মোহনপুরে কলেজছাত্রীকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক!

নিজস্ব প্রতিবেদক:  রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় এক কলেজ ছাত্রীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মোহনপুর উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে মাহাবুর রহমান এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোহনপুর উপজেলার হরিহরপুর গ্রামের বদের উদ্দীনের মেয়ে জোরিনা খাতুন (২০) গত বুধবার (৪ঠা সেপ্টেম্বর) সকাল নয়টার সময় নওহাটা মহিলা কলেজে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়। সে ওই কলেজে ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষে পড়ত। কিন্তু  রাজশাহী সিটি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র একই উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে মাহাবুর রহমান (২৩) তাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। এরপর সে বিয়ের দাবিতে অনশন করে দুপুরের দিকে আত্মহত্যা করেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে নিহতের পরিবার এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন।

নিহতের ভাই রাজশাহী কলেজের ভূগোল বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মোশারফ হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘কলেজ থেকে বেরিয়ে সোনাদিঘীর মোড়ে বই কিনছিলাম। হঠাৎ অপরিচিত এক নাম্বার থেকে কল  আসে। আমাকে বলা হয় তোমার বোন বিষ খেয়েছে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসো। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে যেতেই  আমার বোনের মৃতদেহ দেখি। ততক্ষণে মাহাবুর রহমান সটকে পড়লেও তার চাচা মমিনুল আমাকে শিখিয়ে দেয়, ডাক্তারকে বল বিষ খেয়েছে। এসময় তারা পোস্টমর্টেম না করার জন্য মোশারফকে অনুরোধ করতে থাকে ’

জোরিনার বাবা বদের উদ্দীন বিটিসি নিউজকে জানান, তার মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে মাহাবুর ও তার পরিবার পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। পরিকল্পিতভাবে জোরিনাকে তাদের ঘরে আটকে রেখে মুখে গামছা বেধে নির্মমভাবে রড ও বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। হত্যার পর আলামত লুকানোর জন্য তারা মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে বলেও জানান তিনি।

তার বোন শিউলী খাতুন বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘হাতুড় দিয়ে পিটিয়েছে। আমার বেনের শরীরে কালো কালো দাগ পড়েছে। বুকে গর্ত হয়েছে। পিঠে, ঘাড়ের নিচে গর্ত হয়ে গেছে। মাথায় ফুলে ছিল।’

এদিকে স্থানীয় এক শিক্ষকের প্ররোচনায় ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে এলাকার রটানোর অভিযোগ উঠেছে। তিনি পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে আইনের কাজে প্রতিবন্ধকতা করতে চেয়েছেন বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।

হরিহরপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ঘটনার পরপরই হরিহরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাঈদ হোসেন থানায় গিয়ে বিষপানে মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশকে জানায়। এতে এলাকায় প্রেমঘটিত আত্মহত্যা বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি বিয়ের দাবিতে জোরিনা অনশন করে আত্মহত্যা করেছে বলে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয়।

পুলিশকে ভুল তথ্য দিয়ে মিথ্যা খবর রটানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাইদুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে এমন ঘটনার প্রতিবাদ এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ শুক্রবার বিকালে এক মানববন্ধন আহবান করা হয়। তবে মোহনপুর থানার ওসি শুক্রবার দুপুরে এলাকায় গিয়ে তাদেরকে মানববন্ধন স্থগিত করার অনুরোধ এবং ১৫ দিনের মধ্যে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এদিকে মাহাবুর রহমান ও তার বাবা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।

জানতে চাইলে মোহনপুর থানার ওসি মোস্তাক আহমেদ বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আত্মহত্যার প্ররোচনায় ৯ এর ক ধারায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ৫ জনের নামে থানায় মামলা হয়েছে।  ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিরা পলাতক রয়েছে। তাদরকেও গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি আমানুল্লাহ আমান। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.