ম্যাচের বিরতিতে ছেলেকে দুগ্ধপান করান এই নারী ক্রিকেটার

বিটিসি স্পোর্টস ডেস্ক: মাতৃত্ব ও ক্রিকেট ক্যারিয়ার একসঙ্গে সামলেছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক নারী ক্রিকেটার সারা এলিয়ট। এ নিয়ে সম্প্রতি খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। সারা জানান, একটা সময় খেলার মাঝে বিশ্রাম নেওয়ার সময় ছিল না তার। এমনকি সতীর্থরা যখন বিশ্রাম নিতেন, তখনও ব্যস্ত থাকতে হত তাকে। কখনো কখনো প্যাড খোলার ফুরসতটুকুও পেতেন না। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
৪১ বছর বয়সী সারা যে সময়ের কথা বলেছেন, সে সময় অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট দলের ব্যাটারকে মাঠে লড়াই করতে হত প্রতিপক্ষের বোলারদের বিপক্ষে, আর মাঠের বাইরে সময়ের সঙ্গে। ঠিক লড়াই নয়। জীবনের সঙ্গে খেলার ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হত তাকে। ক্রিকেটার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সঙ্গেই সমান তালে পালন করে গিয়েছেন মাতৃত্বের দায়িত্ব।
সারা তার সন্তানের জন্য ক্রিকেটকে অবহেলা করেননি, ঠিক একইভাবে ক্রিকেটের জন্য সন্তানকেও অবহেলা করেননি। জানা যায়, তিনি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার প্রথম দিকেই ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে চুক্তির প্রস্তাব পেয়েছিলেন। প্রথমে সন্তানের কথা ভেবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মত বদল করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চুক্তির প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছিলেন।
পরে নির্বাচক জুলি স্যাভেজকে ফোন করে জানান, চুক্তিতে সই করবেন। যদিও সে জন্য তার মাতৃত্বকালীন সুবিধা পেতে সমস্যা হয়নি। পুত্র সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে শতরানও করেছিলেন অজি অলরাউন্ডার। সেই শতরানের দিনও সারার সঙ্গে ছিল কয়েক মাসের ছেলে স্যাম। এমনকি খেলার ফাঁকে ফাঁকে যখনই সুযোগ পেতেন, তখনই পুত্রকে দুগ্ধপান করিয়েছিলেন।
ছেলে স্যামের ২০১২ সালের অক্টোবরে জন্ম হয়। সন্তানের যখন নয় মাস বয়স, তখন নারীদের অ্যাশেজ সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। ২০১১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে ৮১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন সারা। তাই তার ওপর অনেকটা ভরসা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। সেই অভিজ্ঞতা ক্রিকেটপ্রেমীদের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ভাগ করে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অলরাউন্ডার।
সংবাদ মাধ্যমে সারা বলেন, ‘অ্যাশেজের দলে থাকার জন্য ঘরোয়া মরসুমের অন্তত অর্ধেক খেলতে হবে জানতাম। তাই স্যামের জন্মের দু’সপ্তাহ পর থেকেই জিমে যেতে শুরু করেছিলাম। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সে সময় আমাকে ছয় সপ্তাহ প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলার অনুমতি দেয়নি। হয়তো আরও তাড়াতাড়ি মাঠে ফিরতে পারতাম। তবে বিশ্রাম পাওয়ায় খুশি হয়েছিলাম। মা হওয়ার পর প্রথম ক্লাবের হয়ে খেলতে নেমেই বুঝেছিলাম, ক্রিকেট কত কঠিন খেলা।’
একই সময় ভিক্টোরিয়ায় ক্লাব ক্রিকেট খেলতেন সারা। তা নিয়ে বলেছেন, ‘একটা ম্যাচ খেলার সময় সারা খুব কাঁদছিল। আমি ফিল্ডিং করছিলাম। তখন প্রতিপক্ষ দলের এক জন আমার হয়ে ফিল্ডিং করতে নেমেছিল। আমি গিয়ে ছেলেকে দুধ খাইয়েছিলাম।’
পরে ক্লাব ক্রিকেটে ভাল পারফরম্যান্সের সুবাদে জাতীয় দলে ফিরে এসেছিলেন সারা। সুযোগ পেয়েছিলেন অ্যাশেজ সিরিজ়ের দলে। সন্তানের যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য সব ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। সারা বলেছেন, ‘‘দলের বাসে যাতায়াত করতে সামের অসুবিধা হচ্ছিল। তাই ওর জন্য একটা গাড়ি ভাড়া করেছিলাম। সেই সিদ্ধান্তটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আগে কখনও দলকে ছাড়া আলাদা গাড়িতে যাতায়াত করিনি। সেটাও একটা নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছিল।’
২০১৭ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন সারা। তিনি জাতীয় দলের হয়ে ৩টি টেস্ট, ২২টি ওয়ানডে ও ১৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। যেখানে সব ফরম্যাট মিলিয়ে একটি সেঞ্চুরি ও ৫টি ফিফটি রয়েছে তার। যেখানে ৭’শর মতো রান করেছেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.