রংপুর বিভাগের ৮১ শতাংশ স্কুলের পাশে বিক্রি হয় তামাকপণ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক: রংপুর বিভাগের ৮১% স্কুল ও খেলার মাঠের ১০০ মিটারের মধ্যে সিগারেটসহ তামাকপণ্য বিক্রি হয়। এসব স্কুলের পাশে ক্ষুদ্র মুদির দোকান রয়েছে ৪৮%, রাস্তার পাশে তামাকের দোকান ৯% এবং ৪২% দোকানে কিয়সক (ভ্যানের উপর ফ্যারিতে করে বিক্রি করা তামাকপণ্যের দোকান) পাওয়া গেছে।

‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স’ এর সহায়তায় ‘ঢাকা আহসানিয়া মিশন’ এর নেতৃত্বে এসিডি, ইপসা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এবং উবিনিগ যৌথভাবে ২০১৭ সালে ‘ইরম ঞড়নধপপড় ঞরহু ঞধৎমবঃ’ শিরোনামে শিশুদের প্রতি তামাক কোম্পানির বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি জরীপ পরিচালনা করে। একই সাথে গবেষণাটি বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাতে পরিচালিত হয়।

আজ সোমবার (২৭ মে ২০১৯) বেলা সাড়ে ১১টায় রংপুর ‘লার্নিং এন্ড রিসার্চ সেন্টার-এলআরসি’ এর সম্মেলন কক্ষে ‘ঢাকা আহসানিয়া মিশন’ এর নেতৃত্বে এসিডি, ইপসা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এবং উবিনিগ যৌথভাবে ‘ইরম ঞড়নধপপড় ঞরহু ঞধৎমবঃ’ এর ‘গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় গবেষণাটির ফলাফলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো ফ্রি কিড্স’র সহযোগিতায় রাজশাহীর উন্নয়ন সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

গবেষণা প্রতিবেদনের ফলাফলে বলা হয়, রংপুর বিভাগে ৯৭% তামাকপণ্যের দোকানে শিশুদের দৃষ্টি সমান্তরালে (ঊুব ষবাবষ) (আনুমানিক ১ মিটার) তামাকজাত দ্রব্যের প্রদশির্ত হচ্ছে। চকোলেট এবং খেলনার পাশে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করতে দেখা যায় ৮৯% তামাকপণ্যের দোকানে।

রংপুর বিভাগের স্কুল ও খেলার মাঠের পাশে ৯২% তামাকপণ্যের দোকানে তামাকের বিজ্ঞাপন পরিলক্ষিত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৭% স্টিকার/ডামি প্যাকেট/ফেস্টুন/ফ্লায়ারস এর বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়েছে। আর ৩% পরিলক্ষিত হয়েছে পোস্টারের বিজ্ঞাপন। এছাড়া রংপুর বিভাগের ১০০% দোকানে একক শলাকা সিগারেট (ঝরহমষব ঝঃরপশ) বিক্রি হয় বলে গবেষণার ফলাফলে দেখানো হয়েছে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উপ-পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান। এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষকগণ ছাত্রদের জন্য মডেল। কিন্তু প্রায়ই আমরা লক্ষ্য করছি, তারা ছাত্রদের সামনে প্রকাশ্যে পান, সিগারেট, জর্দ্দা ও গুল সেবন করে। এটি শিক্ষার্থীদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আমি শিক্ষকদের এমন কর্মকা- থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করছি। এজন্য মাধ্যমিক শিক্ষার পরিচালক মহোদয় ক্লাসে কিংবা ক্লাসের বাইরে শিক্ষকদের সিগারেট, পান, জর্দ্দা ও গুল সেবন না করার বিষয়ে যে চিঠি ইস্যূ করেছেন সেই চিঠিটি আমরা পুনরায় ইস্যূ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেয়ার ব্যবস্থা করব।’

রংপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মোছা. রোকসানা বেগমের সভাপতিত্বে এসময় বিশেষ অতিথি ছিলেন- সহকারি জেলা শিক্ষা অফিসার শাহরিনা দিলরুবা, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির রংপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. আতিয়ার রহমান প্রামাণিক, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের স্কুল পরিদর্শক শ্রী দেবব্রত কুমার শর্মা। এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন- এসিডি’র পরিচালক (প্রোগ্রাম) শারমিন সুবরীনা।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা শিক্ষা অফিসার মোছা. রোকসানা বেগম বলেন, ‘আমাদের রংপুর জেলায় প্রায় ৯ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। টাইনি টার্গেটের এই প্রোমামের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, স্কুলের পাশে তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধ করা। আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উপ-পরিচালক মহোদয়কে অনুরোধ করব- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আশেপাশে থেকে তামাকপণ্য বিক্রি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রতিষ্ঠান প্রধান বরাবর চিঠি ইস্যূ করবেন।’

উপস্থিত প্রধান শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে নিজ নিজ জায়গা থেকে তামাকের ভয়াল ছোঁবল থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিতে কাজ করবেন।’ তিনি আরও বলেন‘ তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন আছে, কিন্তু এর বাস্তব প্রয়োগ নেই। তাই আমাদেরকে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আপনারা দোকানের লাইসেন্স দেয়ার সময় অবশ্যই সিগারেট বিক্রি করবে না মর্মে অঙ্গিকারনামা নিয়ে লাইসেন্স প্রদান করবেন।’

এসিডির এডভোকেসি মো. শরিফুল ইসলাম শামীমের উপস্থাপনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে রংপুর শহরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ, রংপুর মাধ্যমিক (স্কুল) শিক্ষক সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন এসিডির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাহীনুর রহমান।

আলোচনা সভায় এসিডি’র পক্ষ থেকে শিশু, কিশোর ও যুবসমাজকে তামাক ও ধূমপানে আসক্ত করা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে তামাক কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন কূট-কৌশল বন্ধে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের নিকট কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

# সুপারিশগুলো হলো-

১. স্কুল ও খেলার মাঠের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকপণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে, প্রয়োজনে বিদ্যমান আইন সংশোধন করতে হবে।
২. রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার উপ-পরিচালক তার আওতাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ধূমপানমুক্ত রাখতে এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক ধূমপানমুক্ত সাইনেজ (নোটিশ) দৃশ্যমান স্থানে টাঙ্গানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ বরাবর একটি নোটিশ জারি করবেন।
৩. রংপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক পর্যাপ্ত পরিমাণ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও চিঠি জারির মাধ্যমে তামাকপণ্যের বিক্রয় কেন্দ্রে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা।
৪. এক শলাকা সিগারেট বিক্রি বন্ধ করা।
৫. রংপুর দোকান মালিক সমিতি- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চারপাশে সকল ধরনের বিজ্ঞাপন, পণ্য প্রদর্শন ও তামাকপণ্য বিক্রয় বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নেবে
৬. শিক্ষক সমিতি স্কুল ও খেলার মাঠের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকপণ্যের বিক্রয় বন্ধে প্রদক্ষেপ নেবে
৭. জেলা শিক্ষা অফিসার উপরোক্ত বিষয়গুলো তাদের বিদ্যালয় মনিটরিং ফরম্যাটে অর্ন্তভুক্ত করে নিয়মিত মনিটরিং করবেন।
পরে সোমবার দুপুর আড়াইটায় একই ভেন্যূতে ‘ইরম ঞড়নধপপড় ঞরহু ঞধৎমবঃ’ এর জরীপ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে রংপুরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুর সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান সরকার। সংবাদ সম্মেলনে জরীপের ফলাফল সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়। এসময় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এসিডির এডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম শামীম। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ড. মো. মনিরুজ্জামান সরকার ধূমপানের কুফল এবং ধূমপান করলে ধূমপায়ীদের কী কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে সে বিষয়ে বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরেন।

শিশুদের চক্ষু সমান্তরাল (ঊুব খবাবষ) তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে।

চকলেট, বিস্কুট ও অন্যান্য শিশুখাদের পাশেই তামাকপণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। যাতে শিশুরা তামাকপণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন শিমুল।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.