যেভাবে ‘একচ্ছত্র’ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছেন এরদোগান

(যেভাবে ‘একচ্ছত্র’ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছেন এরদোগান–ছবি: সংগৃহীত)
বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আধুনিক তুরস্কের রাজনীতিতে রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান নতুন অধ্যায় সূচনা করেছেন। ২০১৬ সালে অভ্যুত্থান চেষ্টা চতুরতার সঙ্গে ব্যর্থ করে দেওয়ার পর নতুন তুরস্ক গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে গত ৫ বছরে তুরস্কে একচ্ছত্র ক্ষমতাধর হয়ে উঠেন এরদোগান।
২০১৬ সালের ১৫ জুলাই অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দেওয়ার দাবি করে ওই রাতেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছিলেন, ক্যু চেষ্টাকে তিনি আশীর্বাদ হিসেবে নিয়েছেন। এরপর গত ৫ টি বছরে তিনি তার কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার অধীনে ’নতুন তুরস্ক’ গড়ে তোলতে সক্ষম হয়েছেন।  
তুরস্কে বর্তমানে এরদোগানের বিরুদ্ধে শক্তিশালী কোনো বিরোধী পক্ষ নেই। গত ৫ বছরে বড় ধরণের বিক্ষোভ দেখা যায়নি দেশটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক যেসব ছোটখাট বিক্ষোভ দানা বেধেছিল সেগুলো দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছে এরদোগান প্রশাসন।
বিরোধীদের দমনে এরদোগান শতভাগ সফল। গত ১৪ জুলাই সরকারি তথ্যমতে, ওই অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৮৯০ জনকে বন্দি রাখা হয়েছে দেশটির কারাগারে, তাদের মধ্যে ৩০০০ ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর ৪৪ হাজার জওয়ানকে সেনাবাহিনী থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তুরস্কের হিউম্যান রাইটস অ্যাসোসিয়েশন ও হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন দাবি করেছে, ব্যর্থ ক্যুর পর ১ লাখ ১৪ হাজার সরকারি চাকুরেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরে চাকরি পাননি। ২০১৬-১৮ সাল নাগাদ দেশটিতে জরুরি অবস্থা চলাকালে ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগও দেওয়া হয়নি।
গত ৫ বছরে তুরস্কের সংবিধান কাঁটছেঁড়া করা হয়েছে বহুবার। সেখানে প্রেসিডেন্টকে একক কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে।  বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। সংবিধান পরিবর্তন করে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদটিকে নিছক আলঙ্করিক করা হয়েছে। সব নির্বাহী কর্তৃত্ব প্রেসিডেন্টের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।
২০২১ সালের ১৫ জুলাইয়ের ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানে সাড়ে ৮ হাজার সেনা অংশ নেন। ৩৫ টি সেনা উড়োজাহাজ, ২৪৬ ট্যাঙ্কও হামলায় অংশ নেয়। অভ্যুত্থান ব্যর্থ করার দাবি করেই এ ঘটনার জন্য এরদোগান গুলেনের হিজমত আন্দোলন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
একই সঙ্গে তিনি তুর্কি সমাজ, গণমাধ্যম, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থায় গুলেনের শক্তিশালী উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।  রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার অভিযোগ ওঠার পর ১৯৯৯ সালে গুলেন যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান।  বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ফোকোনো পাহাড়ি এলাকার ছোট একটি শহরে বাস করেন।
৭৫ বছর বয়সী এই গুলেনই একসময় এরদোগানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। সমালোচকরা এও বলে থাকেন যে, রাষ্ট্রক্ষমতা পাকাপোক্ত করে বন্ধু গুলেনকে দিয়ে পরিকল্পনামাফিক ওই ক্যু করান এরদোগানই। পরে গুলেনকে নির্বাসনে পাঠান। এরপর থেকে তুরস্কে এরদোগান বিরোধী বলয় ভেঙে যায়। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়ে বেশি মনোযোগী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.