রংপুরে শিক্ষার্থীদের থুথু খাওয়ানো শিক্ষক জামালকে শুধু বদলি করায় তোলপাড়

রংপুর ব্যুরো: শিক্ষার্থীদের একজনের থুথু আরেকজনকে খাইয়ে শাস্তিদাতা রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ চতুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জামাল উদ্দিনকে বরখাস্ত না করে শুধুমাত্র বদলি করার ঘটনায় তোলাপড় চলছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।

যদিও বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে জানিয়েছেন পরে বিভাগীয় মামলা করে পরবর্তি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং প্রাথমিক বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ চতুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জামাল উদ্দিন ক্লাসে শিক্ষার্থীরা পড়ায় না পারায় তাদের অভিনব কায়দায় শাস্তি দিতেন।

তার শাস্তির ধরন ছিল একজনের থুথু অন্যজনকে জোর করে খাওয়াতেন। দিনের পর দিন এরকম অমানবিক আচরণ বন্ধ না হওয়াতে এক সময় ফুঁসে উঠে অভিভাবকসহ শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার অধিকারী বিটিসি নিউজকে জানান, গত মঙ্গলবার হারাগাছ চতুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনামিকা ক্লাসে অংক করতে না পারায় অন্য শিশুর থুথু খাইয়ে মানসিকভাবে নির্যাতন করেন সহকারী শিক্ষক জামাল উদ্দিন।

নির্যাতনের শিকার শিশু শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দেয়। পরে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাসার মো. মাহমুদুন নবীকে ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়।গত শনিবার ওই বিদ্যালয়ে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল বাসার মো: মাহমুদুন নবী, প্রধান শিক্ষক খালেদা আক্তার, অভিযুক্ত শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনার সময় উপস্থিত শিক্ষার্থী ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণসহ উভয়ের বক্তব্য শোনেন তারা। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আরও জানান, গতকাল রোববার দুপুরে সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

প্রতিবেদন ও নির্যাতনের শিকার শিশু শিক্ষার্থীসহ অন্য শিশুদের লিখিত জবাবে প্রতিয়মান হয়েছে ক্লাসে অংক করতে না পারায় শাস্তিমূলক হিসেবে একজনের থুথু আরেকজনকে খাওয়ান ওই সহকারী শিক্ষক।

তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক তার দোষ স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় নির্যাতনকারী শিক্ষকের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অন্য বিদ্যালয়ে বদলির ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়।

জেলা শিক্ষা অফিসে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হলে রোববার বিকেলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম তার বদলির আদেশ জারি করেন।

এদিকে বিভাগীয় শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রাথমিকভাবে বদলি করা হয়েছে।

পরবর্তিতে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে। সেখানে দোষী প্রমানিত হতে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় অভিভাবক দেলোয়ার হোসেন, এনামুল হকসহ অনেকেই বিটিসি নিউজকে বলেন, অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে বরখাস্ত না করে শুধু বদলির আদেশ দেয়ার মাধ্যমে তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এত বড় অপরাধ করায় শুধু বদলি করা হয়েছে। এটি অভিভাবকরা মানতে পারছি না। আমরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বরখাস্তসহ কঠোর শাস্তি চাই।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর ব্যুরো প্রধান সরকার মাজহারুল মান্নান।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.