রংপুরে আবারো তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপনে সয়লাব

এসিডি প্রতিবেদক: রংপুর মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে সর্বত্রই আবারো তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপন আর পুরস্কার-প্রনোদনায় সয়লাব হয়ে গেছে। অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী এসব বিজ্ঞাপন ও পুরস্কার-প্রনোদনা নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এয়াড়া তামাক আইন লঙ্ঘন করে মহানগরীর পাবলিক প্লেসগুলোতেও দেদারছে চলছে ধূমপান।

ফলে তামাকের ধোঁয়ায় ‘বাহের দেশ’ হিসেবে পরিচিত রংপুর সিটিতে প্রতিনিয়ত ঘটছে স্বাস্থ্যহানি। তাই নগরবাসী রংপুরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

রংপুর মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তামাকপণ্যের সকল বিজ্ঞাপন প্রচারণা আইনগত নিষিদ্ধ হলেও মহানগরীর সর্বত্রই অবাধে চলছে বিজ্ঞাপন পদর্শন।

ভোক্তা ও বিক্রেতাদের নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের তামাক ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে উপহার। গেল বছর রাজশাহীর বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডি’র রংপুর অফিসের একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে- রংপুর মহানগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের ৪ হাজার ৮৪৫ টি দোকানে বিভিন্ন ধরনের তামাকপণ্য বিক্রয় করা হয়।

এসব দোকানের অধিকাংশগুলোতেই লঙ্ঘিত হচ্ছে এ আইন। প্রায় অর্ধেক দোকানে বিভিন্ন সিগারেট কোম্পানি ডামি সিগারেটের প্যাকেটে ডেকোরেশন করে দেয়া হয়েছে। দোকানে দোকানে শোভা পাচ্ছে- সিগারেট কোম্পানীগুলোর হ্যান্ডবিল, স্টিকার ও লিফলেট। দোকানগুলোর দোকানীকে তারা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের উপহার। এর মধ্যে রয়েছে- সুদর্শনীয় শো-কেস, দোকানির ছবিসহ পান-সিগারেটের বাক্স, গেঞ্জি, ছাতা, ঘড়ি, মগ ইত্যাদি। এছাড়া সিগারেট-বিড়ি কোম্পানীগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কোম্পানির লোগো সম্বলিত শার্ট-প্যান্ট পড়েও চালিয়ে যাচ্ছে প্রচারণা।

অথচ মপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ সংশোধন) আইন, ২০০৫ (২০১৩) এর ধারায় বলা আছে- বিক্রয় স্থলে তামাকপণ্যের প্যাকেট বা মোড়ক সাদৃশ্য কোন দ্রব্য, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড বা অন্য কোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যাবে না। এছাড়া তামাক ব্যবহারে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কোনো উপহার, দান, পুরস্কার, বৃত্তি প্রদান আইনত দন্ডনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আইনের এই ধারা অমান্যকারীকে ৩ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকা জরিমান বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, মহানগরীর ৪ হাজার ৮৪৫টির অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মহানগরীর বিভিন্ন পাবলিক প্লেস যেমনÑ হাসপাতাল চত্ত্বর, বাস টার্মিনাল, যাত্রী ছাউনি, গণপরিবহন, সরকারি বিভিন্ন অফিস, আদালত চত্ত্বর, আবাসিক হোটেল, রেস্টুরেন্ট, খাবার হোটেল ইত্যাদিতে যত্রতত্র করা হচ্ছে ধূমপান।

রংপুরের তামাক নিয়ন্ত্রণ কোয়ালিশনের ফোকাল পার্সন সুশান্ত ভৌমিক বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য মহানগরীর অভ্যন্তরে তামাকপণ্যের অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে হবে। পাশপাশি নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

মহানগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান মিজু বলেন, ‘রংপুর অঞ্চলে তামাকের চাষ সবচেয়ে বেশি হয়। কাজেই এই এলাকা তামাকমুক্ত করা খুব চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। তারপরও সকলের সাথে পরামর্শ করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবানে কাজ করব।’
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বাস্তবায়নের বিষয়ে রংপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আসিব আহসান বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কোথাও আইনটি লঙ্ঘিত হলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী- ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালন করে জেল-জরিমান করা হবে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৩ অক্টোবর তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রে অবৈধ বিজ্ঞাপন সরবরাহ না করা এবং নগরীতে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন অপসারণে তামাক কোম্পানীগুলোর (ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনাল এবং আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পাননি) রংপুরের পরিবেশক/সত্ত্বাধিকারী বরারর নোটিশ জারি করেছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি)। কিন্তু তারপরও বহুজাতিক এই তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ বিজ্ঞাপন-প্রণোদনা বন্ধ হয়নি।

বার্তা প্রেরক: আমজাদ হোসেন শিমুল, মিডিয়া ম্যানেজার, এ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্টএসিডি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.