটোর স্টেডিয়াম ও সেচ ভবন এর সামনে এক মৎস্য ব্যবসায়ী রং মেশানো মাগুর মাছ বিক্রি করছিলেন ৮০০ টাকা কেজি দরে। সেখান থেকে মাছ কিনে নেয়া যাওয়ায় এক ব্যক্তি জানান, মাছ কুটে ধোয়ার পরে মাছের হলুদ ভাব আর ছিলো না। মাছ হয়ে গেছে হাইব্রিড বিদেশী মাগুর এর মত।
এদিকে নাটোরের মাদ্রাসা বাজারের রং মিশ্রিত মাছ বিক্রেতা ব্যবসায়ীরা স্বীকার না করলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, আমরা তো বাজারে মাছের গায়ে রং মেশাই না। হয়তো আমরা রং মেশানো মাছ কিনতে পারি। আমরা আগামী দিন মাছের রং মেশানো দেখতে পেলে আপনাদের কে খবর দেব। কিন্তু ওই মাছ ব্যবসায়ীর এর পাশের ড্রেন এ পড়েছিল ক্ষতিকর রঙের একটি পোঁটলা। যার রঙে ড্রেনের পানির রং সেই হলদেটে রং ধারণ করেছে।
এদিকে রং দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতারা বলেন, রং দিলে মাছ একটু ভালো ও দেশী মাছের মতো দেখায়। ক্রেতারাও বেশি দামে প্রচুর মাছ কেনেন। তাই হয়তো অল্প পরিমাণে রং দিয়ে মাছ বিক্রি করছে সবাই। এতে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় না বলে দাবি করেন তারা।
কমল সরকার নামে রং দেওয়া মাছের একজন ক্রেতা বিটিসি নিউজকে জানান, বাজারে এসে যেই মাছ সতেজ ও টাটকা দেখায় সেই মাছই কিনি। মাছে যে রং মেশানো হয় তা তো জানতাম না। তাজা ও দেশী মাগুর মাছ অনেক কাল দেখিনি। হঠাৎ বাজাবে দেখে যা চেয়েছে তাই, সবচেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনে তো আরও ক্ষতি হচ্ছে তাহলে। রং মিশিয়ে যারা ক্রেতাদের ঠকায় তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

নাটোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিটিসি নিউজকে জানান, মাছে রং দেওয়ার বিষয়টি এক ধরনের অপরাধ। আমি হ্যাঁ শুনে নির্দেশ দিচ্ছি আগামীকালই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তাছাড়া পর্যাক্রমে বিভিন্ন মাছের বাজার পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

কৃত্রিমভাবে মাছের রং পরিবর্তন করা ভোক্তাদের সঙ্গে এক ধরণের প্রতারণা জানিয়ে নাটোর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতফর এডি মেহেদী হাসান জানান, প্রতিটি মাছ বাজারে অভিযান চালানো হবে। সত্যতা পেলে অসাধু ব্যবসায়ী ও রং মেশানোর কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নাটোর সদর হাসপাতালে আবাসিক ডাক্তার (আর এম ও ) ডা: মঞ্জুরুল হাসান বিটিসি নিউজকে জানান, কৃত্রিম রং মেশানো যে কোনো খাবারই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। রং মেশানো খাবার খেলে মানুষের বুকে জ্বালা, অ্যাসিডিটির সমস্যা, হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা, পেটের পীড়া, মাথা ব্যথাসহ তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদি যে সমস্যাগুলো হতে পারে তার মধ্যে কিডনির সমস্যা অন্যতম। এছাড়া চামড়ায় নানা ধরনের রোগ দেখা দিতে পারে। কৃত্রিম রং, ডালডা ও অতিরিক্ত তেল ব্যবহারে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি থাকে। উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। হরমোন তার ভারসাম্যও হারাতে পারে। স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধে মানুষের মধ্যে সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগও প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.