‘যতদিন বেঁচে আছি নিজ সংগঠনের ভালোর জন্য কাজ করে যাবো’ : ডা: তাবিবুর রহমান

বিটিসি নিউজ ডেস্ক:  রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী পহেলা মার্চ। পাঁচ বছরেরও বেশী সময় পরে আবার হতে যাচ্ছে কাঙ্খিত সে সম্মেলন। দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে নগরীর থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। আগের কমিটি বহাল রয়েছে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বহু প্রত্যাশিত ত্রিবার্ষিক সম্মেলনকে ঘিরে নতুন নেতৃত্বের আশায় প্রহর গুনছেন মহানগর আওয়ামী লীগের হাজারও নেতাকর্মী।

তৃণমুলের প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মনে করছেন এবার সম্মেলনে সৎ, যোগ্য, ক্লিন ইমেজের নেতা মহানগর আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন। যে নেতার হাত ধরে তৃণমুল কর্মীরা সংগঠনকে সক্রিয় করে তুলতে পারবে। এমন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক চান তারা, যারা পদ পাওয়ার পর নিজেদের ব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে কর্মী বিচ্ছিন্ন থাকবে না।

তেমনি আওয়ামী লীগের সম্মেলন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তাবিবুর রহমান। সম্মেলনকে সামনে রেখে বেশ ভালো ভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। সম্মেলন ও বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কথা হয় ‘বিটিসি নিউজ’র সাথে।

সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বিটিসি নিউজ এর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তানভীর তুষার।

বিটিসি নিউজ: বর্তমান রাজশাহীতে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কি?

ডা: তাবিবুর রহমান: অনেক আগে থেকেই আমি রাজশাহী শহরের রাজনীতির সাথে জড়িত। ১৯৮০ সাল থেকেই ছাত্র রাজনীতি করে আসছি। রাজশাহী কলেজের ছাত্র সংসদে নির্বাচন করেছি সেই সময়ে। আমি যে সংগঠনের সাথে ছাত্র জীবন থেকেই জড়িত তার ব্যাপারে খারাপ বললে সেই দায় আমাকেও নিতে হবে। আবার ভালোও বলতে পারছি না। কেননা মাঝে মাঝে সংবাদপত্রে কিছু হাইব্রিড বা সুবিধাবাদীরা বিভিন্নভাবে আমাদেরই আশ্রয় প্রশয়ে অবৈধভাবে ফুলে ফেঁপে উঠছে। তাদের জন্য আমাদের সংগঠনের নাম খারাপ হচ্ছে। আমরা রাজনীতি করি সকল মানুষকে ভালো রাখার জন্য। সকলের সাথে ভালো ভাবে বেঁচে থাকার জন্য। ভালো থাকার জন্য বৈধভাবে যেটুকু দরকার সেই সুযোগ সুবিধা নেবো। তাই বলে এই নয় যে আমার লকারে অবৈধ ভাবে উপার্জিত কোটি কোটি টাকা থাকবে। এইসব সুবিধাবাদীদের দায় সংগঠন নেবে না। এই সকল কিছু হাইব্রিড ছাড়া সংগঠন তার সঠিক পথেই আছে। যেহেতু এই সকল হাইব্রিড এখনও আছে সংগঠনে তাই আমরা এর দায় আপাতত এড়াতে পারি না।

বিটিসি নিউজ: আপনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে আপনার পরিকল্পনা কি?

ডা: তাবিবুর রহমান: দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে না যদি দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাহলে বলতে পারি, আমরা যারা আছি নেত্রীর পরীক্ষিত, দলের প্রয়োজনে তাদের সামনে আনতে হবে। আমরা যেমন সেই খারাপ সময়েও ছিলাম আজও আছি এবং এখনকার মতো আগামীতেও মাথা উঁচু করে কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ। সুতরাং এখন যদি দলের প্রয়োজনে আমাকে কোন দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে সেই দায়িত্ব পালন করবো। বঙ্গবন্ধু যেমন ভাবে দেশকে নিয়ে চিন্তা করেছেন তার কন্যাও তেমনি ভাবে চিন্তা করছে। আমাদেরও উচিত সেই ভাবে চিন্তা করে দেশ এবং দলকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া।

বিটিসি নিউজ: যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত হোন আগামীতে কিভাবে কার্যক্রম শুরু করবেন?

ডা: তাবিবুর রহমান: আমি আশাবাদী যে কেন্দ্র থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে নতুন কিছু আসবে সামনে। আমাকেও তেমনিভাবে যদি যোগ্য মনে করে সামনের সম্মেলনে পদ দেওয়া হয় তাহলে আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার।

বিটিসি নিউজ: আগামী দিনে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের জন্য আপনার কি নির্দেশনা থাকবে?

ডা: তাবিবুর রহমান: অতীতে যারা কাজ করেছে তাদের জন্য আমরা সুযোগ করে দেবো। আপনি পদ ব্যবহার করে যদি কোন প্রকার অন্যায় করেন তাহলে তার দায় কিন্তু দল নেবে না। এইটা ঠিকও না। এখন অনেক সময় দেখা যাচ্ছে অপরাধের কারনে দল থেকে অনেকেই জেলে বন্দী অবস্থায় আছে। কেউ দলের জন্য কিছু করেছে বলেই যে তার সুযোগে অন্যায় করবে এমনটা কিন্তু এখন হচ্ছে না। অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা, নারী কেলেংকারী, মাদক ব্যবসাসহ সকল প্রকার অসামাজিক কাজের জন্য দল অনেক সদস্যদেরকে বহিষ্কার করছে। ভালো কাজ করে এগিয়ে আসলে আমার মনে হয় দল থেকে তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তবে তাই বলে এই নয় যে কেউ দলে এসে ক্ষমতার অপব্যবহার করবে। আজ দেশে সমালোচক গোষ্ঠী নামে এক প্রকার গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে যারা সব সময় সরকারের দোষ ত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত। এখন সরকার দলের অনেক গণমাধ্যম আছে যারা এখন সরকারকে নিয়ে সমালোচনা করছে। আজ দেখুন গোয়েন্দা বিভাগের সহায়তায় ২৬ কোটি টাকা সহ অপরাধীকে কারাগারে আটক করা হয়েছে। এই পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের পরিবেশ আর দশ পনেরো বছর আগেকার পরিবেশ কখনও এক নয়। এখনকার ছাত্রলীগের রাজনীতি অনেক সহায়ক। আরও যে সকল দিক দিয়ে দলের নাম খারাপ হচ্ছে আশা রাখবো খুব দ্রুতই সে সকল কিছু ঠিক হবে। দায়িত্ব পাই আর না পাই জীবনে যতোদিন বেচে আছি নিজ সংগঠনের ভালোর জন্য কাজ করে যাবো।

বিটিসি নিউজ: দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি কিছু বলার আছে?

ডা: তাবিবুর রহমান: তাদের ব্যাপারে বলা মানে নিজের ব্যাপারে বলা। আমাদের একসময়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো দেশ একসময় বঙ্গবন্ধুর আর্দশের স্বপ্নের দেশে পরিনত হবে। আজ তার সুযোগ্য কন্যা তারই আর্দশে দেশ পরিচালনা করছে। আমি কতটা ভূমিকা রাখতে পেরেছি তা জানি না তবে আমাদের মতো ত্যাগী পুরাতন সদস্য আছে যারা দলের ভালোর জন্য সর্বদা নিবেদিত প্রাণ। আজ অনেক নিবেদিত প্রাণ কিছু কিছু নেতা আছেন যারা বঞ্চিত হয় তবুও বলবো আজ আমরা শান্তিতে রাতে ঘুমাতে পারি। একটা সময় ছিলো যখন আমরা ঘুমাতেও পারতাম না। এখন সমাজে আমার একটা জায়গা আছে। আজ যদি শেখ হাসিনা বা স্বাধীনতার পক্ষের সংগঠন ক্ষমতায় না থাকতো তাহলে কিন্তু আমরা এভাবে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম না। আজ থেকে দশ বা পনেরো বছর আগে যেমন আমরা ভয়ে ভয়ে থাকতাম সব সময়। রাস্তায় সব সময় রাজনৈতিকভাবে অপমানিত হতাম তার থেকে এখনকার অবস্থা অনেক ভালো। আমি সেই আশির দশকে যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি তখন আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগের নাম বললে মার খাওয়া লাগতো। তবুও আমরা করেছি। সুতরাং আমাদের এই মানসিক শান্তির জায়গা আছে। আজ শেখ হাসিনা আমাদের সেই মানসিক শান্তির জায়গাটা তৈরি করে দিয়েছেন। একসময় দেশে আইনের বাস্তবায়ন ছিলো না কিন্তু এখন আস্তে আস্তে তা অনেক বেড়েছে। এখন আমার কর ফাঁকি দেই তাহলে ধরা পড়ার ভয় আছে। তাই এখন কিন্তু আমি চাইলেও ফাঁকি দিতে পারবো না। এখন সবাই একটি জবাবদিহিতার মধ্যে আছে। এখন দেশের যেমন পরিবর্তন হচ্ছে তেমন ভাবে যদি চলতেই থাকে এক সময় বাংলাদেশ বিশ্বের একটি মডেলে পরিনত হবে। প্রথমত উচিত দল থেকে কিছু অতি উৎসাহী লোকদের ছাঁটাই করা। যারা দলের নাম খারাপ করে অপকর্ম করছে । কেন্দ্র থেকে যেহেতু কমিটি দেয়া হচ্ছে তাই এবার নিবেদিত প্রাণ সদস্যরাই দায়িত্ব পাবে বলে আশা করছি।

বিটিসি নিউজ: আপনাকে এতক্ষণ সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ডা: তাবিবুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।

সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন বিটিসি নিউজ এর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তানভীর তুষার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.