বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের বিরুদ্ধে পূর্ব কোনো ঘোষণা ছাড়াই একতরফা যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। বিশ্লেষকেরা হিসাব করে দেখেছেন, গত ১৩ জুন শুরু করা এই যুদ্ধে ইসরায়েলের ব্যয় দৈনিক প্রায় ২০০ মিলিয়ন বা ২০ কোটি ডলার। আর এর বেশির ভাগ অংশই ব্যয় হচ্ছে মূলত ইরানি হামলা ঠেকাতে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাথমিক এক হিসাবে দ্য ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ইরানকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের যুদ্ধ দেশটির দৈনিক আনুমানিক ২০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে। এই বিপুল অঙ্ক, এই সংঘাত কত দিন চলবে, তার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে। এসব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিদিনই ১০ লাখ ডলার থেকে শুরু করে কয়েক কোটি কোটি ডলার পর্যন্ত খরচ হচ্ছে।
ইসরায়েলি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘ডেভিডস স্লিং’ ও ‘অ্যারো—৩’ এর মতো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতিটি আগত ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে খরচ হচ্ছে ৭ লাখ থেকে ৪০ লাখ ডলার পর্যন্ত। এখন পর্যন্ত ইরানের ছোড়া ৪ শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে বারবার ব্যবহার করতে হচ্ছে এগুলোকে।
এ ছাড়া, ইরানে ইসরায়েলের হামলার খরচও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ইরানের ১ মাইল দূরত্ব পাড়ি দিয়ে হামলা চালাতে ইসরায়েলি এফ-৩৫ জেট প্রতি ঘণ্টায় খরচ করছে প্রায় ১০ হাজার ডলার। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে জেডিডিএএম ও এমকেএইটি ফোর-এর মতো নির্ভুল বোমার দাম।
সব মিলিয়ে, ইসরায়েলি অ্যারন ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক পলিসি ধারণা দিয়েছে, এ যুদ্ধ এক মাস স্থায়ী হলে ইসরায়েলের মোট ব্যয় দাঁড়াতে পারে প্রায় ১২০০ কোটি ডলার। থিংক ট্যাংকটির অর্থনীতিবিদ জিভ একস্টাইন বলেন, এই যুদ্ধ গাজা বা হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল। সবচেয়ে বড় খরচটা হচ্ছে গোলাবারুদ—আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক, উভয় ক্ষেত্রেই।
এই আর্থিক চাপের কারণে স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধের পক্ষে জনমত বাড়ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনো যুদ্ধ থামানোর ইঙ্গিত দেননি। তিনি ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে চূড়ান্তভাবে অকার্যকর না করা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে।
এদিকে, ইসরায়েলি পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রয়েছে এমনকি কিছু ক্ষেত্রে সূচকও বেড়েছে—তবে বাস্তবে ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। প্রকৌশলীরা হিসাব করে বলছেন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পুনর্গঠনে খরচ হবে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। এখন পর্যন্ত কয়েক শ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং পাঁচ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
দেশটির সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অবকাঠামো খাতেও কাজ স্থগিত রয়েছে।
ইসরায়েলি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর কারনিত ফ্লাগ ওয়ালস্ট্রিট জার্নালকে বলেন, যুদ্ধ কত দিন স্থায়ী হবে, তা অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, যদি এক সপ্তাহ চলে, সেটা এক কথা। কিন্তু যদি দুই সপ্তাহ বা এক মাস চলে, তাহলে পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে যাবে। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.