যে দুটি ইস্যুতে হোঁচট খেতে পারে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংলাপ

 

বিটিসি নিউজ ডেস্ক:আজ মঙ্গলবার সংলাপের জন্য আগামী ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় ঐক্যফ্রন্টকে গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে বসবেন।

আজ  সকালে বেইলি রোডের বাসায় ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংলাপের বিষয়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এত দ্রুত সরকার যে সংলাপের প্রস্তাবে সায় দেবে তা তারা ভাবেননি।

মন্ত্রীসভার বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে সংলাপে বসার ঘোষণা আসার পরপরই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা এক বৈঠক করেন। বৈঠকের পর জোটের দুই শীর্ষ নেতা বলেন, সংলাপে বসার সরকারী সিদ্ধান্তকে তারা স্বাগত জানাচ্ছেন।

জোটের প্রধান শরিক বিএনপির নেতা মওদুদ আহমেদ বলেন, সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের একটা সুযোগ অন্তত তৈরি হয়েছে।

একই ধরনের কথা বলেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না। “সরকার এত দ্রুত আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দেবে বুঝিনি। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”

মাত্র গত রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে একটি চিঠিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তাদের সাত-দফা দাবি নিয়ে সরকারকে আলোচনা বসার প্রস্তাব করা হয়।

বাংলাদেশে গত প্রায় তিন দশক ধরে মীমাংসা আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে যে সব চেষ্টা হয়েছে তাতে সাফল্যের নজির নেই বললেই চলে।

তত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘ মহাসচিব মধ্যস্থতার জন্য তার একজন দূত পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তা সফল হয়নি। ২০০৪ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মহাসচিব পর্যায়ের দীর্ঘ সংলাপেও কোনো লাভ হয়নি, যার জের ধরে ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত একটি সরকার ক্ষমতা নিয়ে নেয়। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি যাতে অংশ নেয়, তা নিশ্চিত করতে বিদেশীদের মধ্যস্থতায় মীমাংসার একাধিক চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছিল।

এই প্রেক্ষাপটে এবার কতটা আশাবাদী হতে পারেন তারা?

মাহমুদুর রহমান মান্না স্বীকার করে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচন-কালীন নিরপেক্ষ সরকার – এই দুটো ইস্যুতে সমস্যা বাঁধতে পারে। “যে কোনো মীমাংসা আলোচনায় গিভ অ্যান্ড টেকের বিষয় থাকে। আমরা ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করবো, আশা করবো সরকারও যেন ইতিবাচক মন নিয়ে আসেন।”

বিএনপি নেতা মওদুদ আহমেদ বলেন, “সমস্যা গভীর…আমাদেরকে অন্তত চেষ্টা করতে হবে।”

রোববার সংলাপে বসার সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে খুবই ইতিবাচক শুনিয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দেশবাসীর জন্য একটি ‘প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ’ দেব, যেটা সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তির সুবাতাস বয়ে আনবে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী বলছেন, “বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে যে মাত্রার বৈরিতা এখন তৈরি হয়েছে, তাতে একটি সংলাপে বসে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা বিশ্বাস করা কঠিন।”

“খেয়াল করবেন – এমন দিনে সরকার সরকার সংলাপে বসতে রাজী হলো, যেদিন খালেদা জিয়ার সাজার রায় হলো। বিএনপি কি ভাবতে পারবে যে সরকারের মধ্যে আন্তরিকতা রয়েছে? পারবে না।”

খালেদা জিয়ার মুক্তি বিরোধী জোটের সাত-দফা দাবির অন্যতম। জোটের প্রথম দুটো বৈঠকেই বিএনপি নেতারা তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিই সবচেয়ে সরব ছিলেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সরকার সহসা রাজী হবে দিলারা চৌধুরী তা বিশ্বাস করেন না। “সেটা হলে, বিএনপির ওপর তার প্রভাব হবে মারাত্মক, জোটে ভাঙনের হুমকিও উড়িয়ে দেওয়া যায়না।” (সূত্র: বিবিসি বাংলা)

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.