রংপুরে ফজলে হোসেন বাদশা : উত্তরাঞ্চলের মানুষকে সব সময় বঞ্চিত হতে হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রংপুর বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকার শনিবার বিকালে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে বিশাল এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, উত্তরাঞ্চলের মানুষ এখনও উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষক বাধ্য হয়ে ক্ষেতে আগুন দেয় বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে সমাবেশে মেনন বলেন, কৃষকরা অনেক কষ্টে আবাদ করলেও ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না।

দালালদের খপ্পড়ে পরে ন্যাযমূল্যে ধানও বিক্রি করতে পারে না। সবখানে দুর্নীতির আধিপত্য বিরাজ করছে। উত্তরাঞ্চলের মানুষও উন্নয়ন বঞ্চিত। তিনি বলেন, আমরা চাই সবখানে সামাজিক ন্যায়বিচার, সমতা প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু আজ সবখানে বৈষম্য। উন্নয়নের সাথে বৈষম্যের সম্পর্ক সমান্তরাল হয়ে উঠেছে।

তিনি রংপুরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ, কৃষিভিত্তিক কলকারখানা গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে বলেন, রংপুরকে আর কত অবহেলা সহ্য করতে হবে। এই অঞ্চলের মানুষ অবহেলার ফলে উন্নতির স্বাদ পাচ্ছে না। আশ্বাসেই আটকে আছে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর কিন্তু এর কোন বাস্তবায়ন নাই। মেনন প্রশ্ন রাখেন, তিস্তা নিয়ে মানুষ আর কতকাল অপেক্ষা করবে।

পশ্চিমবঙ্গেও অন্য সকল বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করলেও তিস্তার বেলায় নয় কেন? ভারতের নাগরিকত্ব বিল বিষয়ে সকল দল ও মানুষের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিতে পারলে, তিস্তার চুক্তি সই প্রশ্নটি কেন পশ্চিমবঙ্গের ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে। তাই স্পষ্ট কথা, উত্তরাঞ্চলের জীবন রেখা তিস্তা বাঁচাতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই এই চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।

রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু সারা জীবন বৈষম্যের বিরুদ্ধেই লড়েছেন। জন্ম শতবর্ষের ক্ষণ গণনার প্রাক্কালে এই মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, যদি মুজিব বর্ষে সত্যিকারভাবে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানাতে হয়, তবে বৈষম্য অবসানে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে। সেটাই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধার্ঘ। আমি বলবো, বঙ্গবন্ধুকে প্রকৃত সম্মান জানাতে হলে ধনী-গরিবের বৈষম্য কমান, মানুষে-মানুষে বৈষম্য কমান, রংপুর বিভাগের দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে এই অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্পকলকারখানা গড়ে তুলুন, কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য দিন এবং বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তীর ধনুক, বল্লম নিয়ে ক্যানন্টনমেন্ট ঘেরাও করা রংপুরের মানুষ উন্নয়নে আজও পিছিয়ে রয়েছে। বৈষম্য কমিয়ে রংপুর বিভাগের উন্নয়ন করার জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সমাবেশে পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, পাকিস্তান আমলের আন্দোলন এবং আমাদের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিলো আঞ্চলিক বৈষম্য এবং ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমানো অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি উন্নয়নের সাথে সমান্তরালে বাড়ছে বৈষম্য। ধনী-গরিবের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। অঞ্চলভেদেও বৈষম্য বাড়ছে। উত্তরাঞ্চলের মানুষ আজ উন্œয়ন থেকে পিছিয়ে পড়েছে।

ওয়ার্কার্স পার্টির রংপুর জেলার সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে সমাবেেেশ আরও বক্তব্য রাখেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য মাহমুদুল হাসান মানিক, আমিনুল ইসলাম গোলাপ, কেন্দ্রীয় সদস্য মোছাদ্দেক হোসেন লাবু, তপন কুমার রায়, রুহুল আলম, অশোক সরকারসহ রংপুর বিভাগের আট জেলার নেতৃবৃন্দ। বিভাগীয় সমাবেশের পূর্বে গণসংগীত পরিবেশিত হয়। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদসহ ২১ দফা দাবিতে ছয় বিভাগীয় শহরে সমাবেশের অংশ হিসেবে রংপুরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মোঃ মাইনুর রহমান (মিন্টু) রাজশাহী।

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.