রংপুরে গংগাচড়ায় করোনাকে পুঁজি করে অবৈধ বালু উত্তোলনে প্রশাসনিক কোনো তৎপরতা নেই

রংপুর প্রতিনিধি: রংপুরের গংগাচড়ার বড়বিল ইউনিয়নের চৌধুরীরহাট গোয়ালটারী এলাকায় নদী খননের নামে যত্রতত্র  বালু উত্তোলন চলছে। নিয়ম না মেনে একই স্হান থেকে ৬ টি মিশিন দিয়ে ৫দিন যাবদ বালু উত্তোলনের  কাজে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
রংপুর সদর উপজেলার  গংগাচড়া উপজেলায় আংশিক বড়বিল ইউনিয়ন পরিষদের চৌধুরীরহাট গোয়ালটারীর  ঘাঘট নদীতে ড্রেজিং এর নামে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব চলছে,পাশাপাশি উত্তোলন কৃত বালু নদী থেকে কয়েকশত ফিট দুরে ফেলা হচ্ছে।
আবার তা রাতের অন্ধকারে বিক্রি করা হচ্ছে, এমন অসংখ্য অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।তবে, স্থানীয় প্রভাব আর জীবনের ঝুঁকি থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিযোগকারীরা ।
বালু উত্তোলনের নিয়ম অনুযায়ী-  বালু একটি নির্দিষ্ট গভীরতায় খনন করে উত্তোলন করতে হবে এবং তা কখনোই ১০ ফিটের গভীরে খনন করা যাবে না। কেউ চাইলে বালু দিয়ে নদীর পাড়ে বসবাস রত অসহায় যে কেউ উত্তোলন কৃত বালু ভরাট করে বাড়ি তৈরী করতে পারবে। কিন্তু প্রভাবশালী কতৃপক্ষ তা না করে কাউকে না দিয়ে শুধুমাত্র ব্যাবসার উদ্দেশ্যে একই জায়গা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করে তাদের মন মত স্থানে ফেলছেন।
দেশে যখন করোনা পরিস্থিতিতে কাজের তদারকি করতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তৃপক্ষ ঠিক এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে রাতের অন্ধকারে বালু বিক্রি করা হচ্ছে দেদারছে। এতে করে যেমন “সরকার রাজস্ব” হারাচ্ছে অন্য দিকে আবাদি জমি ও বাড়ি ঘর ভবিষ্যতে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অত্র ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকার  হাজার হাজার লোকজনের বসত ভিটা ভবিষ্যতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার শংকাও তৈরী হচ্ছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রাপ্ত তথ্য মতে,প্রকল্পের নাম রংপুর জেলার মিঠাপুকুর, পীরগাছা ও রংপুর সদর উপজেলার যমুনেশ্বরী ঘাঘট ও করতোয়া নদীর তীর সংরক্ষণ ও নদী পুন:খনন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রংপুর জেলার সদর উপজেলার ঘাঘট নদীর মাধবপুর মাঝিপাড়া ০.০০ কি: হতে কি :মি: ০.৫১০। কিশামত মাধবপুর ০.০০ হতে কি:মি: ১.৭০০ খলেয়া কি:মি ০.০০ হতে ৩.৭৫০ মোট ৫৯৬০.০০ মি: পুন:খনন।
কাজটি “মেসার্স আমিন এন্ড কনস্ট্রাকশন ” নামে খুলনার ১৮ গগনবাবু রোড সেকেন্ড লেইন এর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ প্রাপ্ত ঠিকাদারের নামে খনন কাজ পরিচালনা হচ্ছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে গংগাচড়া উপজেলার প্রভাবশালী একটি বালুখেকো মহল সাব-ঠিকাদার নিয়ে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড এর কতিপয় কর্তাব্যক্তির সাথে যোগসাজশে নদী খননের নামে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করছে। ভুক্তভোগী বড়বিল চৌধুরীরহাট গোয়ালটারীর গ্রামবাসীসহ নদীর আশেপাশের সাধারণ মানুষের মাঝে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে উত্তেজনার।
আইন প্রয়োগকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু উত্তোলনের এ ঘটনায় সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবেদককে জানান,অনেক লোকজন বিধিবহির্ভূত বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রভাব খাটিয়ে চলা এসব বালু খেকোদের হাতে লাঞ্চিত হয়েছে এবং অহরহ ঘটছে মারামারির ঘটনা ।এলাকার আবুল কালাম, ফাতেহা খাতুন, মিনতি রানী সহ অনেকে ভয়ে বালুখেকো মহলটি’র বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস না পেলেও মৌখিক ভাবে এ প্রতিবেদককে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চান।
এলাকাবাসীর দাবী, নাব্যতা দূরীকরণে যদি নদী খনন বা ড্রেজিং, বাঁধ নির্মাণের বাজেট এসে থাকে তা ওয়ার্ক অর্ডার মেনে সেই মোতাবেক কাজ করা হউক। স্কেচ দেখে কোথায় কতটুকু খনন বা ড্রেজিং করতে হবে তা সঠিকভাবে পালন করা হউক।
তারা দাবি জানিয়ে বলেন, নিয়মানুযায়ী নদী খননের সময় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, স্হানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবগত করে তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত বা প্রয়োজনে তাদের সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে কিন্তু তা না করে ‘করোনা’ ভাইরাস’র মত একটি মহামারীর সময় যখন সারাদেশ টালমাটাল, অচল, সরকারী-বেসরকারি অফিস, আদালত,দোকানপাট ,গনজমায়েত,পাশাপাশি অবস্থান বন্ধ তখন কি ভাবে নদী খননের নামে বালু উত্তোলন করে তা কারোরই বোধগম্য নয়। বিষয়টি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে দেখার আহবান জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে জানতে গংগাচড়ার বড়বিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফজালুল হক রাজু’র সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি নিজে গোয়ালটারীর ২ কিলোমিটারের কাজ সাব কন্টাক্টে নিয়েছেন এবং নিয়ম মেনে খনন করছেন। পাড় থেকে বালু দূরে রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন ভবিষ্যতে বালু যাতে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে পুনরায় নদী ভরাট না হয় সে জন্যই দুরে রাখা হচ্ছে। বালু বিক্রির ব্যাপারে তিনি জানেন না বলে জানান।
বালু উত্তোলন,বিক্রি ও দূরে রাখার ব্যাপারে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ গোলাম জাকারিয়া ও কাজের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা জাকির হোসেন এর সাথে কথা হলে তারা উভয়ে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে তারা মাঠে যেতে পারছেন না। যদি এধরনের অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে আমরা আইনত ব্যবস্থা নিবো। বালু বিক্রি করার কোন নিয়ম নেই উত্তোলন কৃত বালু ডিসি মহোদয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অধিনে খোলা ডাকের মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করা হবে। এতে করে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। ঐ ব্যাপারে জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর প্রতিনিধি এস এম রাফাত হোসেন বাঁধন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.