রংপুরে পরিবহন ধর্মঘট ও পুলিশি হয়রানির বেড়াজালে বন্দীঃ বিএনপির মহাসমাবেশ (ভিডিও)

রংপুর প্রতিনিধি: উত্তর অঞ্চলে পুলিশি হয়রানি ও মহাসড়কের থ্রি হুইলার চলাচলে বন্ধের দাবিতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে রংপুর মটর মালিক সমিতি ফলে আন্ত ঢাকা জেলা সহ বিভিন্ন অঞ্চলের যাত্রী ও শ্রমিকদের ভোগান্তির শেষ নেই।
বিএনপি’র চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় গণসমাবেশের পর উত্তরের বিভাগীয় নগরী রংপুরে গণ-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল শনিবার (২৯ অক্টোবর)। এই সমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীরা নানা ধরণের প্রস্তুুতি নিয়েছেন। এরই মধ্যে আজ শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতি। সমবেশে ঘিরে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে প্রশাসন।
ধর্মঘট ডাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা একেএম মোজাম্মেল হক। তিনি জানান, মহাসড়কে নিরাপত্তার জন্য পরিবহন মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আইন করেছে। কিন্তু রংপুরের মহাসড়কগুলোতে এখনো নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এ জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
এমন অবস্থায় মহাসড়কে এসব যান চলাচল বন্ধের জন্য আমরা কয়েকটি সংগঠন মিলে সভা করে রংপুরের সকল সড়ক পথে ওই পরিবহন ধর্মঘট এর ডাক দিয়েছি। তিনি বলেন, ট্রাক মালিক সমিতি, কার-মাইক্রোবাস মালিক সমিতি ও সাধারণ পরিবহন মালিকদের  বৈঠকে ধর্মঘটের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীরা বাধার মুখে পড়ছে ফলে পায়ে হেঁটে সাইকেল রিস্কা অটোতে করে বিএনপির মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য রংপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে ইতিমধ্যে গাইবান্ধা লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম পাট গ্রামের অনেক নেতাকর্মী রংপুরে এসে পৌঁছেছে। তবে সকাল থেকেই নগরীর প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই পরিস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষজনের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। অনেকেই এতে ভোগান্তিতে পড়বেন। তবে এবারের গণ-সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়া ফেলে ‘চলো চলো রংপুর চলো’ স্লোগান। পথে পথে এই স্লোগান তুলে দলীয় নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসতে শুরু করায় নতুন মাত্রা পেয়েছে এই সমাবেশ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা গণসমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
এ চাড়াও সমাবেশ থাকবেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ.জেড.এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুসহ কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ।
তাদের দাবি, যদি গাড়ি ঘোড়া বন্ধ থাকে, পথে বাধা দেয়া হয়, মারামারি হয়। তাহলে তো আসতে পারবো না। এজন্য আগেই আসা। সমাবেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি রংপুরেই অবস্থান করবেন। তাদের মতো আরও অনেকেই শুক্রবার আসবেন।
এদিকে সমাবেশের জন্য জিলা স্কুল মাঠ চেয়ে আবেদন করলেও মহানগর পুলিশ অনুমতি দিয়েছে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠের। ইতিমধ্যেই মাঠে মঞ্চ বানানোর কাজ শুরু হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর থেকেই গত তিনদিন ধরে দলীয় নেতাকর্মীরা রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে অবস্থান নিয়ে মঞ্চ তৈরির কাজ তদারকি করছেন। রংপুর নগরীসহ বিভাগের সকল জেলা-উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড-গ্রাম পর্যন্ত পোস্টার- ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। সব চেয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়া ফেলেছে  ‘চলো চলো রংপুর চলো’ স্লোগান।
এরই মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীসহ মানুষজন রংপুরের গণ-সমাবেশে আগাম হাজির হচ্ছে। কেউ কেউ চিড়া-মুড়ি-গুড়সহ সাথে এনেছেন কাঁথা-কম্বলও। বৃহস্পতিবার অনেকেই  নগরীর আবাসিক হোটেল, ছাত্রবাস, স্বজন, পরিজন ছাড়াও নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলার আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান নিচ্ছেন।
শুক্রবারের মধ্যেই সমাবেশের ৪০ ভাগ লোক রংপুরে প্রবেশ করবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তবে পুলিশ নেতাকর্মীদের এখনও গ্রেফতার না করলেও ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানীর আশংকা করছেন দলের নেতারা। দলীয় নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, নেতাকর্মীরা শুকনা খাবার চিড়া-গুড়, পানি ও কাঁথা-বালিশ নিয়ে শুরবার দুপুরের মধ্যে সমাবেশে অবস্থান নেবে। যে কোন পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত।
এই পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নুরেআলম মিনা জানিয়েছেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা যে কোন ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে প্রস্তুত। তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে রংপুরের মিঠাপুকুর ও পীরগাছা থেকে বিএনপি’র সমাবেশে বিপুল সংখ্যক জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবে।
এ জন্য তারা রংপুর কারমাইকেল কলেজের আশেপাশে ও আশরতপুরসহ দর্শনা মোড়ে শিবির নিয়ন্ত্রিত ছাত্রাবাসগুলোতে অবস্থান নিচ্ছে। সেখান থেকে তারা সমাবেশ উপস্থিত থেকে যেন কোন নাশকতা ঘটিয়ে অন্য কারো উপর দায় চাপাতে না পারে সে জন্য পুলিশের পক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পুলিশ পেশাদারির ভিত্তিতে কাজ করে যাবে শেষ পর্যন্ত। কোন উস্কানী বা কোন ধরনের উত্তেজনা যেন কোন সংঘাতে রুপ না নেয় সে জন্য সাদা পোষাকে নগরীতে ও সমাবেশ স্থলের চারপাশে গোয়েন্দা সংস্থাসহ সাদা পেষাকে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
পুলিশ সদস্যরা যেন ধর্য্যরে সাথে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে কোন উস্কানীতে যাতে পা না দেয় সে জন্য প্রায় দেড়হাজারের অধিক পুলিশ সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তাদের কি পরিস্থিতিতে কি করতে হবে সে সম্পর্কে আগাম জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
সরকারের পক্ষে এই সমাবেশ নিয়ে পুলিশের ওপর কোন নির্দেশনা আছি কি না এম প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কমিশনার মিনা জানান, এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষে এ ধরনে সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোন বিশেষ নির্দেশনা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ পায়নি। একটি রাজনৈতিক দল সমাবেশ করতেই পারে। আমরা সেটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে দেখছি।
এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে কিছু সংগঠন একই মাঠে অভিন্ন সমাবেশের অনুমতি চাইলে আমরা তাদের বুঝিয়ে নিভৃত করেছি। আমরা সমাবেশ সকল ধরনের নিরাপত্তা ও নাশকতার কথা বিবেচনা করে নগরীর সকল প্রবশে পথে শুক্রবার সকাল থেকে চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা চাই নিরাপদে সামাবেশ শেষ হোক।
এদিকে বিএনপির সমাবেশের আগে খুলনা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিং এ ধর্মঘটের এসব অভিজ্ঞতা থেকেই এবারও আগাম প্রস্তুতির কথা নিয়েছেন সমাবেশকারীরা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর প্রতিনিধি এস এম রাফাত হোসেন বাঁধন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.